শেষ দিনের কঠিন চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ

পিঠে বড় লিডের বোঝা। সামনে পরাজয়ের চোখ রাঙানি। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার সময় ছিল শঙ্কা, ছিল কঠিন চ্যলেঞ্জ। চতুর্থ দিন শেষে সেই শঙ্কা বেড়েছে আরও। চ্যালেঞ্জ জয়ের পথ হয়ে উঠেছে আরও দুর্গম।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2018, 11:57 AM
Updated : 3 Feb 2018, 02:09 PM

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান করার পরও ম্যাচ বাঁচাতে লড়ছে বাংলাদেশ। শনিবার শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ৯ উইকেটে ৭১৩ রানে।

২০০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ চতুর্থ দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৮১ রান তুলে।

ইনিংস পরাজয় এড়াতেই বাংলাদেশের প্রয়োজন এখনও ১১৯ রান। এর মধ্যেই হারাতে হয়েছে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিমকে।

উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য যথেষ্ট ভালো ছিল চতুর্থ বিকেলেও। শ্রীলঙ্কার বোলিংও হয়নি অসাধারণ কিছু। ইমরুল উপহার দিয়ে এসেছেন উইকেট, তামিমও ফিরেছেন বাজে শটে। কেবল মুশফিকই ছিলেন একটু দুর্ভাগা।

আগে দু দফায় প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ ও ৫৯৫ রান করেও ম্যাচ হারার তেতো স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। আশঙ্কা এখন সেখানে আরও একটি ম্যাচ যোগ হওয়ার।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে শঙ্কার যে জায়গাটি ছিল, চতুর্থ দিন বিকেলে পারফরম্যান্সে ছিল সেটিরই প্রতিফলন। ম্যাচ ড্র করার জন্য যেভাবে উইকেট আঁকড়ে রাখতে হয়, দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়াই করতে হয়, নিজের সহজাত প্রবণতার সঙ্গে আপোস করে সংযম দেখাতে হয়, সেটি বাংলাদেশ করতে পেরেছে খুব কম সময়ই। এবারও দেখা গেল না ব্যতিক্রম।

তামিম ও ইমরুল উদ্বোধনী জুটিতে তুলেছে ৫২ রান। তবে সেই রান সংখ্যাটা কেবলই ভুলই বোঝাবে। দুজনই হেঁটেছেন ঝুঁকির পথে। সময় কাটানোর চেয়ে রান তোলার নেশাই ছিল বেশি।

পঞ্চম ওভারেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে অল্পের জন্য আউট হননি ইমরুল। দৃষ্টিকটু শটে বেঁচে গেছেন আরও কয়েকবার। তবে এভাবে খেললে তো বারবার বাঁচা যায় না! আউট হলেন বাজেভাবেই।

ইমরুলের অতিরিক্ত সুইপ খেলার প্রবণতা দেখে নিজেকে স্কয়ার লেগে নিয়ে এলেন লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল। প্রথম বলেই সুইপ করে চান্দিমালের হাতে বল তুলে দিলেন ইমরুল!

তামিম খেলেছেন দুর্দান্ত কিছু শট। কিন্তু আউট হলেন ঠেকাতে গিয়ে। এমন এক বলে, যেটিতে ডিফেন্স করার দরকারই ছিল। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করে চায়নাম্যান সান্দাকানের বল বেরিয়ে যাচ্ছিল আরও। তামিমের বাড়িয়ে দেওয়া ব্যাটে ছোঁয়া দিয়ে বল কিপারের গ্লাভসে।

জোড়া ধাক্কায় কাতর বাংলাদেশকে মুমূর্ষু বানিয়ে দিল আরেকটি আঘাত। দিনের শেষ ওভারে আউট হলেন মুশফিকুর রহিম। রঙ্গনা হেরাথের বলে তার ডিফেন্স ভালোই ছিল। কিন্তু বল বুটে লেগে গেল সামনে। সিলি পয়েন্ট থেকে ঝাপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন কুসল মেন্ডিস।

ব্যাটিংয়ের আগে ভোগান্তি ছিল বোলিংয়েও। বাংলাদেশের দিন শুরু হয়েছিল অপেক্ষায়, কখন থামবে শ্রীলঙ্কা! সেই ক্লান্তিকর অপেক্ষার শেষ হয়নি প্রথম দুই সেশন।

