৪ সেঞ্চুরির ম্যাচ জিতল রেকর্ড গড়া আবাহনী

এক দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন দুই ওপেনার। প্রতিপক্ষের জবাব তিন ও চারে নামা দুই ব্যাটসম্যানের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে। রেকর্ড উদ্বোধনী জুটিতে প্রথম দল উঠেছে দলীয় রান রেকর্ডের চূড়ায়। অপর দলের জবাবও হচ্ছিল দারুণ। কিন্তু বাগড়া দিল বৃষ্টি। পাল্টে দিল চিত্র। বদলে যাওয়া সমীকরণের সঙ্গে আর পাল্লা দিতে পারেনি প্রাইম দোলেশ্বর। ম্যাচ জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল আবাহনী।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2018, 02:15 PM
Updated : 30 March 2018, 03:52 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবকে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ২০ রানে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড।

বিকেএসপিতে শুক্রবার এনামুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৯৩ রান তোলে আবাহনী। বাংলাদেশে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।

রান তাড়ায় সেঞ্চুরি করেন দোলেশ্বরের ফজলে মাহমুদ রাব্বি ও মার্শাল আইয়ুব। ৩০ ওভারে রান যখন ২ উইকেটে ২১৭, বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। বৃষ্টি শেষে দোলেশ্বরের লক্ষ্য ৩৫ ওভারে দাঁড়ায় ২৭৮। আরেক দফা বৃষ্টিতে সেই ৫ ওভারও পুরো শেষ হয়নি। পেরে ওঠেনি দোলেশ্বরও। ৩৪.১ ওভারে থমকে যায় ৪ উইকেটে ২৪৪ রানে।

আগের ম্যাচ হেরে যাওয়ায় এই ম্যাচে জয় জরুরি ছিল আবাহনীর। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে রেকর্ড জুটি উপহার দেন এনামুল ও শান্ত। দুজনে গড়েন ২৩৬ রানের জুটি।

লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বড় উদ্বোধনী জুটি এটি। ২১৪ রানের আগের রেকর্ড ছিল ২০১৪-১৫ মৌসুমে দোলেশ্বরের হয়ে মেহেদি মারুফ ও রনি তালুকদার জুটির। 

অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙে রান আউটে। ৭ চার ও ৬ ছক্কায় ১২৬ বলে ১২৮ রান করে এনামুল ফেরেন ৩৭তম ওভারে।

বেশি অশান্ত ছিল শান্তর ব্যাট। ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ করেছেন ১০৯ বলে।

এবারের লিগে শান্তর এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি। এনামুলের সেঞ্চুরি দুটি। তবে এই ইনিংসের পথেই অশোক মেনারিয়াকে ছাড়িয়ে এনামুল উঠে গেছেন লিগের রান সংগ্রহের শীর্ষে। ১৪ ইনিংসে ৫০.৭৬ গড়ে তার রান এখন ৬৬০।

দু্ই ওপেনারের গড়ে দেওয়া ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে মাঠে টর্নেডো বইয়ে দেন পরের দুই ব্যাটসম্যান। ভারতীয় হনুমা বিহারি ৩৬ বলে করেন ৬৬। মোহাম্মদ মিঠুন ৪৭ রানে অপরাজিত ২৪ বলে।

ইনিংসের শেষ বলে মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ছক্কা। শেষ ১০ ওভারে আবাহনী তোলে ১২০ রান।

৩৯৩ রান তুলে আবাহনী ছাড়িয়ে যায় নিজেদেরই। আগের দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল ২০১৬ সালে আবাহনীর ৩৭১ রান। তৃতীয় সর্বোচ্চ রানও আবাহনীর, ৩৬৬।

বিশাল রান তাড়ায় দোলেশ্বর ফর্মে থাকা লিটন দাসকে হারায় চতুর্থ ওভারে। আরেক ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেনও ফিরে যান খানিক পরই। তবে তৃতীয় উইকেটে অসাধারণ খেলে ম্যাচ জমিয়ে দেন ফজলে রাব্বি ও মার্শাল।

৩৬ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন মার্শাল। ফজলে রাব্বি ৪৭ বলে। দুজনের ব্যাটে একশ-দেড়শ পেরিয়ে দুশও ছাড়িয়ে যায় দোলেশ্বর। ৩০ ওভারে দোলেশ্বরের রান ২ উইকেটে ২১৭। বিশাল রান তাড়ার প্রায় অসম্ভবকে তখন মনে হচ্ছিল অনেকটাই সম্ভব। ৭৭ বলে ৯১ রানে উইকেটে ফজলে রাব্বি, ৭৪ বলে ৯৩ মার্শাল।

সেই রোমাঞ্চকর মোড়েই বৃষ্টির বাগড়া। অনেকক্ষণ বন্ধ থাকার পর যখন আবার শুরু হলো খেলা, ৫ ওভারে দোলেশ্বরের তখন প্রয়োজন ৬১ রান। আলো নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না দোলেশ্বর, কিন্তু আলোর ক্ষেত্রে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাই নামতে হয় মাঠে।

ফজলে রাব্বি ও মার্শাল তিন অঙ্কের ঠিকানায় পৌঁছে যান ঠিকই। কিন্তু বৃষ্টিতে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি। ৮৭ বলে ১০০ রান করে আউট হন ফজলে রাব্বি। ৮৮ বলে ১০৮ রানে অপরাজিত মার্শাল। ৩টি উইকেট নিলেও ৬ ওভারে ৬২ রান গুণেছেন তাসকিন।

শেষ ওভারে আবার বৃষ্টি নামলে শেষ হতে পারেনি সেই ৫ ওভারও। তবে আবাহনীর জয় ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী: ৫০ ওভারে ৩৯৩/৪ (এনামুল ১২৮, শান্ত ১২১, বিহারি ৬৬, মিঠুন ৪৭*, নাসির ৭, মোসাদ্দেক ৬*; সালাউদ্দিন ২/৮১, ফরহাদ রেজা ১/৮০, শরিফউল্লাহ ০/৪৮, আব্দুল্লাহ ০/৬৪, আরফাত সানি ০/৬৯, মাসুদ ০/৪৮)।

প্রাইম দোলেশ্বর: ৩৪.১ ওভারে ২৪৪/৩ (ইমতিয়াজ ১২, লিটন ১৪, ফজলে মাহমুদ ১০০, মার্শাল ১০৮*, ফরহাদ রেজা ০*; মাশরাফি ০/৩৪, তাসকিন ৩/৬২, সানজামুল ০/৪১, মিরাজ ০/৪৮, সাকলাইন ০/২৫, বিহারি ০/২১, নাসির ০/৯)।

ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইসে আবাহনী ২০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক