বিসিবির সবশেষ সাধারণ সভায় ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া কাজী ইনাম আহমেদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এবারের লিগ নিয়ে আরও কিছু সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনার কথা।
শুরুর সম্ভাব্য সময়
গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ হয়েছিল ক্রিকেট মৌসুম শেষে। প্রচণ্ড গরমে খেলে ক্রিকেটাররা হয়ে পড়েছিল কাহিল। দেখা দিয়েছিল নানা শারীরিক সমস্যা। গরমের সময় লিগ আয়োজন করা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হয়েছিল। বড় একটা বাধা ছিল বৃষ্টিও। কাজী ইনাম আহমেদ জানালেন, এবার থেকে আবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট মৌসুমে ফিরিয়ে আনতে চান তারা।
“প্রিমিয়ার লিগ গত কয়েক বছরে দেখেছি বৃষ্টির সময়, রোজার সময় হয়। অনেক ক্লাবই আমাদেরকে এটা নিয়ে বলেছে। আমরাও ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। জানুয়ারি ২ বা ৩ তারিখ আমরা ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে বসব।”
“প্রিমিয়ার লিগ আবার আমরা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ফিরিয়ে আনতে চাই। এবার জানুয়ারির ২০ তারিখ আমরা শুরুর চেষ্টা করব। তার ৮-১০ দিন আগে ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’ ড্রাফট যাতে করা যায়, সেটির জন্য ইতিমধ্যেই ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলছি।
প্লেয়ার্স বাই চয়েজ
ক্রিকেটারদের স্বাধীনভাবে দল বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাদেরকে বিভিন্ন গ্রেডিংয়ে রেখে পারিশ্রমিক বেধে দেওয়া হবে। প্লেয়ার্স ড্রাফটে দলগুলো বেছে নেবে তাদের। এটিই ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’।
প্রথমবার এটি চালুর সময় বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান বলেছিলেন, এটি একবারের জন্যই, আর কখনও হবে না। তবে বিতর্কিত সেই পদ্ধতি ফিরে আসছে আবার।
সিসিডিএমের নতুন চেয়ারম্যান জানালেন, ক্লাবগুলোর অনুরোধে ও আরও কিছু দিক ভেবে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।
“এবার আমরা ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’ পদ্ধতিতে দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকগুলো ক্লাব আমাদের কাছে অনুরোধ করেছে। পাশাপাশি আমরা যেটি বিবেচনা করে দেখেছি, আমাদের জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার খেলতে পারবে না। কারণ লিগ হবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চে। প্রতিটি ক্লাব চারজন করে ক্রিকেটার ধরে রাখতে পারবে।”
“ক্লাবগুলোর কথা হচ্ছে, অনেক চাহিদা এসে যাচ্ছে, যেটা তাদের পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না টিকে থাকার ক্ষেত্রে। যে কারণে প্লেয়ার্স বাই চয়েজ আসছে।”
প্লেয়ার্স বাই চয়েজ পদ্ধিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় মাঝারি মানের ক্রিকেটাররা। তাদের আয়ের মূল উৎসই এই প্রিমিয়ার লিগ। ক্লাবগুলোর সঙ্গে দর কষাকষির সুযোগ না থাকায় কম পারিশ্রমিকেই খেলতে বাধ্য হন অনেকে।
কাজী ইনামের দাবি, ক্রিকেটারদের ভাবনাও কাদের আছে। তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই চেষ্টা করা হবে।
“ক্রিকেটারদের ব্যাপারটিও আমাদের ভাবনায় আছে। বিশেষ করে এই লিগ যেহেতু অনেক ক্রিকেটারের আয়ের মূল উৎস। সেটিও আমরা ঠিক রাখার চেষ্টা করব।”
“আমরা এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচকদের অনুরোধ করেছি গ্রেডিং অনুযায়ী পারিশ্রমিক ঠিক করতে। গত মৌসুমে কে কেমন টাকা পেয়েছে, আমাদের একটি ধারণা আছে। সেটা বিবেচনা করেই করা হবে। ক্রিকেটাররা যেন সেটির আশেপাশেই পায়, সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে।”
ঢাকার মাঠে ঢাকা লিগ
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলা এখন নিয়মিতই হচ্ছে বিকেএসপি ও ফতুল্লায়। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে খেলা হয় কমই। আগে যেখনে দর্শকের ভিড় থাকত প্রবল, সেই ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠেও এখন আর হয় না লিগের খেলা। তাতে প্রিমিয়ার লিগ আকর্ষণ হারিয়েছে অনেকটা। দর্শক না থাকায় ক্রিকেটারদের উৎসাহেও থাকে কমতি। এটি নিয়ে ভাবছেন সিসিডিএমের নতুন চেয়ারম্যানও। ঢাকার ভেতরের মাঠগুলো কাজে লাগানোর ইচ্ছে আছে তারও।
“আমরা একটি ব্যাপার দেখেছি, গত কয়েক মৌসুমে মাঠের স্বল্পতা ছিল। প্রিমিয়ার লিগের খেলা আমরা ভালো মাঠে চালাতে চাই। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট এটি। সাধারণ বিকেএসপির দুটি মাঠ ব্যবহার করা হয় আর ফতুল্লা। আমরা চেষ্টা করব ঢাকা শহরের ভেতরে যে মাঠগুলো আছে, সেগুলো কাজে লাগাতে।”
