ভারতের কাছে হেরে বাংলাদেশের শুরু

ম্যাচের আগে শোনা গেছে আশার জয়গান। অধিনায়কের কণ্ঠে ছিল কিছু করে দেখানোর প্রত্যয়। ২২ গজে ফুটে উঠল সেসবের সামান্যই। নতুন টুর্নামেন্টে নতুন শুরু নয়, দেখা গেল গত কিছুদিনের বিবর্ণ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিই। ভারতের বিপক্ষে হেরে শুরু হলো ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের পথচলা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিকলম্বো থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2018, 05:29 PM
Updated : 8 March 2018, 07:13 PM

প্রথম পছন্দের ছয়জনকে ছাড়া খেলতে আসা ভারতের সঙ্গেও পেরে উঠল না বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরেছে তারা ৬ উইকেটে। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়া ভারত ফিরল জয়ে।

বাংলাদেশকে হারের পথে ঠেলে দিয়েছে ব্যাটিং। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে থমকে যায় তারা ১৩৯ রানে।

উইকেট প্রথম ম্যাচের মত ব্যাটিং স্বর্গ ছিল না। খানিকটা ছিল মন্থর। বোলাররা চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু এই পুঁজি নিয়ে কী আর ভারতকে আটকানো যায়!

এই নিয়ে ভারতের বিপক্ষে ছয়টি টি-টোয়েন্টি খেলে একটিতেও জিততে পারল না বাংলাদেশ।

ভারতের মতো রান তাড়ায় দক্ষ দলের সঙ্গে আগে ব্যাট করে প্রয়োজন ছিল বড় স্কোরের। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দেখা গেল কেবল একমুখী পরিকল্পনার ছাপ। হয় মারো, নয় মরো। মাঝামাঝি কিছু নেই। ৫৫টি ডট বল হয়েছে, যার বেশিরভাগই তেড়েফুড়ে শট খেলতে গিয়ে।

ভারতীয়দের পরিকল্পনা ছিল শর্ট বলে বাংলাদেশকে কাবু করা। বাংলাদেশ পারেনি জবাব দিতে। এমনকি মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা ব্যাটিং অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্করও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন বল হাতে।

অথচ ভারতের ফিল্ডিং ভালো হয়নি মোটেও। বোলিংও হয়নি আহামরি কিছু। ১১টি ওয়াইড ও দুটি নো বল সেটির বড় প্রমাণ। কিন্তু ফায়দা নেওয়ার চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশি ব্যস্ত ছিলেন আত্মহননে।

অথচ দুই দলের শুরুটা ছিল প্রায় একইরকম। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৪৪, ভারতের ২ উইকেটে ৪৭।

পার্থক্যটা হয়েছে পরে। ভারতের ছিলেন একজন ধাওয়ান, যিনি লম্বা ইনিংস খেলে টেনেছেন দলকে। বাংলাদেশ একজনকেও পায়নি সেই ভূমিকায়। ম্যাচও তাই শেষ পর্যন্ত হয়েছে এক তরফা।

ম্যাচের প্রথম ওভারেই তামিম-সৌম্যকে বেশ ভোগান জয়দেব উনাদকাট। সৌম্য আউট হতে পারতেন প্রথম ওভারেই। সেটি হয়নি, তবে অপেক্ষা খুব দীর্ঘায়িতও হয়নি। নিজের পরের ওভারেই উনাদকাট ফিরিয়েছেন সৌম্যকে।

ফ্লিক করে দারুণ এক ছক্কা মেরেছিলেন সৌম্য। আউট হয়েছেন একইরকম শটের চেষ্টায়। একটু টেনে দেওয়া বলে ধরা পড়েছেন শর্ট ফাইন লেগে।

শার্দুল ঠাকুরের প্রথম ওভারে তামিম রক্ষা পান রিভিউয়ে। পরের দুই বলে টানা চার। ঘটনাবহুল সেই ওভারেই তামিম আউট শর্ট বল পুল করতে গিয়ে।

