‘হাথুরুসিংহের মনে হয়েছে, বাংলাদেশকে দেওয়ার আর কিছু নেই’

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝপথে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। সফর শেষ হওয়ার পর থেকেই তার ফেরার অপেক্ষায় ছিল বিসিবি। অবশেষে দায়িত্ব শেষের আনুষ্ঠানিকতা সারতে শনিবার ঢাকায় এসেছেন লঙ্কান এই কোচ। এ দিনই কথা হয়েছে বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে। আলোচনার বিষয়বস্তু সংবাদমাধ্যমকে জানালেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2017, 02:56 PM
Updated : 9 Dec 2017, 03:17 PM

হাথুরুসিংহের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানানোর পর তো প্রথম দেখা হলো। কি কথা হলো?

নাজমুল হাসান: অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা হয়েছে। আমাদের প্রধান নির্বাহী ছিল, জালাল ভাই ছিল, মল্লিক ছিল, খালেদ মাহমুদ ছিল। সবাই মিলে ফরমালিটিজ নিয়ে আলোচনা করেছে, যে কাগজ-পত্র ছিল, সেসব শেষ করেছে। ঠিক করেছে কোনটা কখন করব। আমার সঙ্গে ছিল একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাৎ। যেহেতু বাংলাদেশে এসেছে, সেও চাচ্ছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। প্রথমে ভাবছিলাম দেখা হবে না। পরে ভাবলাম এত দিন ছিল আমাদের সঙ্গে, একবার দেখা করাই উচিত।

পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে কিছু বলেছে?

নাজমুল: এগুলো জানতাম না, সেটা বলা ভুল হবে। সবই জানা। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু কথা বলেছে যেগুলো সে মনে করে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের করণীয়। একটা পর্যায়ে আমরা এসেছি। এর পরের ধাপে যদি যেতে চাই, তাহলে কি কি করা উচিত, কি প্রতিবন্ধকতা আছে, এগুলো দূর করা বা দেখা উচিত।

এমনও কথা হয়েছে, কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে যদি কথা ওঠে; সে বলেছে, এই ক্রিকেটারকে ১০ বছর ধরে তোমরা সাপোর্ট দিয়েছে, সেও তোমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে। কাজেই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো সুরাহা হচ্ছে না। ওর কাছ থেকে সেরাটা নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে এটা বললাম। কোথায় মানসিকতার কি সমস্যা আছে, সেটা উতরাতে পারলে সে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে কিছু বলেছে?

নাজমুল: দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের পুরো পারফরম্যান্স, খেলা, মানসিকতা, সব নিয়েই অত্যন্ত হতাশ। সে নাকি চিন্তাই করতে পারে না। বাংলাদেশ এ ধরনের খেলা খেলতে পারে, তার ভাবনাতেই ছিল না।

তার রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল এই সফর নিয়ে। দিয়েছে?

নাজমুল: এগুলো সে বলছে। অনেকগুলোই দিয়েছে। আমাদের কাছে বলেছে। আমরা দেখছি।

রিপোর্ট দেয়নি?

নাজমুল: মুখে অনেক কিছু বলেছে। রিপোর্ট দিয়েছে, আরও দিচ্ছে। এটিই তো শেষ না। আরও কয়েকদিন লাগবে। আমি বললাম, “তুমিতো ২০ তারিখে জয়েন করছ শ্রীলঙ্কায়।” সে বলল, “২০ তারিখে না। এটা হতে পারে যোগাযোগের সমস্যা। এই মাস আমি আছি। আমি জানি না। এর মাঝে তোমাদের সব, যা যা জানার আছে সব বলব। তোমরা এমন কিছু করো না যাতে ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ক্ষতি হয়। তোমাদের জানার জন্য বলছি। এগুলো সব দেশেই থাকে। এমন বড় কিছু না। তবে এগুলো দূর করতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হবে।”

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরই কি তাহলে পদত্যাগের মূল কারণ, নাকি অন্য কোনো কিছু ছিল?

