গেইলের ব্যাটিং তাণ্ডবে উড়ে গেল খুলনা

মাঠের নানা প্রান্ত দিয়ে উড়ে সীমানার বাইরে পড়ছে বল। বোলাররা অসহায়। ফিল্ডাররা দর্শক। আর দর্শকেরা উত্তাল; কে রংপুরের সমর্থক, কে খুলনার, আলাদা করা কঠিন। গেইলের খুনে এক সেঞ্চুরিতে খুন হলো খুলনা টাইটানসের আশা। বিপিএলে ৮ উইকেটের জয়ে এলিমিনেটর বাধা পেরিয়ে রংপুর রাইডার্স উঠল কোয়ালিফায়ারের মঞ্চে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2017, 11:39 AM
Updated : 8 Dec 2017, 12:36 PM

শুক্রবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে খুলনার ১৬৭ রানের চ্যালেঞ্জ গেইলের ব্যাটে রংপুর উড়িয়ে দিয়েছে তুড়ি মেরে। মাশরাফি বিন মুর্তজার দল জিতেছে ২৮ বল বাকি রেখে!

এবারের আসরে নিজের প্রথম দুই ম্যাচে পঞ্চাশ ছুঁয়েই আউট হয়েছিলেন গেইল। পরে টুকটাক রান পেলেও ছিলেন না আপন চেহারায়। জ্বলে উঠলেন গ্রুপ পর্ব শেষে। এবারের বিপিএলকে উপহার দিলেন প্রথম সেঞ্চুরি। খেললেন বিপিএলের পাঁচ আসর মিলিয়ে সবচেয়ে বড় ইনিংস। গড়লেন ১৪ ছক্কার রেকর্ডও।

গেইল যেদিন ছন্দে থাকেন, তার পুরো ইনিংসটিই হয়ে যায় ‘হাইলাইটস প্যাকেজ’। এদিনও দেখালেন তেমন একটি প্যাকেজ।

রান তাড়ার শুরু থেকেই ছিলেন খুনে মেজাজে। প্রথম ওভারেই আবু জায়েদকে ছক্কায় শুরু। পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহকে দুই চার ও এক ছক্কা।

তৃতীয় ওভারে জোফ্রা আর্চার দুই উইকেট নিয়ে একটু ধাক্কা দেন রংপুরকে। ওপেনিংয়ে নামা সোহাগ গাজীকে করে দেন বোল্ড। অফ সাইডে বৃত্তের বাইরে থাকা একমাত্র ফিল্ডারের হাতে সরাসরি ক্যাচ দেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

কিন্তু ধাক্কায় নড়বড়ে হয়নি রংপুর। বরং গেইলের ব্যাটে নতুন দম। সেই আর্চারকেই পরের ওভারে মারেন দুটি চার, একটি ছক্কা। পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন ২৩ বলেই। যাতে ৪৪ রানই ছিল বাউন্ডারি থেকে। গেইল টর্নেডো চলতে থাকে এরপরও। ৪৫ বলে স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে তার ১৯তম, বিপিএলে চতুর্থ সেঞ্চুরি।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে গেইলকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। এক-দুই করে এগিয়েছেন, মাঝেমধ্যে মেরেছেন চার। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ১৪৬ রানের।

গেইল ম্যাচ শেষ করেছেন টানা দুই ছক্কায়। ৬টি চার ও ১৪ ছক্কায় ৫১ বলে অপরাজিত ১২৬। মিঠুন অপরাজিত ৩৬ বলে ৩০ রান করে।

অথচ ম্যাচের মাঝ বিরতিতে ১৬৭ রানকে মনে হচ্ছিলো বেশ চ্যালেঞ্জিং। খুলনার ব্যাটিং পরিকল্পনা ছিল পরিষ্কার। এক প্রান্ত থেকে ইনিংস টেনে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল মাইকেল ক্লিঙ্গারের। আরেক পাশে সবার ব্যাটে দ্রুত রানের তাড়া।

সেই রান বাড়ানোর তাগিদেই উইকেট বিলিয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনে নেমে মাশরাফিকে বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন আফিফ। ওই ওভারে মারেন ছক্কাও। তরুণ বাঁহাতিকে থামান মালিঙ্গা।

তবে খুলনার পরিকল্পনা বদলায়নি। মাহমুদউল্লাহ নেমেই প্রথম বলে মালিঙ্গাকে ওড়ান ছক্কায়। পরের বলে চার। পরের ওভারে নাজমুল অপুকেও টানা দুই বলে চার ও ছক্কা।

মাহমুদউল্লাহর রোমাঞ্চকর অভিযান থামে ওখানেই। আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন ৬ বলে ২০ করে।

ক্লিঙ্গার প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান দ্বাদশ ওভারে। রবি বোপারার ইয়র্কারে বোল্ড হন ওই ওভারেই। ২১ করেছেন ২৬ বলে।

ক্লিঙ্গার যা করেছেন শুরুতে, মাঝে সেই কাজটি করেন আরিফুল। এক-দুই করে এগিয়ে নেন দলকে। আরেক পাশে ঝড় তোলেন নিকোলাস পুরান ও কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।

শেষ ৫ ওভারের জন্য স্লগ ওভারের দুই স্পেশালিস্ট মালিঙ্গা ও রুবেলকে রেখেছিলেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু দুজনই ছিলেন খরুচে। শেষ ৫ ওভারে খুলনা তোলে ৫৯ রান। ২২ বলে ২৮ করেন পুরান, মাত্র ৯ বলে অপরাজিত ২৫ ব্র্র্যাথওয়েট।

ইনিংসে ৩০ ছুঁতে পারেননি একজনও। কিন্তু প্রায় সবার সম্মিলিত অবদানে খুলনা পায় লড়ার মত রান। কিন্তু যেদিন গেইল থাকেন এমন ধ্বংসাত্মক রূপে, সেদিন সবাইকে ম্লান করে দিতে পারেন তিনি একাই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৬৭/৬ (শান্ত ১৫, ক্লিঙ্গার ২৫, আফিফ ১১, মাহমুদউল্লাহ ২০, আরিফুল ২৯, পুরান ২৮, ব্র্যাথওয়েট ২৫*, আর্চার ৬*; মাশরাফি ০/২৩, সোহাগ ১/২৪, মালিঙ্গা ২/৪৯, অপু ১/২৩, রুবেল ১/৩৩, বোপারা ১/১৫)।

রংপুর রাইডার্স: ১৫.২ ওভারে ১৭১/২ (গেইল ১২৬*, সোহাগ ১, ম্যাককালাম ০, মিঠুন ৩০*; আবু জায়েদ ০/২৩, মাহমুদউল্লাহ ০/৩০, আর্চার ২/৩০, ইরফান ০/২৫, ব্র্যাথওয়েট ০/৩০, আফিফ ০/২১,শান্ত ০/১২)

ফল: রংপুর রাইডার্স ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রিস গেইল