সৌম্যর তাণ্ডবের পরও রোমাঞ্চকর জয়ে টিকল ব্রাদার্স

রেকর্ড ছোঁয়া ১১ ছক্কা। ক্যারিয়ার সেরা ১৫৪ রানের ইনিংস। সৌম্য সরকারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে অগ্রণী ব্যাংক দেখেছিল আশার আলো। কিন্তু এবারই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা দলটি শেষ পর্যন্ত হতাশার আঁধারে ডুবল আবার প্রথম বিভাগে নেমে গিয়ে। রানের পাহাড় তাড়ায় চারটি ফিফটি আর শেষ বলের বাউন্ডারিতে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে টিকে টিকে রইল ব্রাদার্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2018, 01:14 PM
Updated : 4 April 2018, 01:15 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অবনমন এড়ানোর লড়াইয়ে ৪ উইকেটে জিতেছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। শেষ বলের রোমাঞ্চকর জয়ে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি টিকে গেল লিগে। প্রিমিয়ার লিগে এসে বড় বাজেটের দল গড়েও অবনমন হলো অগ্রণী ব্যাংকের।

বিকেএসপিতে বুধবার সৌম্যর ১২৭ বলে ১৫৪ রানের ইনিংস অগ্রণী ব্যাংককে এনে দিয়েছিল ৩৩৪ রানের পুঁজি। ব্রাদার্সের কেউ সেঞ্চুরি করতে পারেনি। তবে ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন দুই ওপেনার। পরের দুই ব্যাটসম্যানও খেলেছেন কার্যকর ইনিংস। আর শেষের দাবি মিটিয়েছেন নাজমুস সাদাত।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ব্রাদার্সের দরকার ছিল ৯ রান। ভারতীয় অলরাউন্ডার রিশি ধাওয়ানের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে সাদাত নেন ১ রান। পরের বলে ধাওয়ান ফিরিয়ে দেন দারুণ খেলতে থাকা স্বদেশি দেবব্রত দাসকে। পরের ৩ বলে আসে ৪ রান।

শেষ বলে দরকার হয় ৪ রান। অভিজ্ঞ সাদাতের বাউন্ডারিতে প্রিমিয়ার লিগে টিকে যাওয়ার উল্লাসে মাতে ব্রাদার্স।

সকালে অগ্রণী ব্যাংক ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। সৌম্য ও শাহরিয়ার নাফীস উদ্বোধনী জুটিতে তোলে ৪৪ রান। সালমানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৪০ রান।

মাঝে শামসুল আলম ও ধীমান ঘোষ সুবিধা করতে পারেননি খুব বেশি। ১৩৬ রানে অগ্রণী ব্যাংক হারায় ৪ উইকেট।

কিন্তু নিজের মানে খানিকটা ধীরে শুরু করা সৌম্যর ব্যাট ততক্ষণে ঝলসাতে শুরু করেছে। যোগ্য সঙ্গী পান রিশি ধাওয়ানকে। পঞ্চম উইকেটে বোলারদের তুলোধুনো করে দুজনে গড়েন ১৭১ রানের জুটি।

৬৭ বলে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন সৌম্য। সেখান থেকে সেঞ্চুরি ছুঁতে লাগে আর ৪০ বল। সেঞ্চুরির পর আরও উত্তাল তার ব্যাট। একশ থেকে দেড়শ করতে লেগেছে মাত্র ১৮ বল। ছয়টি ছক্কা মেরেছেন এই সময়ই, তার মধ্যে অলক কাপালীকে মেরেছেন টানা তিনটি।

১১টি ছক্কায় ছুঁয়েছেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যনের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড। আগে এই রেকর্ড ছিল শুধু মাশরাফি বিন মুর্তজার। ২০১৬ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই ৫০ বলে সেঞ্চুরির পথে মাশরাফি মেরেছিলেন ১১ ছক্কা।

