উচ্চতার কমে স্পিনার হয়ে বাড়তি উচ্চতাই শক্তি নাঈমের

ছেলেবেলায় ছিলেন পেসার। কিন্তু উচ্চতা ছিল কম। একাডেমির বড় ভাই ও কোচের পরামর্শে হয়ে গেলেন স্পিনার। পরে বেড়ে গেল উচ্চতা। সেই উচ্চতার কারণে পাওয়া বাড়তি বাউন্সই এখন অফ স্পিনার নাঈম হাসানের সবচেয়ে বড় শক্তি!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2018, 03:25 PM
Updated : 29 Jan 2018, 03:25 PM

রোববার চট্টগ্রামে টেস্ট দলের সঙ্গে প্রথম দিন অনুশীলনের আগে ছেলেবেলার গল্প শোনাচ্ছিলেন নাঈম। যদিও তার ছেলেবেলা কোনো সুদূর অতীত নয়। বয়স সবে ১৭। চেহারায় এখনও কৈশোরের ছাপ। পদক্ষেপে জড়তা, আচরণে আড়ষ্টতা। ভীরু ভীরু চাহনি, সেখানে ফুটে ওঠে কৌতুহলও।

চার বছর পর টেস্ট দলে ফেরা আব্দুর রাজ্জাকের পাশাপাশি নাঈমকে ঘিরেও কৌতুহল প্রবল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে ছিলেন নিউ জিল্যান্ডে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর যখন মন খারাপ করে বসেছিলেন হোটেলে, তখনই দলের ম্যানেজারের কাছ থেকে খবরটি পেয়ে চমকে ওঠেন। ডাক পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের বাংলাদেশ দলে!

নাঈমের ডাক পাওয়া চমকে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট আঙিনাকেও। প্রথম দিন তাকে ঘিরে কৌতুহল থাকাই স্বাভাবিক। তবে তিনি তো আর এসবে অভ্যস্ত নন। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার আগেও তার মনে নানা সংশয়। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবুকে এক পাশে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা, “কিভাবে কি বলব?”

ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, রেকর্ডারের সামনে স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে ছিলেন একটু আড়ষ্ট। তবে পেস বোলার থেকে স্পিনার হওয়ার গল্পে মুখে ফুটে উঠল হাসি। একটু খুলল মনের দুয়ার।

“ক্রিকেট শুরু করেছি পেস বল দিয়ে। তখন উচ্চতা বেশি ছিল না। একাডেমিতে বড় ভাইরা বললেন, ‘তুমি স্পিনার হও।’ কোচ মোমিন ভাই তখন বাইরে ছিলেন। উনি আসার পর উনার সাথে কথা বললাম। উনিও বললেন স্পিনই করতে।”

সেই থেকে নাঈম স্পিনার। ঘুর্ণি বলের দীক্ষা যখন চলছে, উঠতি বয়সে তখন উচ্চতাও বেড়ে চলেছে। এখন তিনি পুরো ৬ ফুট। মুখের হাসি অটুট রেখেই জানালেন, উচ্চতার কারণে পাওয়া বাউন্সই স্পিনার হিসেবে তার মূল শক্তি।

“বাউন্সটা ভালো পাই আমি। বাংলাদেশের উইকেটে টার্ন পাওয়া যায়। তার পরও উইকেট বুঝে বল করতে হয়। তবে বাড়তি বাউন্স পাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।”

অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তার সতীর্থরা এখনও আছে নিউ জিল্যান্ডে। খেলবেন পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে। দল ছেড়ে আসার সময় সবার শুভকামনাও বয়ে এনেছেন।

“গত কয়েকটা দিন খুব ভালো গেল। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে জানলাম টেস্ট দলে ডাক পেয়েছি। দেশে আসতেও খুব ভালো লাগল। ভালো লাগছিল। ম্যাচটা হারার পর মন খারাপ ছিল। জানার পর ভালো লেগেছে। সবাই বলেছে, ‘সমস্যা নাই, ওখানে ভালো কিছু করবে।’”

জাতীয় দলে ডাক প্রথমবার, তবে এই ড্রেসিং রুমের স্বাদ এই প্রথম নয়। গত বছর অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে চট্টগ্রামেই বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পে নাঈম ও আরেক অফ স্পিনার সঞ্জিত সাহাকে আনা হয়েছিল নাথান লায়নকে খেলার প্রস্তুতি নিতে। সেখানে নাঈমের দারুণ বোলিং নজর কাড়ে নির্বাচকদের। বাড়তি বাউন্স ও লাইন-লেংথ দিয়েই মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। সেই সময়ের কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে করেছিলেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা।

এর পর অনূর্ধ্ব-১৯ দল আর ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাকে আলাদা করে নজরে রাখেন নির্বাচকরা। এবার টেস্ট দল ঘোষণায় চমক দেওয়ার পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছেন, তাদের বিশ্বাস নাঈম বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত।

একদিন এই মঞ্চে আসার স্বপ্ন তিনি দেখছিলেন। উদাহরণ মেনেছিলেন আগের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মেহেদী হাসান মিরাজকে। তবে এত দ্রুত সুযোগ পাওয়া ছিল তার ভাবনার বাইরে।

“আমার ইচ্ছা ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শেষ হয়ার পর মিরাজ ভাইয়ের মতো ডাক পাব। এখন আগে পেয়েছি। এত আগে পাব সেটা ভাবিনি। দলে সুযোগ পেলে চেষ্টা করব ভালো জায়গায় বল করার। টেস্ট তো ধৈর্যের খেলা। উইকেট তো কপালের ওপর, উইকেট কী হবে জানি না। আমি চেষ্টা করব আমার যে বৈচিত্র, শক্তির জায়গা আছে তা কাজে লাগানোর।”

চট্টগ্রামের ছেলে তিনি। এই শহরেরই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগ, বিসিএল ও বিপিএল অভিষেক। সেখানেই এখন টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষা। কে জানে, হয়তো এই মাঠ তাকে দেবে দুহাত ভরিয়েই।