উইকেটে যাওয়ার পরপরই লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেলকে সুইচ হিট ও স্লগ সুইপে চার মারেন মুশফিক। তার কাল হয়েছে অতি আক্রমণাত্মক মানসিকতাই। বিজয় শঙ্করকে দারুণ পুলে ছক্কা মারার পরের বলেই ডাউন দা উইকেটে খেলে বিলিয়ে এসেছেন উইকেট।

এই উইকেট পতনের স্রোতে এক পাশে আটকে ছিলেন লিটন। তবে সেটায় তার কৃতিত্বের চেয়ে প্রতিপক্ষ ফিল্ডারদের ব্যর্থতাই ছিল বেশি। শঙ্করের এক ওভারে দুবার বেঁচে গেছেন ক্যাচ দিয়েও। পরের ওভারে রান আউট হননি অল্পের জন্য।

দলের সর্বোচ্চ ৩৪ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকেই। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে যতটা আগ্রাসী ও দৃষ্টিনন্দন ছিল তার ব্যাটিং, মূল ম্যাচে ততটাই মলিন। ৩০ বলের ইনিংসে চার তিনটি।

দায়িত্ব নেওয়ার দাবিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও উপহার দিয়েছেন উইকেট।

ভরসা তখন কেবল সাব্বির। যদিও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভরসার চেয়ে বেশি জোগাচ্ছিল ভয়। শেষ পর্যন্ত খুব খারাপ করেননি। ২৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস সবশেষ ১০ আন্তর্জাতিক ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান। হয়ত হারানো আত্মবিশ্বাসের কিছুটা ফিরিয়েও দেবে তাকে। তবে দলকে উদ্ধারে প্রয়োজন ছিল বিস্ফোরক ইনিংসের, যেটি হয়নি। ধুঁকতে ধুঁকতে তাই ১৪০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে বাংলাদেশ।

উইকেট যে খানিকটা মন্থর ছিল, সেটি আরও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ভারতের প্রথম দুই উইকেটই। দুই ব্যাটসম্যানই হয়েছেন প্লেড অন। মুস্তাফিজের বল বলে রোহিত শর্মা, রুবেলের বলে রিশাভ পান্ত।

কিন্তু লক্ষ্য ছিল ছোট। ধাওয়ানের ফর্ম দুরন্ত। তাই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি ভারতকে। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ৯০ করলেও তা যথেষ্ট হয়নি দলের জয়ের জন্য। এদিন তার ৪৩ বলে ৫৫ রানের ইনিংস দলকে নিয়ে গেছে জয়ের কিনারায়। যেখান থেকে তীরে পৌঁছতে সমস্যা হয়নি বাকিদের।

বাংলাদেশের জন্য সেই তীর যেন এখন দৃষ্টিসীমার বাইরে। মাঝ দরিয়ায় দিশাহারা তরী, নেই কোনো দক্ষ নাবিক!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৯/৮ (তামিম ১৫, সৌম্য ১৪, লিটন ৩৪, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ১, সাব্বির ৩০, মিরাজ ৩, তাসকিন ৮*, রুবেল ০, মুস্তাফিজ ১*; উনাদকাট ৩/৩৮, সুন্দর ০/২৩, শার্দুল ১/২৫, যুজবেন্দ্র ১/১৯, শঙ্কর ২/৩২)

ভারত: ১৮.৪ ওভারে ১৪০/৪ (রোহিত ১৭, ধাওয়ান ৫৫, পান্ত ৭, রায়না ২৮, মনিশ ২৭*, কার্তিক ২*; মুস্তাফিজ ১/৩১, তাসকিন ১/২৮, রুবেল ২/২৪, মিরাজ ০/২১, সৌম্য ০/৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১১, নাজমুল ০/১৫)

ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিজয় শঙ্কর