৪৬তম ওভারে সৌম্য আউট হন ১৫৪ করে। আরেক পাশে ধাওয়ানের ব্যাটও ছিল ক্ষুরধার। তবে শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার তাড়ায় একের পর এক উইকেট হারায় অগ্রণী ব্যাংক। ৮ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ৫ বল আগেই গুটিয়ে যায় তারা। ৬৫ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন ধাওয়ান। শেষ ৫ ওভারে রান আসে মাত্র ৩১।

৩৩৫ রানের লক্ষ্য তবু ছিল পাহাড়সম। প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকতে মরিয়া ব্রাদার্স সেই লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ জানায় শুরু থেকেই। মিজানুর রহমান ও জুনায়েদ সিদ্দিকী দলকে এনে দেন আদর্শ শুরু।

দুই ওপেনারের স্ট্রোকের ছটায় ১১ ওভারেই ১০০ ছুঁয়ে ফেলে ব্রাদার্স। ৩৩ বলে ফিফটি করেন মিজানুর, ৩১ বলে জুনায়েদ।

আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মিজানুর আউট হন ৪৫ বলে ৬২ করে। ১৩.৪ ওভারে দলেল রান তখন ১২১।

দ্বিতীয় উইকেটে মাইশুকুর রহমানকে নিয়ে জুনায়েদ গড়েন ৭৭ রানের জুটি। ৭৭ বলে ৮৩ রানে জুনায়েদের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।

তৃতীয় উইকেটে আরও একটি জুটি রান তাড়ায় লড়াইয়ে রাখে ব্রাদার্সকে। মাইশুকুরের সঙ্গী এবার ভারতীয় কিপার-ব্যাটসম্যান দেবব্রত দাস। দুজনে যোগ করেন ৮৮ রান।

৮ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ১০ ওভারে ব্রাদার্সের প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান। আপাত সহজ সেই সমীকরণ শেষ দিকে হয়ে ওঠে কঠিন। ৮২ রানে মায়শুকুরকে ফেরান ধাওয়ান। পরে ইয়াসির আলিকে ফিরিয়ে দেন শূন্য রানে। মাঝে অধিনায়ক অলক কাপালি ফেরান শফিউল।

ব্রাদার্সকে তবু টেনে নিচ্ছিলেন দেবব্রত। শেষ ওভারে ৬২ বলে ৭৩ রান করা ব্যাটসম্যানকেও ফিরিয়ে দেন ধাওয়ান। কিন্তু অভিজ্ঞ সাদাতের ব্যাটে শেষ বলের চারে শেষ হাসি ব্রাদার্সেরই।

রেকর্ডের দিনেও সৌম্যর সঙ্গী হতাশা। ম্যাচসেরার পুরস্কার হয়নি কোনো সান্ত্বনা। অল্পের জন্য ফসকে যাওয়া ম্যাচে প্রথম বিভাগে নেমে যাওয়ায় হতাশায় পুড়ছে সৌম্যর দলও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অগ্রণী ব্যাংক: ৪৯.১ ওভারে ৩৩৪ (শাহরিয়ার ২৪, সৌম্য ১৫৪, সালমান ২৩, শামসুল ১, ধীমান ২৫, ধাওয়ান ৮০*, জাহিদ ৯, রাজ্জাক ০, শফিউল ০, ইসলামুল ০, আল আমিন ০; ইফতেখার ১/৫৫, খালেদ ০/৫৩, মাইশুকুর ১/৪৭, অলক ০/৫৮, সোহরাওয়ার্দী ৩/৪৮, সাখাওয়াত ৩/৪৩, সাদাত ০/২০)।

ব্রাদার্স: ৫০ ওভারে ৩৩৫/৬ (মিজানুর ৬২, জুনায়েদ ৮৩, মাইশুকুর ৮২, দেবব্রত ৭৩, অলক ৯, ইযাসির ০, সাদাত ১০*, সোহরাওয়ার্দী ১*; শফিউল ১/৭১, আল আমিন ০/৪৫, রাজ্জাক ১/৫০, ধাওয়ান ৩/৭১, ইসলামুল ১/৩৫, সৌম্য ০/৩৪, জাহিদ ০/২৩)।

ফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার