শান্ত-নাসিরের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

ঝিমিয়ে থাকা নাসির হোসেনের ব্যাট ঝলসে উঠল লিগের শেষ ম্যাচে। আলো ছড়ানো লিগের শেষটায়ও দারুণ দ্যুতিময় নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট। দুজনে ব্যাটিং তাণ্ডব আর মাশরাফি বিন মুর্তজার ছোট্ট ঝড়ে আবাহনী গড়ল রানের পাহাড়। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ চেষ্টা করেছে। কিন্তু যেতে পারেনি চূড়ার ধারেকাছে। ম্যাচ জিতে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, ব্যান্ড দলের বাদ্যে শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতল আবাহনী।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2018, 11:00 AM
Updated : 5 April 2018, 12:00 PM

হারলেও সুযোগ ছিল, তবে অন্যের দিকে কেন তাকিয়ে থাকা! শেষ ম্যাচে রূপগঞ্জকে ৯৪ রানে হারিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতল আবাহনী।

নিজেদের রেকর্ড আরেকধাপ বাড়িয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনীর এটি ১৯তম শিরোপা।

বিকেএসপিতে বৃহস্পতিবার শান্ত ও নাসিরের ঝড়ো সেঞ্চুরি আবাহনীকে এনে দেয় ৩৭৪ রান। আগের ম্যাচেই ৩৯৩ রানের রেকর্ড গড়েছিল দলটি। এবার লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরে ছাড়িয়ে গেল নিজেদের ৩৭১ রানকে।

বিশাল রান তাড়ায় রূপগঞ্জ ইঙ্গিত দিয়েছিল চ্যালেঞ্জ জানানোর। কিন্তু দুঃসাধ্য কাজটি শেষ পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি। বরং শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়েছে ২৮০ রানে।

আবাহনীর পারফরম্যান্সে এদিন শুরু থেকেই প্রতিফলিত হয়েছে জয়ের তাড়না। এনামুল হক ও শান্ত দলকে এনে দেন উড়ন্ত সূচনা। ১০ ওভারেই আবাহনী তোলে ৮২।

এনামুলের ব্যাটই শুরুতে ছিল বেশি আগ্রাসী। ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৮ বলে। ৫১ বলে ৫৭ রান করে এনামুল আউট হন পারভেজ রসুলের অফ স্পিনে। ভাঙে ৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি।

সঙ্গীকে হারানোর পর রানের গতি বাড়ান শান্ত। তিন ও চারে নেমে হনুমা বিহারি ও মোহাম্মদ মিঠুন ফিরেছেন দ্রুত। আবাহনীর রানের স্রোতে তাতে ভাটার টান পড়েনি। নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে রানের রথ ছোটান শান্ত।

নাসিরের শুরুটা ছিল ধীরস্থির। ফর্মে থাকা শান্তকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন। শান্তর ৪৮ রানে উইকেট গিয়েছিলেন তিনি। শান্তর রান যখন ৭৫ বলে ৬৯, নাসিরের তখন ৩৯ বলে ১৮।  

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেই নাসিরই পরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান আগে! ৫৬ করেছিলেন প্রথম পঞ্চাশ। পরের পঞ্চাশ ২৩ বলেই। এবারের লিগে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেন ৭৯ বলে। থামেননি এরপরও। চালিয়ে যান ঝড়।

বাঁহাতি স্পিনার আসিফ হাসানের টানা তিন বলে দুই চার ও এক ছক্কার পর নাসির শেষ পর্যন্ত হয়ে যান স্টাম্পড। আবাহনী অধিনায়কের ৯১ বলে ১২৯ রানের ইনিংসে ১৫টি চার, ৪টি ছক্কা। শান্তর সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটি ছিল ১৮৭ রানের।

নাসির ফেরার খানিক আগেই শান্ত সেঞ্চুরির ঠিকানায় পৌঁছে যান ৯৭ বলে। এবারের লিগে তরুণ প্রতিভাবান ব্যাটসম্যনের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি।

