অবিশ্বাস্য প্রতিরোধেও পেরে উঠল না কলাবাগান

জিততে প্রয়োজন ২৩৯। মাঝারি সেই লক্ষ্যটাও প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল ৩৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে। মান বাঁচানোই তখন দায়! ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েই তাইবুর পারভেজ ও আবুল হাসানের ব্যাটে রচিত হলো ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্প। জয়ও চলে এল নাগালে। শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধের গল্পের সমাপ্তি আক্ষেপে। সেই জুটির বীরোচিত পারফরম্যান্সেও খেলাঘরের বিপক্ষে পেরে ওঠল না কলাবাগান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2018, 12:07 PM
Updated : 28 Feb 2018, 02:55 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিচের সারির দুই দলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রকে ১৫ রানে হারিয়েছে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার ব্যাটিংটা খুব ভালো করেনি খেলাঘরও। ২৩৮ রান করতে পারে তারা ভারতীয় ব্যাটসম্যান অশোক মেনারিয়ার ৯৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে। রান তাড়ায় বিব্রতকর শুরুর পর লড়াইয়ে ফেরা কলাবাগান শেষ পর্যন্ত করেছে ২২৩।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কলাবাগান ৬২ রানে হারিয়েছিল প্রথম ৩ উইকেট। চতুর্থ উইকেটে মেনারিয়া ও অমিত মজুমদার গড়েন ৬৫ রানের জুটি।

৪২ রানে অমিতের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। দ্রুত আরও দুই উইকেট হারিয়ে খেলাঘরের রান হয়ে যায় ৬ উইকেটে ১৪০।

সেখান থেকেই লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন মেনারিয়া। ৭৫ বলে ছুঁয়েছিলেন ৫০। পরের ৪৫ করেন ২৩ বলে। ৭ চার ও ৪ ছক্কায় আউট ৯৫ করে আউট হন শেষ ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে।

রান তাড়ায় কলাবাগান মুখ থুবড়ে পড়ে শুরুতেই। তরুণ পেসার হাসান মাহমুদের প্রথম ওভারেই বাজে শটে আউট মোহাম্মদ আশরাফুল। ৬ ম্যাচে একটিতে সেঞ্চুরি (১৩১ বলে ১০৪) করলেও বাকি ম্যাচগুলোতে আশরাফুলের রান ১৪, ২৫, ৮, ০ ও ০।

সেই ধাক্কা সামালের আগেই পরের ওভারে জোড়া ধাক্কা। রবিউল ইসলাম রবির অফ স্পিনে পরপর দুই বলে আউট ওপেনার ওয়ালিউল করিম ও বড় ভরসা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আকবর-উর-রেহমান।

তৃতীয় ওভারে তাসামুল হক হাসান মাহমুদের বল টেনে আনলেন স্টাম্পে। ৪ উইকেটে দলের রান তখন ৫।

উইকেট পতনের স্রোতে বাঁধ দিতে ব্যর্থ মিডল অর্ডারের অন্যরাও। ৩৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় কলাবাগান।

কিন্তু বিস্ময়ের বাকি ছিল তখনও। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাইবুর পারভেজ দাঁড়িয়ে গেলেন আবারও। দারুণ সঙ্গ দিলেন আবুল হাসান। দুজনের জুটিতে একটু একটু করে কলাবাগান ছাড়িয়ে গেল একশ-দেড়শ। পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চাওয়া একসময় রূপ নিল জয়ের সম্ভাবনায়। শেষ ৮ ওভারে ৭৩ রানের সমীকরণকে মনে হচ্ছিলো মেলানো খুবই সম্ভব।

শেষ পর্যন্ত সেটি আর হলো না। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে আউট হলেন আবুল হাসান। ভাঙল অষ্টম উইকেটে ১৩৬ রানের জুটি।

তাইবুর হাল ছাড়েননি তার পরও। দশে নেমে সঞ্জিত সাহাও চেষ্টা করে গেছেন। ম্যাচ জমে ওঠে আরও। ৪৫তম ওভারে দুজনে মারেন তিনটি বাউন্ডারি। পরের ওভারেও সঞ্জিতের ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি।

রোমাঞ্চের সমাপ্তি ৪৭তম ওভারে। ৮১ রান করে লড়াইয়ে ক্ষান্তি দিয়ে ফেরেন তাইবুর পারভেজ। সঞ্জিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত, তবে তার ২৬ বলে ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস যথেষ্ট হয়নি দলের জন্য।

আগের ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে খেলাঘরকে জিতিয়েছিলেন অশোক মেনারিয়া। এবার ৯৫ রান করে ম্যাচ-সেরা ভারতীয় ব্যাটসম্যান।

ছয় ম্যাচে তিনটি করে জয়-হারে খেলাঘর উঠে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের আটে। সমান ম্যাচে মাত্র এক জয়ে কলাবাগান তলানিতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খেলাঘর: ৫০ ওভারে ২৩৮ (রবি ২১, সাদিকুর ৪, মাহিদুল ২৫, অমিত ৪২, মেনারিয়া ৯৫, নাজিম উদ্দিন ৩, রাফসান ৫, মাসুম ১৮, আঞ্জুম ১৩*, তানভির ০, হাসান ০; মুক্তার ২/২১, নাহিদ ২/৪৩, আবুল হাসান ১/৬১, রাহাতুল ৩/৪৪, মাহমুদুল ০/৩৫, সঞ্জিত ০/২৫)।

কলাবাগান: ৫০ ওভারে ২২৩/৯ (ওয়ালিউল ১, আশরাফুল ০, তাসামুল ১, আকবর ০, মাহমুদুল ২, রাহাতুল ১১, তাইবুর ৮১, মুক্তার ০, আবুল হাসান ৭৬, সঞ্জিত ৩১*, নাহিদ ৫*; হাসান ৩/৪৭, রবি ২/২৪, আঞ্জুম ২/২৭, রাফসান ১/৪২, তানভির ০/১৯, মাসুম ১/৪৪, মেনারিয়া ০/১৪)

ফল: খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ১৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: অশোক মেনারিয়া