রান বাড়ানোর তাড়াহুড়ো দেখা যায়নি লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে। নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল, লক্ষ্যটাও ছিল পরিষ্কার। এক ইনিংস ব্যাট করে যত বেশি সম্ভব লিড নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলা।

৮৭ রানে দিন শুরু করা রোশেন সিলভা সেঞ্চুরি করে ফেলেন অনায়াসেই। ১৯৭ বলে স্পর্শ করেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। ইনিংসে তখন মাত্র ৬টি চার ও ১টি ছয়। দৌড়ে করা ৭০ রান প্রমাণ দেয় তার পরিণত মানসিকতার।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের একশর বেশি ম্যাচ ও সাড়ে ৬ হাজারের বেশি রান করার পর গত ডিসেম্বরে টেস্ট অভিষেক তার। অনেক প্রতীক্ষার পর পাওয়া সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছেন এই ২৯ বছর বয়সী। অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো অপরাজিত ৭৪ রানের পর দ্বিতীয় টেস্টে করলেন সেঞ্চুরি।

সেঞ্চুরিটাকে অবশ্য খুব বড় করতে পারেননি রোশেন। মিরাজের বেশ বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। চতুর্থ উইকেটে চান্দিমালের সঙ্গে তার জুটি ছিল ১৩৫ রানের।

সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল আরও দুজনের সামনে। দিনেশ চান্দিমাল গিয়েছিলেন খুব কাছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ৬ টেস্টে করেছেন চারটি সেঞ্চুরি। পঞ্চমটি পারলেন না মুহূর্তের অমনোযোগ আর তাইজুল ইসলামের একটি ভালো বল মিলিয়ে। আর্ম বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড ৮৭ রানে।

নিরোশান ডিকভেলা যথারীতি রান করেছেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। রান করার তাড়নায়ই ৬১ বলে ৬২ করে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজকে।

লোয়ার অর্ডারে দিলরুয়ান পেরেরা, রঙ্গনা হেরাথরাও ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের যন্ত্রণা মুক্তি চা-বিরতির কিছু পরে। হেরাথ আউট হওয়ার পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ওভার ও রান, দুটিই রেকর্ডে দ্বিতীয়। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ৭০০ রান হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। আগেরবার ৭৩০ রানের রেকর্ডটি করেছিল শ্রীলঙ্কাই। ১৯৯.৩ ওভার বোলিং করেছে বাংলাদেশ। এর চেয়ে বেশি ২০০ ওভার বোলিং করেছে কেবল ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

শ্রীলঙ্কার রান রথে পিষ্ট হয়ে বাংলাদেশের বোলাররা নাম লিখিয়েছেন অনাকাঙ্ক্ষিত সব রেকর্ডে। ৪ উইকেট নিলেও তাইজুল ৬৭.৩ ওভারে রান গুনেছেন ২১৯। বাংলাদেশের হয়ে যেটি ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার ও সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড। ১৫৪ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন সানজামুল। অভিষেকে যা বাংলাদেশের সবচে খরুচে বোলিং।

দিন শেষে অবশ্য ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে হাহুতাশের সুযোগটা খুব বেশি থাকেনি। দলই যে হারের মুখে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫১৩

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৯৯.৩ ওভারে ৭১৩/৯ (ডি.) (আগের দিন ৫০৪/৩)( রোশেন ১০৯, চান্দিমাল ৮৭, ডিকভেলা ৬২, পেরেরা ৩২, হেরাথ ২৪, লাকমল ৯, কুমারা ২*; মুস্তাফিজ ১/১১৩, সানজামুল ১/১৫৩, মিরাজ ৩/১৭৪, তাইজুল ৪/২১৯, মোসাদ্দেক ০/২৪, মুমিনুল ০/৬, মাহমুদউল্লাহ ০/৭)।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৬.৫ ওভারে ৮১/৩ (তামিম ৪১, ইমরুল ১৯, মুমিনুল ১৮*, মুশফিক ২; হেরাথ ১/২২, লাকমল ০/১৬, ধনঞ্জয়া ০/২০, পেরেরা ১/২০, সান্দাকান ১/৩)।