“বিশেষ করে ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠ, বুয়েট, ঢাবি মাঠ আছে.. ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে, প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখব যেন মাঠগুলোকে আবার কাজে লাগানো যায়।”
টিভি সম্প্রচার
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মানসম্পন্ন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট মনে করা হয় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপের সঙ্গে তুলনীয় না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে এই টুর্নামেন্টেই। তবে টিভিতে সম্প্রচার না হওয়ায় সেই খেলা উপভোগ থেকে বঞ্চিত হন ক্রিকেট অনুসারীদের বেশিরভাগই।
আগেও টিভি সম্প্রচার নিয়ে কথা হয়েছে অনেক। নতুন চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুতি দিলেন নতুন করে।
“আমরা চেষ্টা করব সুপার লিগের খেলাগুলো, অন্তত ৫-৬টি খেলা সরাসরি সম্প্রচার করতে। আগেও অনেকবার আলাপ করেছি, সরাসরি সম্প্রচার না হলেও মাঠে ফিক্সড ক্যামেরা ব্যবহার করা হলে নির্বাচকদের জন্য সুবিধা হয়। খেলার মান যাচাই করা যায়। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব কিছু করতে।”
বিপিএলের বাইরে টি-টোয়েন্টি লিগ
বিপিএলের বাইরে শুধু দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের ভাবনা কিছুদিন আগে জানিয়েছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোকে নিয়ে টুর্নামেন্টর একটি মোটামুটি ছবি দাঁড় করিয়েছেন সিসিডিএম চেয়ারম্যান।
“আমাদের চিন্তা ভাবনা আছে, প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে যে দলগুলো উঠবে সেই ৬ দল, কিংবা লিগের শীর্ষ ৮ দলকে নিয়ে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ করব। ৮ দলের ভাবনাটা এসেছে মূলত প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে। দেখা যায় সুপার লিগের ৬ দল আর রেলিগেশনে থাকা ৩ দল খেলায় লড়াই করছে। সাত-আটে থাকা দলের কিছু নেই। ৮ দলকে নিয়ে হলে সাত-আটে থাকার জন্যও লড়াই হবে।”
“আমাদের চাওয়া মিরপুর স্টেডিয়ামেই এই লিগ করার। এক সপ্তাহ সময় পেলেই সম্ভব। নক আউট বা দুই গ্রুপে ভাগ করে হবে। সেটি টিভিতে সম্প্রচার হবে। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর রোমাঞ্চও বাড়বে।”
আম্পায়ারিংয়ের মান
গত কয়েক বছরে ঢাকার লিগ ক্রিকেট খবরের শিরোনাম বেশি হয়েছে আম্পায়ারিংয়ের নিম্নমানের কারণে। প্রিমিয়ার লিগে আম্পায়ারিং নিয়মিতই হচ্ছে বাজে। নিচের দিকের লিগগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। পক্ষপাত ও উদ্দেশ্যমূলক আম্পায়ারিংয়ের অভিযোগ ওঠে প্রায়ই।
আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে অভিযোগের কিছুটা মেনে নিলেন সিসিডিএম প্রধান। শোনালেন আশার কথা।
“এই বিষয়গুলো সংবাদ মাধ্যমে অনেক এসেছে। সবসময়ই একটা প্রশ্ন থেকে গেছে আম্পায়ারিং নিয়ে। আমাদের বোর্ড প্রধান অনেকবারই বলেছেন প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ থেকে শুরু করে সব লিগেই চেষ্টা থাকবে ভালো করার। এই বিষয়ে এরমধ্যেই আম্পায়ারিং কমিটির নতুন চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আম্পায়ারিংয়ের মান যেন ভালো থাকে, একটা নির্দিষ্ট মান যেন থাকে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা থাকবে।”
দর্শকপ্রিয়তা
এক সময় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচেও হাজার হাজার দর্শক মাঠে আসত। দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রচুর হয় বলে ঘরোয়া ক্রিকেটে অত দর্শক আশা করা কঠিন। তবে একেবারেই দর্শকশূন্যতা হতাশার। কাজী ইনাম সবচেয় বেশি জোর দিতে চান এই দিকে।
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনা। আমরা টি-টোয়েন্টি লিগটি যদি করতে পারি, তাহল হয়ত দর্শক আসবে। তবে মূল লক্ষ্য অবশ্যই থাকবে প্রিমিয়ার লিগ, যেটি ওয়ানডে সংস্করণে হয়। সুপার লিগে যদি মাঠে দর্শক আসে, যদি টিভিতে সম্প্রচার করতে পারি, তাহলে সবাই উৎসাহিত হবে। লিগ জনপ্রিয় হলেই কিন্তু মাঠে দর্শক আসা বাড়বে। মার্কেটিং করা বা স্পন্সর পাওয়া সুবিধা হবে। জৌলুস ফিরিয়ে আনতে পারলে শুধু লিগ নয়, ক্লাবগুলোও স্পন্সর পাবে।”
অন্যান্য লিগ
প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি অন্যান্য লিগগুলো শুরুর সম্ভাব্য সময় নিয়েও একটি ধারণা দিলেন সিসিডিএম চেয়ারম্যান।
“যেহেতু মাঠের স্বল্পতা আছে, আমাদের ইচ্ছা আছে প্রিমিয়ার লিগের খেলা শেষ করে প্রথম বিভাগ করব। প্রিমিয়ার লিগের সময়ই আমরা দ্বিতীয় বিভাগ শুরু করে দেব। দ্বিতীয় বিভাগ শেষ হলে ওই মাঠগুলোতে তৃতীয় বিভাগ হবে।”