স্যামি ঝড়ে রাজশাহীর প্রতিশোধ

টর্নেডো ইনিংসে ব্যবধান গড়ে দিলেন ড্যারেন স্যামি। মুস্তাফিজুর রহমানের ফেরার ম্যাচ জয় দিয়ে রাঙাল রাজশাহী কিংস। তামিম ইকবালের ফিফটির পরও ভুলতে বসা হারের স্বাদ পেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2017, 10:54 AM
Updated : 25 Nov 2017, 11:15 AM

প্রথম দেখায় ৯ উইকেটে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল রাজশাহী। চট্টগ্রামে শনিবারের প্রথম ম্যাচে ৩০ রানে জিতে উঠে এল পয়েন্ট টেবিলের তলানি থেকে। আট ম্যাচে গতবারের রানার্সআপদের পয়েন্ট ৬।

হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর টানা পাঁচ জয় পেয়েছিল কুমিল্লা। ৭ ম্যাচের দুটিতে হারা দলটি ১০ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুই নম্বরে।

রাজশাহীর ১৮৫ রান করতে নেমে ৫ বল বাকি থাকতে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় কুমিল্লা।

ব্যাটসম্যানরা ভালো শুরু নষ্ট করায় দেড়শ রানের আশেপাশে থামার শঙ্কায় পড়েছিল রাজশাহী। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়ার কৃতিত্ব স্যামির। ইনিংসে শেষ ওভারে ৩২ রান নিয়ে গড়ে দেন পার্থক্য।

তামিমের ব্যাটে জয়ের আশা জাগিয়েছিল কুমিল্লা। এক ওভারে তিন উইকেট নিয়ে তাদের আগেভাগেই থামানোয় বড় অবদান রাখেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ সামি।

বড় রান তাড়ায় শুরুতে চাপে পড়ে কুমিল্লা। প্রথম ওভারে ফখর জামানকে বোল্ড করে দেন সামি। মেহেদী হাসান মিরাজের পরের ওভারে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন ইমরুল কায়েস।

শোয়েব মালিকের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটিতে দলকে লড়াইয়ে ফেরান তামিম। জুটিতে অগ্রণী ছিলেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার মালিক (২৬ বলে ৪৫)। তাকে ফিরিয়ে বড় একটা ধাক্কা দেন ডোয়াইন স্মিথ।

চলতি আসরে প্রথম পঞ্চাশ ছুঁয়ে তামিম আউট হন ৬৩ রান করে। অধিনায়কের ৪৫ বলের ইনিংসে ৪টি চারের পাশে ছক্কা তিনটি। সামির সেই ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান লিটন দাসের জায়গায় দলে ফেরা অলক কাপালী ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

৩ উইকেটে ১২৫ রানের দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড়ানো কুমিল্লা ৩০ রান তুলতেই হারায় শেষ ৭ উইকেট।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চোট পাওয়ার পর থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন মুস্তাফিজ। চার হাঁকিয়ে বাঁহাতি পেসারকে স্বাগত জানান তামিম। নিজের প্রথম ম্যাচে ৩.১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন মুস্তাফিজ।

রাজশাহীর সেরা বোলার ছিলেন সামি। পাকিস্তানের এই পেসার ৯ রান দিয়ে নেন চার উইকেট।       

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মুমিনুল হক ও স্মিথের ৪৩ রানের জুটিতে ভালো শুরু পায় রাজশাহী। ষষ্ঠ ওভারে স্মিথকে বোল্ড করে ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন সাইফ। পরের ওভারে রান আউট ফিরেন ৫টি চারে ২৩ রান করা মুমিনুল।

একটি করে ছক্কা-চারে ২০ রান ফিরে যান জাকির হাসান। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। লম্বা সময় উইকেটে থেকেও ঝড় তুলতে পারেননি চোট কাটিয়ে ফেরা লুক রাইট। ৩৬ বলে চারটি চারে ফিরেন ৪২ রান করে।

১৭ ওভার শেষে রাজশাহীর স্কোর ছিল ১২৯। সেখান থেকে দলকে ১৮৫ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব স্যামির। চোট পাওয়ায় এবারের আসরে বল করতে পারছেন না ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। দলের প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠছিল না তার ব্যাট। এবার খেললেন নিজের মতো করে, তাতে রাজশাহী পেল লড়াইয়ের পুঁজি।

শেষ ৩ ওভারে ৫৬ রান সংগ্রহ করে দলটি। তার ৪৭ রানই আসে স্যামির ব্যাট থেকে। তার ১৪ বলের অধিনায়কোচিত ইনিংসে ৬টি ছক্কার পাশে চার একটি।

শুরুতে আঁটসাঁট বোলিং করা সাইফের ওপর দিয়ে শেষটায় ঝড় বয়ে যায়। প্রথম দুই ওভারে ৬ রান দেওয়া অলরাউন্ডার তৃতীয় ওভারে দেন ১২ রান। তার চতুর্থ ও ইনিংসের শেষ ওভার থেকে আসে ৩২ রান। বিপিএলের ইতিহাসে এটাই কোনো ওভারে সর্বোচ্চ রান।

২০১৩ সালে নাজমুল মিলনের ওভার থেকে চারটি ছক্কায় ২৯ রান নিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। এত দিন সেটাই বিপিএলে এক ওভারে সর্বোচ্চ।    

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৮৫/৭ (স্মিথ ১৯, মুমিনুল ২৩, রাইট ৪২, জাকির ২০, মুশফিক ৮, ফ্র্যাঙ্কলিন ১৪, স্যামি ৪৭*, মিরাজ ০, সামি ৫*; আল আমিন ১/৩২, মেহেদি ০/১৮, সাইফ ৩/৫০, রশিদ ০/২৬, কাপালী ০/১৩, মালিক ০/৪)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.১ ওভারে ১৫৫ (তামিম ৬৩, ফখর ২, ইমরুল ০, মালিক ৪৫, বাটলার ১৫, কাপালী ৯, সাইফ ০, হাসান ১৬, রশিদ ৬, মেহেদি ৫, আল আমিন ১; সামি ৪/৯, মিরাজ ১/২৬, হোসেন ০/৩০, মুস্তাফিজ ২/৩২, ফ্র্যাঙ্কলিন ১/৩১, স্মিথ ২/২৭)

ফল: রাজশাহী কিংস ৩০ রানে জয়ী।