‘ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট মুশফিকের আউট’

একের পর এক উইকেট পতনের মধ্যে যেভাবে দলকে টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ তাতে খুশি মাশরাফি বিন মুর্তজা। অধিনায়ককে ততটাই হতাশ মুশফিকুর রহিমের খেলায়। দলের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের আউটকে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন মাশরাফি। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2018, 04:11 PM
Updated : 27 Jan 2018, 05:42 PM

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ থেমেছে ১৪২ রানে। স্বাগতিকদের ইনিংসে পঞ্চাশ রানের জুটি একটিই। গড়ে উঠে দুই ব্যাটিং ভরসা মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের ব্যাটে।

অহেতুক রানের জন্য ছটফট করে আত্মঘাতী হন মুশফিক। সুইপ করে ক্যাচ দিয়ে তার বিদায়ে ভাঙে ৫৮ রানের জুটি। সে সময়ে রান আসছিল। প্রয়োজনীয় রান রেটও ছিল কেবল পাঁচের একটু বেশি। সেদিক থেকে কোনো চাপ ছিল না। মাহমুদউল্লাহ দারুণ খেলছিলেন। সেই সময়ে কেন মুশফিকের অমন আউট বুঝতে পারছেন না অধিনায়ক।

“দশ ওভার শেষে (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ এবং মুশফিক যেভাবে ব্যাটিং করছিল, আমার মনে হয়, তাদের জুটিটা আরও একটু এগিয়ে নিতে পারলে পরের দিকে হয়তো একটু সহজ হত। তখন হয়তো সাকিবও একটু চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু মুশফিক আউট হওয়ার পর চিত্রটা পাল্টে যায়।”

“মুশফিক যতক্ষণ ব্যাটিং করেছে আমরা ম্যাচে ছিলাম। ওখান থেকে (ইনিংস) বড় করলে অন্যরকম হত। আমি নিশ্চিত ও নিজেও হতাশ। এমন না যে, রান হচ্ছিল না। রানও ৫/৬ করে আসছিল। আমাদের দরকারই ছিল ওটা। কোনো কোনো ওভারে কম হলেও সমস্যা ছিল না।”

৭৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ পাননি কোনো যোগ সঙ্গী। এর জন্য ব্যাটসম্যানদের দায় দিলেন মাশরাফি।

“এক দিকে খুব ভালো খেলছিল মাহমুদউল্লাহ। আরেক পাশের সহায়তা অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। ও শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছে। ওই সময় শটস খেলাটা খুব স্বাভাবিক। মিডল অর্ডার থেকে যদি ও সহায়তা পেত তাহলে খেলাটা আরও ডিপে যেত। আমি যখন উইকেট যাই দেখেছি, ও চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো সঙ্গী সহায়তা না করলে আসলেই খুব কঠিন।”

টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হল বাংলাদেশের ব্যাটিং। একের পর এক ব্যর্থতায় ব্যাটসম্যানদের স্কিল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে অধিনায়ক মনে করেন, সমস্যাটা স্কিলে নয়, মানসিকতায়।

“একজন ব্যাটসম্যানের জন্য ঠিক বল বেছে নেওয়া আর শটের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে হয়তো একটা ঘাটতি থাকতে পারে। আর চাপ অবশ্যই কাজ করে।

“শুরুতে দুই-তিনটা উইকেট পড়ার পরের পরিস্থিতি সামলানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা হয়তো এমন পরিস্থিতিতে কাজটা করতে পারছি না। তবে মাহমুদউল্লাহ যেভাবে খেলছিল, মুশফিক যদি (ইনিংসটা) আরেকটু বড় করতো তাহলে হয়তো সম্ভব ছিল।” 

শুরুতে অতি সাবধানী ছিল বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারে উঠে মাত্র ১১ রান। মাশরাফি জানান, ১০ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৫-৩০ রান হলেও দলের অভিযোগ থাকতো না। রানের জন্য ছটফট না করে বরং ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে দেখতে পছন্দ করতেন অধিনায়ক।

“উইকেটে কোনো বল উঠছিল, কোনোটা নামছিল। আমরা জানি, এখানে কিছুক্ষণ সময় না কাটালে শটস খেলা খুব কঠিন। হয়তো দশ ওভারের ভেতরে রান ছিল না, এই কারণে ব্যাটসম্যানরা শটস খেলেছে। আমার জন্য খুব কঠিন ওই সময়টা ব্যাখা করা, ওই সময় ব্যাটসম্যানদের মাথায় কি চলছিল বলা।” 

“১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩০ হতে পারত। আজকে হয়তো এর চেয়ে বেশি দরকার ছিল না। যদি ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ২৫/৩০ রান হত আমরা ম্যাচে থাকতাম। কিন্তু সেই সময়ে ২২ রানে আমরা তিন উইকেট হারিয়ে ফেলি। প্রথম উইকেট পড়ার পর আরেকটু ধরে খেলা উচিত ছিল। এতটা আক্রমণাত্মক মুডে না গিয়ে একটু দেখে খেললে ভালো হত।”

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রস্তুতি পর্বের একটা অংশ ছিল শর্ট বল সামলানো। এনিয়ে অনেক কাজ করার পরও শর্ট বলে নিয়মিত উইকেট হারানোর কোনো ব্যাখ্যা নেই অধিনায়কের কাছে।

“আমরা শর্ট বল নিয়ে আলাপও করেছি। এমন না যে আপনি ৭/৮ দিনে স্কিলের উন্নতি করতে পারবেন। তবে মানসিকভাবে তৈরি হওয়া যায়। হোমওয়ার্ক আমরা করেছিলাম কিন্তু মাঠে কাজটা করতে পারিনি।”