রেকর্ডটি নেতৃত্বের। রেকর্ডটিগর্বের। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়াই দারুণ সম্মান। সেই নেতৃত্বে যদি ধরা দেয় দেশকে সবচেয়েবেশি ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড, তার চেয়ে গর্বের কিছু হয়তো কমই আছে। এতদিন সেই গর্ব ছিলহাবিবুলের, এখন মাশরাফির। হাবিবুলের ২৯ জয় ছাড়িয়ে ৩০ জয় নিয়ে বাংলাদেশর সফলতম ওয়ানডেঅধিনায়ক এখন মাশরাফি।
বয়স আর প্রজন্মের ব্যবধানআছে, তবে মাশরাফির কাছে সেসব তো কখনোই দেয়াল নয়। দুজনের সম্পর্ক তাই দারুণ বন্ধুত্বের।সম্পর্ক খুনসুটির। মঙ্গলবার জিম্বাবুয়েকে হারানোর আগে যখন ২৯ জয় নিয়ে পাশাপাশি দুজন,তখনও বেশ খুনসুটি হয়ে গেছে।
তবে শুধু এই বন্ধুত্ব আর ব্যক্তিগতভালো লাগার কারণেই শুধু নয়, রেকর্ড হারিয়ে হাবিবুল খুশি আরও কিছু কারণে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে বললেন, এই রেকর্ড মাশরাফিরই প্রাপ্য।
“প্রথমত, আমি অবশ্যই চাইনিএই রেকর্ডের শীর্ষে বসে থাকতে। আরেকজন অধিনায়ক দেশকে আরও বেশি ম্যাচ জেতাবে, সেটিইসবসময় কাম্য ছিল। ব্যক্তিগত রেকর্ড তো দেশের জয়ের চেয়ে বড় চাওয়া হতে পারে না।”
“আমি বেশি খুশি রেকর্ডটি মাশরাফিভেঙেছে বলে। এটা ওর প্রাপ্য ছিল। এই দফায় অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ছেলেটা কত কষ্ট করেছে,কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছে দলের জন্য, নিজেকে কতটা বদলেছে, সবই আমরা কাছ থেকে দেখেছি।এই রেকর্ড ওর পাশেই বেশি মানায়।”
মাশরাফি চূড়ায় ওঠার পর হাবিবুলেরসবকিছুর আগে মনে পড়ছে সেই কম আলোচিত দিকগুলোই।
“ওর ত্যাগের কথা বলতে গেলে…বিস্তারিতগভীরে যেতে চাই না। তবে ছোট ছোট অনেক কিছু আছে, যেগুলোতে নিজেকে বদলেছে ও। পাশাপাশিদলের জন্যও করেছে অনেক কিছু। দলটাকে একটা পরিবার হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি সহজ নয়। অনেককষ্ট করে এসব করে যাচ্ছে।”
“ট্যাকটিক্যালি যদি বলি, তাহলেওমাশরাফি অসাধারণ অধিনায়ক। ওর অন ফিল্ড অধিনায়কত্ব দুর্দান্ত। ছোট ছোট অনেক সিদ্ধান্তআছে, যেগুলো ও সময়মত নিতে পারে বলেই সেগুলো বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে। আলাদা করে হয়ত অনেকসময় সেভাবে চোখে পড়ে না, কিন্তু ম্যাচের ফলে বড় ভূমিকা রাখে। খেলাটা খুব ভালো বোঝেমাশরাফি।”
৬৯ ম্যাচে ২৯ জয় পেয়েছিলেনঅধিনায়ক হাবিবুল। মাশরাফি ছাড়িয়ে গেছেন ৫৩ ম্যাচেই। তবে, মাশরাফি অনেকবারই বলেছেন বাংলাদেশেতার প্রিয় অধিনায়ক হাবিবুল। সেরাও মানেন তাকেই। জিম্বাবুয়ে ম্যাচের আগে মাশরাফি নাকিসেটি আবারও বলেছেন সাবেক অধিনায়ককে।
“দুষ্টুমি তো সবসময়ই করেই।তবে ওর বড় গুণ বিনয় ও শ্রদ্ধাবোধ। এই ম্যাচের আগেও যেমন বলছিল, ‘সুমন ভাই, ওই সময়েদলের যা অবস্থা ছিল, বাংলাদেশ ক্রিকেট যেখানে ছিল, তাতে ওই সময়ের ২৯ জয় এখনকার ১০০জয়ের সমান।’ ওই সময় কাজটা কঠিন ছিল বটে, তবে ও তো বাড়িয়েই বলে। সবাই জানি, এই বাংলাদেশদলে মাশরাফির কতটা অবদান। যেটা বললাম, রেকর্ডটি মাশরাফিরই প্রাপ্য।
প্রিয় উত্তরসূরিকে খুব দ্রুতইথমকে যেতে দেখতে চান না হাবিবুল। তার চাওয়া, রেকর্ডটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন মাশরাফি।
“সবাইকে একদিন থামতে হয়, মাশরাফিকেওএকদিন থামতে হবে। তবে আমি চাই না সেই দিনটি দ্রুতই আসুক। এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছেওর। আশা করি, রেকর্ডটাকে আরও এগিয়ে নেবে ও। পরের অধিনায়কের জন্য মানদণ্ডটা অনেক উঁচুতেবেধে দেবে। হয়ত একদিন সেটিও ছাড়িয়ে যাবে অন্য কেউ। এভাবেই একটা দেশের ক্রিকেট এগিয়েযায়।”