নাজমুল: দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে প্রথম থেকেই তার অসন্তুষ্টি অবশ্যই ছিল। ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়েও তার সমস্যা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, এই যে সাকিব খেলবে না, সাকিব যে যাবে না, এটা সে মেনে নিতে পারেনি। সে একটু আলাদা, আমাদের মত নয়। তার কথা হলো, “কেন খেলবে না! এত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশের জন্য কেন খেলবে না!”

এ রকম আরও কিছু ব্যাপার ছিল যেগুলো নিয়ে আমাদের কথা হতে পারত, সে সময় হয়নি। একটা যোগাযোগের গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। আরও কিছু ঘটনা ঘটেছিল। সব মিলিয়ে তার মনে হয়েছে, এই দলকে আমার আর কিছু দেওয়ার নেই। যা দেওয়ার ছিল, দিয়ে ফেলেছি। আমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত।

সে ভেবেছে, আমার আর এখানে থাকার দরকার নেই। সে মনে করেছে, যেভাবে চলছে, এভাবে চললে বাংলাদেশ আর সামনে এগোবে না।

এসব শুনে আপনার কেমন লেগেছে?

নাজমুল: দেখুন, ওকে আমরা যখন কোচ করেছি, তখন সে নামকরা কোচ ছিল না। অনেকেই তার নামই শোনেনি। এটা হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সে আদর্শ হতে পারে। আমরা এটুকু বলতে পারি, সে যত দিন ছিল, বোর্ড যা যা চিন্তা করছিল, সেগুলো সে দিতে পারছিল। আমাদের সঙ্গে মিল ছিল। এজন্য তার অবদান সবসময় মনে রাখব।

আমি বিশ্বাস করি, সে অন্য জায়গায় যাচ্ছে, এটা তার ব্যাপার। এজন্য একবারও বলিনি তাকে সিদ্ধান্তে পাল্টাতে। কারণ সে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বললে তবু হতো। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যখন, মানে তার দলের প্রতি তার আর ফিলিংস নেই। যার ফিলিংস নেই, তাকে সাধতে যাব কেন?

আমরাও পেশাদার। সেভাবেই ডিল করা উচিত। সেজন্য আমরা থাকতে বলিনি তাকে একবারও। তবে কী এমন ঘটনা ঘটেছে, সেটা সে আমাকে বলেছে। সবকিছু আপনাদের বলব না এখন। আরও জানব, আর রিপোর্ট আসবে, দেখব। এমন কিছু সে বলে নাই, যাতে করে, আপনাদের ওইরকম ইন্টারেস্টিং নিউজ হবে।

সব দেশেই ক্রিকেটারদের সমস্যা আছে। সেগুলো থাকবেই। আমাদের সে অবহিত করেছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নয়। বলেছে, জেনে রাখা ভালো। আমি তাকে শুভকামনা জানিয়েছি। সেও আমাকে বলেছে যে, এখানে যে সমর্থন পেয়েছে, সেটা আগে পায়নি। ভবিষ্যতে পাবে কিনা, সেটিও নিশ্চিত নয়।

এক কথায় কি তাহলে এটা বলা যায়, দলের ওপর হতাশা থেকে পদত্যাগ করেছে?

নাজমুল: দলের ওপর হতাশা নেই। বরং অনেক প্রশংসা করেছে। কিন্তু এই দলকে সামনে নিতে গেলে কি কি বাধার সম্মুখীন সে হয়েছে এবং সামনে আমরা হব, সেগুলো সে জানিয়ে গেছে। বলেছে এগুলো আমরা সরাতে পারলে দলের জন্য ভালো। তবে সে এটাও বলেছে, এই সমস্যা সব জায়গায়ই থাকে। আহামরি এমন কিছু নয়।

খেলোয়াড়ের সঙ্গে একটা কোচের দ্বিমত থাকতে পারে, রাগ করতে পারে। এটা বড় কিছু নয়। তবে মানসিকতার ওপর জোর দিয়ে গেছে। একটা কথা বলেছে, যত বড় ক্রিকেটারই হোক না কেন, তার চেয়ে দেশ বড়। ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতে পারে একজনের সঙ্গে, এটার জন্য দেশের ক্ষতি করা যাবে না। এটা যেন প্রতিটি ক্রিকেটারের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারি, সেটা বলেছে।