বল টেম্পারিংয়ের দায় স্বীকার স্মিথ-ব্যানক্রফটের

টিভি ফুটেজে যখন ধরা পড়ল হলুদ কাপড়ের মতো কিছু লুকানোর চেষ্টা করছিলেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট, ঝড়ের আভাস মিলেছিল তখনই। সেই ঝড়টা এলো অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এবং ভয়াবহ তীব্রতায়। কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বল টেম্পারিংয়ের চেষ্টার দায় স্বীকার করে নিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও ওপেনার ব্যানক্রফট।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2018, 05:40 AM
Updated : 25 March 2018, 05:40 AM

বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ যুগে যুগে উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধেই। শাস্তিও হয়েছে। তবে এভাবে প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করে নেওয়ার ঘটনা ক্রিকেটে বিরল।

ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার চলতি কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় সেশনের। টিভিতে ধরা পড়ে, হলুদ কাপড়ের মত কিছু একটা পকেট থেকে বের করেছিলেন ব্যানক্রফট। পরে সেটি লুকানোর চেষ্টা করেন তার ট্রাউজারের ভেতরে।

ওই ফুটেজ আলোচনার খোরাক জোগায় তখনই। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার গ্রায়েম স্মিথ বলেন, বল বিকৃত করার জন্য ওই হলুদ কাপড়ের মতো টুকরাটি শিরীষ কাগজ হতে পারে। আম্পায়াররা অবশ্য তখনই ব্যানক্রফটের সঙ্গে কথা বলেন। তবে বলের অবস্থা পরিবর্তন হয়নি দেখে বল বদলাননি। ৫ রান পেনাল্টি দেওয়ার তাৎক্ষনিক শাস্তির পথেও হাঁটেননি।

ছবি: আইসিসি

তবে টিভির ফুটেজ রয়ে যায় কিছু একটা করার চেষ্টা প্রমাণ হিসেবে। দিনের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কিছু আর লুকানোর চেষ্টা করেননি ব্যানক্রফট।

“ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে আমার। বলের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে আমাকে। লাঞ্চ বিরতির সময় আমাদের মধ্যে একটি আলোচনা হয়েছিল। টেপ ব্যবহার করে, উইকেটের ক্ষত অংশের মাটির দানা ব্যবহার করে বলের কন্ডিশন বদলানো একটি সুযোগ দেখেছিলাম আমি।”

“যদিও এটা কাজে দেয়নি। আম্পায়াররা তাই বল বদলাননি। আমার ছবি বড় পর্দায় ভেসে ওঠে। সেটা দেখেই আমি চেষ্টা করেছিলাম ট্রাউজারের ভেতর গুঁজে দিতে।”

বল টেম্পারিংয়ের চেষ্টা করার সিদ্ধান্তটি যে দলীয় ছিল, সেটি স্বীকার করে নেন অধিনায়ক স্মিথ।

“লিডারশিপ গ্রুপ এটা নিয়ে জানত। লাঞ্চের সময় আমরা কথা বলেছিলাম। যা হয়েছে, তা নিয়ে আমি গর্বিত নই। খেলার চেতনার সঙ্গে এটি যায় না। আমার সততা, দলের সততা ও লিডারশিপ গ্রুপের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং সেটাই উচিত। অবশ্যই এটা করা উচিত হয়নি এবং আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, আমার নেতৃত্বে আর এমন হবে না।”

“আমি নাম ধরে বলছি না, তবে লিডারশিপ গ্রুপ এটা নিয়ে আলোচনা করেছে। ব্যাঙ্গারস (ব্যানক্রফট) তখন সেখানে ছিল, আমরা আলোচনা করেছি এবং ভেবেছি যে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার একটি উপায় এটি হতে পারে। অবশ্যই সেটি কাজে দেয়নি। আম্পায়ারদের মনে হয়নি, বলের আচরণ বদলে গেছে। অবশ্যই তাই খুব বাজে পছন্দ ছিল এটি। আমরা এজন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত।”

টিভিতে দেখা যায়, ড্রেসিং রুম থেকে কিছু একটা ইশারা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন কোচ ড্যারেন লেম্যান। দ্বাদশ ব্যক্তি পিটার হ্যান্ডসকমকে মাঠে পাঠানোও হয়েছিল, হয়ত কোনো বার্তা দিয়ে। তবে কোচদের সম্পৃক্ত থাকার কথা উড়িয়ে দিলেন স্মিথ।

“কোচদের কেউ সম্পৃক্ত ছিল না। ক্রিকেটার ও লিডারশিপ গ্রুপেরই ভাবনা এটা। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আর হবে না। যতবার ইচ্ছে প্রশ্ন করতে পারেন, কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলছি যে আমার নেতৃত্ব এটা প্রথমবার হলো। আমরা অনুতপ্ত, এখান থেকে এগিয়ে যেতে চাই সামনে।”

অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক জানান, বল রিভার্স সুইং করছিল না দেখে মরিয়া চেষ্টাতেই এই পথ বেছে নিয়েছিলেন তারা।

“আমরা দেখেছি, এই সিরিজে বল বেশ রিভার্স সুইং করেছে। তবে এবার মনে হচ্ছিলো না অতটা করবে। আমাদের দিক থেকে বড় ভুল হয়ে গেছে। খুব বাজে ব্যাপার হয়েছে। আবারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমার নেতৃত্বে এমনটি আর হবে না।”

“আমি বিব্রত। ড্রেসিং রুমে সবাই বিব্রত। দলের নেতা হিসেবে আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত। ধরা না পড়লেও আমি অনুতাপ করতাম।”

স্মিথ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বটে আবার না করার, তবে তার নেতৃত্বই এখন ঝুলছে সুতোয়। আইসিসির অভিযোগের বাইরেও এই ঘটনা নিয়ে আলাদা করে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। প্রয়োজনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পথ বেছে নেবে বোর্ড, জানিয়েছে প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড। স্মিথ নিজে অবশ্য দায়িত্ব ছাড়ার কথা ভাবছেন না।

“আমি পদত্যাগের কথা বিবেচনা করছি না। এখনও মনে করি, নেতৃত্বের জন্য আমিই সঠিক ব্যক্তি। আজ আমার দিক থেকে, লিডারশিপ গ্রুপের দিক থেকে ছিল বড় একটা ভুল। তবে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ আমাকেই করতে হবে। আমি অবশ্যই গর্বিত নই। আশা করি, এখান থেকে শিখে আমি ঘুরে দাঁড়াব।”