শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৭৫ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানদের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে তারা ২-০তে।
দুই অভিষিক্ত আর একাদশে চার পরিবর্তন নিয়েও বাংলাদেশ বদলাতে পারেনি ভাগ্য। সিলেটে নিজ দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে আসা গ্যালারি ভরা দর্শক ফিরেছে হতাশা নিয়ে।
রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ২১০ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানদের দুইশ রান এই প্রথম। শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ করতে পেরেছে ১৩৫।
শিশিরভেজা মাঠে রাতে বোলিং করতে হবে, শ্রীলঙ্কা তাই জানত বড় লক্ষ্য দেওয়া জরুরি। লঙ্কানদের সেই ভিত গড়ে দেয় উদ্বোধনী জুটি।
দলকে আবারও বিস্ফোরক শুরু এনে দেন দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুসল মেন্ডিস। বিপিএলে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে এই মাঠে দারুণ পারফর্ম করে গেছেন গুনাথিলাকা। আগের ম্যাচের ম্যাচ সেরা মেন্ডিস আত্মবিশ্বাস বয়ে আনেন এই ম্যাচেও। দুজনের সৌজন্যে শ্রীলঙ্কা পায় ঝড়ো শুরু।
অভিষিক্ত আবু জায়েদকে প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে শুরু করেন মেন্ডিস। তৃতীয় ওভারে অভিষিক্ত মেহেদি হাসানকে ছক্কায় হাত খোলেন গুনাথিলাকা। জুটির পঞ্চাশ আসে ৩১ বলেই। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান ৬৩।
আগের ম্যাচে দুজনের জুটি ছিল ৫৩ রানের। এবার দলকে উড়িয়ে নেন শতরানের কাছাকাছি। তাতে খানিকটা অবদান আছে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়েরও। গুনাথিলাকার ১৫ রানে ডাইভ দিয়েও ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি তামিম ইকবাল। ২৮ রানে তারই তুলনামূলক সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
জুটি ভাঙতে শেষ পর্যন্ত সৌম্যর হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফাটকাটা কাজে লেগে যায়। গুনাথিলাকাকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম উইকেট এনে দেন অনিয়মিত পেসারই।
৩৭ বলে ৪২ করে ফেরেন গুনাথিলাকা। ১১ ওভারে উদ্বোধনী জুটির রান ছিল ৯৮।
শক্ত ভিত পেয়ে থিসারা পেরেরাকে তিনে পাঠায় শ্রীলঙ্কা। রানের গতি তাতে পায় নতুন দম। দ্বিতীয় উইকেট জুটির পঞ্চাশ আসে ২৬ বলেই।
আগের ম্যাচে ২৫ বলে ফিফটি করা মেন্ডিস এবার অর্ধশতক স্পর্শ করেন ২৯ বলে। থিসারার ব্যাটে ছিল চেনা ঝড়।
১৭ বলে ৩১ রান করা থিসারাকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ। অভিষিক্ত পেসার প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা পেলেন নিজ শহরের মাঠে।
মেন্ডিসের দারুণ ইনিংসটি শেষ হয় মুস্তাফিজকে ছক্কা মারতে গিয়ে। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৪২ বলে ৭০ রানের ইনিংসটি সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতেই তার সর্বোচ্চ।
এই দুজনের ফেরার পর শেষ দিকে রানের রাশ একটু টানতে পারত বাংলাদেশ। হয়েছে উল্টো। উপুল থারাঙ্গা ও দাসুন শানাকা মিলে চালিয়েছেন তাণ্ডব।
১৩ বলে ২৫ রান করেছেন থারাঙ্গা, ১১ বলে অপরাজিত ৩০ শানাকা। শেষ ৩ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলেছে ৪৯ রান!
তবে সেই গ্যালারিতে শ্মশানের নীরবতা নেমে আসে দ্রুতই। দ্বিতীয় ওভারেই আকিলা দনঞ্জয়াকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট সৌম্য সরকার। মাদুশাঙ্কার বলে থার্ডম্যান দিয়ে ছক্কার পর শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক। সাব্বির রহমানের বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া মিঠুনও ফেরেন বাজে শটে।
প্রথম তিন ওভারে তিন উইকেট হারালে আশার সমাধিই হয়ে যাওয়ার কথা। তামিম ছিলেন বলে তবু খানিকটা জ্বলছিল আশার প্রদীপ। সেটাও নিভে যায় ২৩ বলে ২৯ রান করে তামিমের বিদায়ে। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার আমিলা আপোন্সো প্রথম ওভারেই দেখা পান প্রথম উইকেটের।
লড়াইটা এরপর ছিল কেবল ব্যবধান কমানোর। ৩১ বলে ৪১ রান করে মাহমুদউল্লাহ রান আউট হন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে। হতাশার মিছিলে ব্যতিক্রম হতে পারেননি নবীন আরিফুল-মেহেদিরা।
সব মিলিয়ে সিলেটের মাঠে নিজেদের শুরুটা ভুলে যেতেই চাইবে বাংলাদেশ। ভুলে যাওয়ার মত আসলে গোটা সিরিজই। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ জিতে উড়ছিল যে দল, এক মাস পর সেই দলই নিমজ্জিত হতাশার তিমিরে। তিন সংস্করণেই জিতে লঙ্কানরা ফিরছে চওড়া হাসি নিয়ে। বাংলাদেশের সামনে কেবলই অস্বস্তিকর প্রশ্নের ভিড়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ২১০/৪(গুনাথিলাকা ৪২, কুসল ৭০, থিসারা ৩১, থারাঙ্গা ২৫, শানাকা ৩০*, চান্দিমাল ২*; আবু জায়েদ ১/৪৫, নাজমুল ০/২৮, মেহেদি ০/২৫, মুস্তাফিজ ১/৩৯, সাইফ ১/৪৬, সৌম্য ১/২৫)।
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৩৫ (তামিম ২৯, সৌম্য ০, মুশফিক ৬, মিঠুন ৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, আরিফুল ২, সাইফ ২০, মেহেদি ১১, মুস্তাফিজ ৮, আবু জায়েদ ২, নাজমুল ১*; মাদুশাঙ্কা ২/২৩, দনঞ্জয়া ১/২০, শানাকা ১/৫, থিসারা ০/৩৩, আপোন্সো ১/৩১, জিবন ১/৮, উদানা ১/১২, গুনাথিলাকা ২/৩)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৭৫ রানে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে শ্রীলঙ্কা ২-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসল মেন্ডিস
ম্যান অব দা সিরিজ: কুসল মেন্ডিস