১৯৮৬ সালের ইংল্যান্ড-নিউ জিল্যান্ড ওভাল টেস্ট। গাজা সেবনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরে ইয়ান বোথাম প্রথম বলেই আউট করলেন ব্রুস এডগারকে। স্পর্শ করলেন সেই সময়ের টেস্ট রেকর্ড ৩৫৫ উইকেট। ক্যাচটি নেওয়া গ্রাহাম গুচ তখন বলেছিলেন, “হু রাইটস ইয়োর ব্লাডি স্ক্রিপ্ট?” ক্রিকেট আখ্যানে স্থায়ী জায়গা পাওয়া কথাটি এখন বলা যায় আব্দুর রাজ্জাককেও, “কে লিখেছে এমন চিত্রনাট্য?” চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরেই চার উইকেট!
Published : 08 Feb 2018, 05:13 PM
ভালো লাগা প্রকাশের ভাষা নেই রাজ্জাকের
বোলিংয়ের ভালো লাগা উধাও ব্যাটিংয়ে
তবু ৩০ রানের ঘাটতি দেখছে শ্রীলঙ্কা
আমাদের দুটি উইকেট বেশি পড়েছে: রাজ্জাক
এবারের আগে রাজ্জাক সবশেষ টেস্ট খেলতে ঠিক চার বছর আগে। ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে। সেবার প্রথম দিনে মাত্র চার ওভার বোলিং করে মাঠ ছেড়েছিলেন হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লেগে। সেই একই তারিখ, একই প্রতিপক্ষ, মাঝে ব্যবধান চার বছরের। সেবারের চার ওভারের বিষাদ এবার রূপ নিল চার উইকেটের আনন্দে।
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে গেছে ২২২ রানে। ৪ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার দলে ফেরা রাজ্জাক।
এই টেস্টের আগে ৮ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলতে পেরেছিলেন ১২ টেস্ট। উইকেট ছিল কেবল ২৩টি। প্রতিটি উইকেটের জন্য খরচ করতে হয়েছিল ১২২.৪ বল ও ৬৭.৩৯ রান। সেরা ছিল ৯৩ রানে ৩ উইকেট। এবার ফিরেই করলেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
তার এই ফেরার পথ সহজ ছিল না মোটেও। টেস্ট দলে তো কখনও থিতু হওয়ার সুযোগ পাননি। রঙিন পোশাকে এক সময় ছিলেন দেশের সেরা বোলার। সেখানেও গত তিন বছরে হয়ে পড়েছিলেন অপাংক্তেয়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে গেছেন। বিশেষ করে ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে গত তিন বছরে নিজেকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। তবু জাতীয় দলে ছিলেন উপেক্ষিত। মাত্রই কদিন আগে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে পেয়েছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের স্বাদ।
তার টেস্ট ক্যারিয়ারের এপিটাফ অনেকে লিখে ফেলেছিলেন বেশ আগেই। জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা যদি কিছু বেঁচে থাকে, মনে করা হতো সেটা ছিল সীমিত ওভারেই। সবাইকে চমকে দিয়েই চট্টগ্রাম টেস্টের দলে আনা হয় তাকে।
প্রধান নির্বাচক তখন বলেছিলেন রাজ্জাকের অভিজ্ঞতার কথা। দলের প্রয়োজনের কথা। অথচ বিস্ময়করভাবে একাদশে জায়গা পেলেন না। টেস্ট শেষের আগেই ফেরত পাঠানো হলো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে।
এরপরও আবার রাখা হলো মিরপুর টেস্টের স্কোয়াডে। এবার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল বটে। জায়গা পেলেন একাদশে। উইকেট ছিল স্পিন সহায়ক। বাকিটা করলেন নিজেই।
শুরু করেছিলেন দিমুথ করুনারত্নেকে ফিরিয়ে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই পরপর দুই বলে তুলে নেন দানুশকা গুনাথিলাকা ও দিনেশ চান্দিমালকে। হ্যাটট্রিক না হলেও পরে নিয়েছেন আরও একটি উইকেট। ফিরিয়েছেন বাংলাদেশের মূল বাধা হয়ে থাকা কুসল মেন্ডিসকে।
৫ উইকেট অধরাই থেকে গেছে। ফেরাটা তবু উদ্ভাসিতই। ৬৩ রানে ৪ উইকেটের কীর্তি খুব একটা ম্লান হচ্ছে না আরেকটি উইকেট না পাওয়ার আক্ষেপে।
সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন একটি মনদণ্ডও বেঁধে দিলেন রাজ্জাক। দিনের পর দিন উপেক্ষিত থাকার পরও হাল না ছাড়া, লড়াই চালিয়ে যাওয়া, নিজেকে অনুপ্রাণিত করে পারফর্ম করে যাওয়া, পারফরম্যান্স দিয়েই জায়গা আদায় করে নেওয়া, ৩৫ বছর ২৩৮ দিন বয়সে ফিরতে পারা এবং ফেরার দিনে এভাবে জ্বলে ওঠা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে রাজ্জাক এখন একটি উদাহরণ। তার হাত ধরে রচনা নতুন এক অধ্যায়ের।