১১ চার ও ২ ছক্কায় ‌১০৭ বলে ১১৩ করে যখন ফিরছেন শান্ত, সতীর্থ এনামুলকে টপকে তখন উঠে গেছেন লিগের রান তালিকার চূড়ায়ও। ৭৪৯ রান নিয়ে লিগ শেষ করলেন শান্ত, এনামুল করেছেন ৭৪৪।

এই দুজনের বিদায়ের পর একটু ঘাটতি পড়েছিল শেষের দাবি মেটানোয়। সেটি পুষিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। শেষ ওভারে আশিকুজ্জামানকে মেরেছেন ৩ ছক্কা। ৮ বলে চার ছক্কায় অপরাজিত ২৮!

আগের ম্যাচে ৪ উইকেট পাওয়া শহিদ এদিন ৯ ওভারে গুনেছেন ৮১ রান। লিগের সফলতম স্পিনার আসিফের ১০ ওভারে এসেছে ৯৩ রান।

বিশাল পুঁজির পর বোলিংয়ে আবাহনীকে শুরুতে সাফল্য এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ওভারেই ফেরান আব্দুল মজিদকে। পরে ফিরিয়ে দেন অভিষেক মিত্রকেও।

রূপগঞ্জ তবু দমে না গিয়ে চ্যালেঞ্জ জানায় আবাহনীকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসার পর এবার লিগেও দুর্দান্ত খেলা মোহাম্মদ নাঈম খেলতে থাকেন দারুণ সব শট। মুশফিকুর রহিম দেখা দেন আপন চেহারায়।

তবে এমন রান তাড়ায় যে ধরনের বড় ইনিংস দরকার, সেটি উপহার দিতে পারেননি কেউ। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও রূপগঞ্জকে ভোগান নাসির। ফিরিয়ে দেন এই দুজনকেই। ৫৪ বলে ৭০ রান করে ফিরে যান নাঈম। মুশফিক ফেরেন ৬৬ বলে ৬৭ রানে।

পরে চেষ্টা করেছেন অধিনায়ক নাঈম ইসলামও। তবে সঙ্গী পাননি তেমন কাউকে। সামর্থ্য ছিল যার, সেই পারভেজ রসুল আউট হন ২৫ বলে ২৯ করে। পরে ৬৮ বলে ৭৬ রান করে আউট হয়ে যান নাঈমও।

শেষ দিকে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ইনিংস। ২৯ রানে শেষ হারায় তারা শেষ ৫ উইকেট।

একটি উইকেট নিয়ে লিগে মাশরাফির রেকর্ড থেমেছে ৩৯ উইকেটে। সেঞ্চুরির পর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটি নিয়ে দলের শিরোপা জয়ের ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ অধিনায়ক নাসির।

শিরোপা জয়ের দিনই ট্রফি হাতে পাওয়ার বিরল অভিজ্ঞতায় পর আরও বর্ণিল হয়ে উঠেছে আবাহনীর শিরোপা জয়ের উৎসব।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী: ৫০ ওভারে ৩৭৪/৬ (এনামুল ৫৭, শান্ত ১১৩, বিহারি ৬, মিঠুন ১, নাসির ১২৯, মোসাদ্দেক ১৯*, মিরাজ ৭, মাশরাফি ২৮*; শহিদ ২/৮১, আশিকুজ্জামান ০/৬৮, রসুল ৩/৪২, আসিফ ১/৯৩, মোশাররফ ০/৫৩, নাঈম ইসলাম ০/৩২)।

রূপগঞ্জ: ৪২.৪ ওভারে ২৮০ (মজিদ ০, মোহাম্মদ নাঈম ৭০, অভিষেক ১৩, মুশফিক ৬৭, নাঈম ইসলাম ৭৬, রসুল ২৯, নাজমুল মিলন ৭, মোশাররফ ৭, শহিদ ০, আশিকুজ্জামান ০*, আসিফ ০; মিরাজ ২/২৯, মাশরাফি ১/৩০, সানজামুল ২/৬২, সন্দ্বিপ ২/৫৩, নাসির ২/৬৭, সাকলাইন ০/৩৭)।

ফল: আবাহনী ৯৪ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসির হোসেন