বিপিএলে শনিবার রাতের ম্যাচে রাজশাহী কিংসকে ৯৯ রানে হারিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। মিরপুরে ঢাকার ২০৫ রান তাড়ায় রাজশাহী গুটিয়ে যায় ১০৬ রানে।
এই জয়ে ১১ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে নিশ্চিত হলো ঢাকার শেষ চারে থাকা।
দিনের প্রথম ম্যাচে মন্থর ও অসমান বাউন্সের উইকেটে ধুঁকেছিল রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটসম্যানরা। সেই একই উইকেটে রাতে রানের ফোয়ারা ছোটাল ঢাকা। রাতে কুয়াশা ও শিশিরে কৃত্রিম আলোর নিচে ব্যাটিংয়ের জন্য একটু ভালো হয়ে যায় উইকেট। বল ব্যাটে এসেছে একটু ভালোভাবে। রাজশাহীর এক গাদা ক্যাচ মিসের সুযোগে নারাইনের টর্নেডো ইনিংসও বড় স্কোরের বড় কারণ।
রাজশাহী খেলতে নেমেছিল নিয়মিত অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিকে ছাড়া। পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে গেছেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
তবে রাজশাহীর বোলারদের শুরুটা মন্দ ছিল না। উইকেট না এলেও প্রথম ৩ ওভারে ঢাকার রান ছিল ১২। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে নারাইন লং অন দিয়ে ছক্কা মারলেন মুস্তাফিজকে। পরের বল থেকে রাজশাহীর ক্যাচ মিসের মহড়া শুরু। নারাইনের তাণ্ডবও চালু। ম্যাচের চিত্র পাল্টালো দ্রুত।
নারাইন প্রথমবার বাঁচলেন ৮ রানে। মুস্তাফিজের বলে কাভারে সহজ ক্যাচ ছাড়লেন মুমিনুল। ১১ রানে কাজি অনিকের বলে ছাড়লেন উসামা মির। সেটির খেসারত সবচেয়ে বেশি দিতে হলো পাকিস্তানি এই লেগ স্পিনারকেই। পরের তিনবারই দুর্ভাগা বোলার মির।
২৪ রানে ছাড়লেন সামিত প্যাটেল, ৪৮ রানে ক্যাচ নিতে পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। মাঝে ৩৫ রানে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন জাকির।
৫ বার জীবন পেয়ে নারাইন ফিফটি করেন ২৯ বলে। এবারের বিপিএলে তার দ্বিতীয় ফিফটি।
আরেকপাশে জো ডেনলি ঝড় না তুললেও রান তুলেছেন বল প্রতি। দুজনে মিলে গড়লেন এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় জুটি।
১২৯ রানের জুটি ভেঙেছে নারাইনের বিদায়েই। মিরাজের নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৩৪ বলে ৬৯ রানের ইনিংসে ৪টি চার, ৬টি ছয়।
আগের দুই ম্যাচে ৪৪ ও ৪৯ রানের পর এবার ফিফটি করতে পেরেছেন ডেনলি। ৫৩ করেছেন ৫৪ বলে।
শেষের দাবি মিটিয়েছেন কাইরন পোলার্ড। চারটি বিশাল ছক্কায় ১৩ বলে করছেন ৩৩। শহিদ আফ্রিদি করেছেন ৭ বলে ১৪। শেষ ওভারে সাকিবের চার ও ছক্কায় দুইশ ছাড়িয়ে যায় ঢাকার রান।
ঢাকার বোলিংয়ের বিপক্ষে এই রান তাড়া করতে হলে রাজশাহীকে করতে হতো অভাবনীয় কিছু। সেটি হতে দেননি সাকিব। রান তাড়ার শুরু থেকেই ধুঁকেছে রাজশাহী।
ইনিংসের প্রথম ওভারে মোসাদ্দেক দিয়েছিলেন ১ রান। দ্বিতীয় ওভারে মেডেনসহ সাকিব নেন দুই উইকেট। দারুণ দুটি ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন লেন্ডল সিমন্স ও লুক রাইটকে।
রাজশাহীর লড়াইটা তখন থেকেই ছিল ব্যবধান কমানোর। মুশফিককেও শূন্য রানে ফেরান সাকিব। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তুলে নেন ভালো খেলতে থাকা সামিত প্যাটেলকে। রাজশাহী কোনো রকমে ছাড়ায় একশ।
বিপিএলে প্রথম বোলার হিসেবে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেটের হাতছানি থাকলেও পারেননি সাকিব। তবে ঢাকা অধিনায়কের বোলিং ফিগার দুর্দান্ত, ৪-১-৮-৪।
বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে শেষ চারের তিন দল নিশ্চিত হয় গেল। দিনের প্রথম ম্যাচ জিতে সেরা দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষ চার নিশ্চিত করেছে খুলনা টাইটানসও। ঢাকার লড়াই এবার সেরা দুইয়ে থাকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ২০৫/৫ (ডেনলি ৫৩, নারাইন ৬৯, ডেলপোর্ট ০, পোলার্ড ৩৩, আফ্রিদ ১৪, সাকিব ১৩*, জহুরুল ০*; সামি ১/২৯, মুস্তাফিজ ০/২২, অনিক ২/৫২, মিরাজ ১/২০, মির ০/৩৮, সামিত ১/২৪)।
রাজশাহী কিংস: ১৮.৩ ওভারে ১০৬ (সিমন্স ১, মুমিনুল ১৯, রাইট ০, মুশফিক ০, জকির ৭, সামিত ২৮, মির ১০, মিরাজ ১৬, অনিক ৭*, সামি ১, মুস্তাফিজ ৭; মোসাদ্দেক ২/৯, সাকিব ৪/৮, নারাইন ০/১১, পোলার্ড ১/১৯, আফ্রিদি ১/৩৭, আবু হায়দার ০/১৮, সাদ্দাম ২/৩)
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৯৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সুনিল নারাইন