আব্দুর রাজ্জাকের উদ্ভাসিত ফেরা। তাইজুল ইসলামের যোগ্য সঙ্গত। টস জয়ী শ্রীলঙ্কা প্রথম দিনেই দুইশ পেরিয়ে শেষ। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের বাতাসে উড়ছিল যেন বাংলাদেশের সুখের রেণু। ব্যাটিংয়ে নামতেই পাল্টে গেল হাওয়া। দিনশেষে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমেই অস্বস্তির দাপাদাপি।
Published : 08 Feb 2018, 04:46 PM
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় চাপে বাংলাদেশ
যে নজির বাংলাদেশের আগে ছিল মাত্র একবার
আমাদের দুটি উইকেট বেশি পড়েছে: রাজ্জাক
তবু ৩০ রানের ঘাটতি দেখছে শ্রীলঙ্কা
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে গেছে ২২২ রানে। তবে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় বিপদে আছে বাংলাদেশও। দিন শেষে রান ৪ উইকেটে ৫৬।
উইকেটে বল ঘুরেছে প্রথম ওভার থেকেই। বাউন্সও কিছুটা অসমান। চন্দিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ থাকার সময় এ রকম উইকেটে বেছে নেওয়া হতো দ্রুত রান তোলার কৌশল। হাথুরুসিংহের কোচিংয়ে এদিন শ্রীলঙ্কাও বেছে নেয় একই পথ। নিয়মিত উইকেট হারালেও দ্রুত রান তুলতে পারায় লঙ্কানদের রান হয়ে যায় সম্ভবত বাংলাদেশের চাওয়ার চেয়ে ২০-৩০ রান বেশি।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাজও সহজ হবে না, অনুমিতই ছিল। তবে কাজটা কঠিন করে তুলেছে ব্যাটসম্যানরা নিজেরাই।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে দারুণ ড্রাইভে বাউন্ডারির পর তামিম ইকবাল পরের বলে একই চেষ্টায় লাকমলকে দিলেন ফিরতি ক্যাচ। গত টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির নায়ক মুমিনুল হকের বিদায় আরও হতাশাজনকভাবে। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে যেভাবে আলসেমি করে রান আউট হলেন, তা যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই ক্ষমার অযোগ্য।
মুশফিকুর রহিম একবার বাঁচলেন সহজতম ক্যাচের সুযোগ দিয়ে, আরেকবার রিভিউয়ে। তবু টিকলেন না। লাকমলের ভেতরে ঢোকা বল দৃষ্টিকটুভাবে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপর্যস্ত বাংলাদেশ।
অথচ দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল আনন্দদায়ী। আব্দুর রাজ্জকের হাত ধরে প্রথম উইকেট মিলেছিল দ্রুতই।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ শুরু করে দুই পাশেই স্পিন দিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গী রাজ্জাক। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার, ম্যাচের প্রথম ইনিংসে দুই পাশেই শুরু স্পিনে।
মিরাজ ছন্দ না পেলেও রাজ্জাক দলকে উইকেট এনে দেন নিজের তৃতীয় ওভারেই। দিমুথ করুনারত্নে ব্যর্থ এবারও।
তবে শুরুর ধাক্কা খুব দ্রুতই সামাল দেয় শ্রীলঙ্কা। তাদের কৌশলটাও ফুটে ওঠে পরিষ্কার; শট খেলে দ্রুত রান বাড়ানোর উপায় খোঁজা।
কুসল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা খেলেছেন দারুণ কিছু শট। বিশেষ করে মেন্ডিস নেমেছিলেন যেন বিশেষ অভিযানে। সুইপ, ড্রাইভ আর পায়ের কাজে খানিকটা এলোমেলো করে দেন স্পিনারদের লাইন লেংথ।
৪৭ রানের জুটি ভাঙে তাইজুলের দারুণ এক ডেলিভারিতে। আগের টেস্টে ১৭৩ রান করা ধনঞ্জয়া এবার ২ চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ১৯। টার্ন ও বাউন্সে ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে।
মেন্ডিস আর গুনাথিলাকার ব্যাটে শ্রীলঙ্কা গুছিয়ে উঠছিল আবারও। এই সময়ই রাজ্জাকের আবার ছোবল। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পরপর দুই বলে উইকেট। গুনাথিলাকা ফিরলেন বাজে শটে। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে দিনেশ চান্দিমাল আউট প্রথম বলেই।
লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশ করে ফেলে ৩১ ওভার। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৪ উইকেটে ১০৫।
লাঞ্চের পর আবারও রাজ্জাকের সৌজন্যে বাংলাদেশের উচ্ছ্বাস। দারুণ খেলতে থাকা কুসল মেন্ডিস বোল্ড আরেকটি অসাধারণ ডেলিভারিতে। দলের ১০৯ রানে মেন্ডিসের একারই রান তখন ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৬৮।
পরের ওভারে নিরোশান ডিকভেলাকেও বোল্ড করে দেন রাজ্জাক। ১১০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দিকভ্রান্ত শ্রীলঙ্কা। দিশা খুঁজে পায় তারা রোশেন সিলভা ও দিলরুয়ান পেরেরার জুটিতে।
সপ্তম উইকেট জুটিতে পেরেরার সঙ্গে রোশেনের জুটি ৫২ রানের, অষ্টম উইকেটে আকিলা দনঞ্জয়ার সঙ্গে ৪৩ রানের। মহামূল্য এই দুই জুটিই শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নেয় দুইশ ছাড়িয়ে।
উইকেট সহায়ক বলেই হয়ত অতিরিক্ত চেষ্টায় প্রায়ই বাজে বল করে ফেলছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। কখনও বেশ শর্ট, কখনও বেশি ফুল লেংথ। ফায়দা তুলেছে লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ৫৬ রানে রোশেনের বিদায়েই শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছে লঙ্কান ইনিংস।
চার বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে রাজ্জাক নিয়েছেন ক্যারিয়ার সেরা চার উইকেট। সমান উইকেট তাইজুলেরও। তবে দলের সেরা বোলার ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। দারণ বোলিংয়ে ভুগিয়েছেন লঙ্কানদের। রান আটকেছেন, পাশাপাশি নিয়েছেন দুটি উইকেটও।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সর্বনিম্ন ২৯৩ থেকে অনেক কমে এবার আটকে গেছে শ্রীলঙ্কা। তবে বোলারদের সৌজন্যে লঙ্কান ড্রেসিং রুমের দম আটকানো পরিস্থিতিটা আর থাকেনি। সেই অনভূতি দিন শেষে চেপেছে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৬৫.৩ ওভারে ২২২ (মেন্ডিস ৬৮, করুনারত্নে ৩, ধনঞ্জয়া ১৯, গুনাথিলাকা ১৩, চান্দিমাল ০, রোশেন ৫৬, ডিকভেলা ১, পেরেরা ৩১, দনঞ্জয়া ২০, হেরাথ ২, লাকমল ৪*; মিরাজ ০/৫৪, রাজ্জাক ৪/৬৩, তাইজুল ৪/৮৩, মুস্তাফিজ ২/১৭)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২ ওভারে ৫৬/৪ (তামিম ৪, ইমরুল ১৯, মুমিনুল ০, মুশফিক ১, লিটন ২৪*, মিরাজ ৫*; লাকমল ২/১৫, পেরেরা ১/২৫, দনঞ্জয়া ০/৪, হেরাথ ০/১১)।