মাশরাফি বলেই বেশি খুশি হাবিবুল

“রেকর্ড হারাতে কেমন লাগে?” শুরুতেই এমন প্রশ্নে একটু হতচকিত হাবিবুল বাশার। পরে বুঝতে পেরে হাসলেন, “রেকর্ড হারাতে কার ভালো লাগে!” তবে জড়িয়ে যখন মাশরাফি বিন মুর্তজা, তখন এক কথাতেই শেষ নয়। হাবিবুল যেমন যোগ করলেন, “সত্যি বলতে, রেকর্ড তো একদিন ভাঙতোই। আমি খুশি যে রেকর্ডটি মাশরাফির কাছে হারিয়েছি।”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2018, 10:17 AM
Updated : 24 Jan 2018, 10:57 AM

রেকর্ডটি নেতৃত্বের। রেকর্ডটি গর্বের। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়াই দারুণ সম্মান। সেই নেতৃত্বে যদি ধরা দেয় দেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড, তার চেয়ে গর্বের কিছু হয়তো কমই আছে। এতদিন সেই গর্ব ছিল হাবিবুলের, এখন মাশরাফির। হাবিবুলের ২৯ জয় ছাড়িয়ে ৩০ জয় নিয়ে বাংলাদেশর সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক এখন মাশরাফি।

বয়স আর প্রজন্মের ব্যবধান আছে, তবে মাশরাফির কাছে সেসব তো কখনোই দেয়াল নয়। দুজনের সম্পর্ক তাই দারুণ বন্ধুত্বের। সম্পর্ক খুনসুটির। মঙ্গলবার জিম্বাবুয়েকে হারানোর আগে যখন ২৯ জয় নিয়ে পাশাপাশি দুজন, তখনও বেশ খুনসুটি হয়ে গেছে।

তবে শুধু এই বন্ধুত্ব আর ব্যক্তিগত ভালো লাগার কারণেই শুধু নয়, রেকর্ড হারিয়ে হাবিবুল খুশি আরও কিছু কারণে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, এই রেকর্ড মাশরাফিরই প্রাপ্য।

“প্রথমত, আমি অবশ্যই চাইনি এই রেকর্ডের শীর্ষে বসে থাকতে। আরেকজন অধিনায়ক দেশকে আরও বেশি ম্যাচ জেতাবে, সেটিই সবসময় কাম্য ছিল। ব্যক্তিগত রেকর্ড তো দেশের জয়ের চেয়ে বড় চাওয়া হতে পারে না।”

“আমি বেশি খুশি রেকর্ডটি মাশরাফি ভেঙেছে বলে। এটা ওর প্রাপ্য ছিল। এই দফায় অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ছেলেটা কত কষ্ট করেছে, কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছে দলের জন্য, নিজেকে কতটা বদলেছে, সবই আমরা কাছ থেকে দেখেছি। এই রেকর্ড ওর পাশেই বেশি মানায়।”

হাবিবুলের কথাগুলো বেশ কৌতুহল জাগানিয়া। অধিনায়ক মাশরাফির কথা বলতে গেলে সবাই তার অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকার কথা বলেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, দলকে একাট্টা করা আর মাঠে সামর্থ্যের সবটুকু উজার করতে উজ্জীবিত করার কথা বলেন। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফির মাঠের ভেতরে-বাইরে ত্যাগ, তার ক্রিকেট মস্তিষ্ক, ট্যাকটিক্যাল দিকগুলোর কথা উঠে আসে কম সময়ই।

মাশরাফি চূড়ায় ওঠার পর হাবিবুলের সবকিছুর আগে মনে পড়ছে সেই কম আলোচিত দিকগুলোই।

“ওর ত্যাগের কথা বলতে গেলে…বিস্তারিত গভীরে যেতে চাই না। তবে ছোট ছোট অনেক কিছু আছে, যেগুলোতে নিজেকে বদলেছে ও। পাশাপাশি দলের জন্যও করেছে অনেক কিছু। দলটাকে একটা পরিবার হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি সহজ নয়। অনেক কষ্ট করে এসব করে যাচ্ছে।”

“ট্যাকটিক্যালি যদি বলি, তাহলেও মাশরাফি অসাধারণ অধিনায়ক। ওর অন ফিল্ড অধিনায়কত্ব দুর্দান্ত। ছোট ছোট অনেক সিদ্ধান্ত আছে, যেগুলো ও সময়মত নিতে পারে বলেই সেগুলো বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে। আলাদা করে হয়ত অনেক সময় সেভাবে চোখে পড়ে না, কিন্তু ম্যাচের ফলে বড় ভূমিকা রাখে। খেলাটা খুব ভালো বোঝে মাশরাফি।”

৬৯ ম্যাচে ২৯ জয় পেয়েছিলেন অধিনায়ক হাবিবুল। মাশরাফি ছাড়িয়ে গেছেন ৫৩ ম্যাচেই। তবে, মাশরাফি অনেকবারই বলেছেন বাংলাদেশে তার প্রিয় অধিনায়ক হাবিবুল। সেরাও মানেন তাকেই। জিম্বাবুয়ে ম্যাচের আগে মাশরাফি নাকি সেটি আবারও বলেছেন সাবেক অধিনায়ককে।

“দুষ্টুমি তো সবসময়ই করেই। তবে ওর বড় গুণ বিনয় ও শ্রদ্ধাবোধ। এই ম্যাচের আগেও যেমন বলছিল, ‘সুমন ভাই, ওই সময়ে দলের যা অবস্থা ছিল, বাংলাদেশ ক্রিকেট যেখানে ছিল, তাতে ওই সময়ের ২৯ জয় এখনকার ১০০ জয়ের সমান।’ ওই সময় কাজটা কঠিন ছিল বটে, তবে ও তো বাড়িয়েই বলে। সবাই জানি, এই বাংলাদেশ দলে মাশরাফির কতটা অবদান। যেটা বললাম, রেকর্ডটি মাশরাফিরই প্রাপ্য।

প্রিয় উত্তরসূরিকে খুব দ্রুতই থমকে যেতে দেখতে চান না হাবিবুল। তার চাওয়া, রেকর্ডটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন মাশরাফি।

“সবাইকে একদিন থামতে হয়, মাশরাফিকেও একদিন থামতে হবে। তবে আমি চাই না সেই দিনটি দ্রুতই আসুক। এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে ওর। আশা করি, রেকর্ডটাকে আরও এগিয়ে নেবে ও। পরের অধিনায়কের জন্য মানদণ্ডটা অনেক উঁচুতে বেধে দেবে। হয়ত একদিন সেটিও ছাড়িয়ে যাবে অন্য কেউ। এভাবেই একটা দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যায়।”