হাসানের তোপের পর মালিকের পঞ্চাশে কুমিল্লার জয়

হাসান আলির দুর্দান্ত বোলিং দেখিয়ে দিয়েছিল তীরের ঠিকানা। অভিজ্ঞতার তরী বেয়ে সেই ঠিকানায় দলকে নোঙর করালেন শোয়েব মালিক। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে পথটা কঠিন করে দিয়েছিলেন সুনিল নারাইন। কিন্তু দুই পাকিস্তানির দারুণ পারফরম্যান্সে শেষ পর্যন্ত জিতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2017, 11:14 AM
Updated : 20 Nov 2017, 11:45 AM

বিপিএলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দলের লড়াইয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। উঠে গেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।

শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ঢাকার ১২৮ রান তাড়ায় কুমিল্লা জিতেছে ২ বল বাকি রেখে।

হার দিয়ে যাত্রা শুরুর পর সপ্তম ম্যাচে ঢাকা পেল দ্বিতীয় হারের স্বাদ। ছয় ম্যাচে পঞ্চম জয়ে শীর্ষে কুমিল্লা।

তারকায় ঠাসা ঢাকা দলে এদিন জ্বলেছে কেবল একটি তারাই। ব্যাট হাতে ৪৫ বলে ৭৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পর বোলিংয়ে সুনিল নারাইন নিয়েছেন ১৭ রানে ২ উইকেট। কিন্তু হাসান-মালিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে পেরে ওঠেনি ঢাকা।

এবারের বিপিএলে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট শিকার করেছেন হাসান আলি। ঠাণ্ডা মাথায় ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে কুমিল্লার শেষের বৈতরণী পার করেছেন মালিক।

লক্ষ্য খুব বেশি না হলেও কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ দিকে জমে উঠেছিল ম্যাচ। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। তবে নারাইন ছাড়া ঢাকার মূল বোলারদের ওভার তখন শেষ। শেষ পর্যন্ত সেটিই গড়ে দিয়েছে পার্থক্য।

শেষের চাপটা নিতে পারেননি তরুণ পেসার সাদ্দাম। ১৮তম ওভারে তার স্লোয়ারে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন মালিক। ওভার থেকে আসে ১২ রান। শেষের আগের ওভারে নারাইন দেন মাত্র ৫ রান।

শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। প্রথম তিন বলেই দুটি বাউন্ডারি আসে মালিকের ব্যাটে। চতুর্থ বলে জয়।

কুমিল্লার রান তাড়ার শুরুটা ছিল দারুণ। এবারের বিপিএলে প্রথম খেলতে নামা মোহাম্মদ আমিরকে প্রথম দুই বলেই বাউন্ডারিতে স্বাগত জানান তামিম ইকবাল। ওয়াইড বলে বাই চারসহ প্রথম ওভার থেকেই এস ১৬ রান।

পরের ওভারেই লিটন দাসের উল্টো যাত্রা। আবু হায়দারকে অহেতুক জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড।

নারাইনের প্রথম বলেই বেরিয়ে এসে ছক্কা মারেন তামিম। কিন্তু পরের বলে পুনরাবৃত্তির চেষ্টায় স্টাম্পড।

এরপর ইমরুল কায়েস থিতু হয়ে ছুঁড়ে আসেন উইকেট। এবার প্রথম খেলতে নামা ড্যারেন ব্রাভো ও বড় ভরসা জস বাটলার শেষ করতে পারেননি কাজ। এক ওভারে বাটলার ও সাইফ উদ্দিনকে ফিরিয়ে কুমিল্লাকে চাপে ফেলে দেন আমির।

কিন্তু টলানো যায়নি মালিককে। ৫৩ বলে অপারাজিত ৫৪ রানের সময়োচিত ইনিংস খেলে মালিক জিতিয়েছেন দলকে।

শেষের মত ম্যাচের শুরুটাও ছিল নাটকীয়। আগের ম্যাচে নিজের প্রথম ৩ ওভারে ৪ রান দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান। এবার প্রথম বলেই দেন ৪ রান। এই অফ স্পিনারকে বাউন্ডারিতে শুরু করেন নারাইন।

মেহেদি উইকেট পেতে পারতেন এই ওভারেই। পঞ্চম বলে স্লগ সুইপ করে এভিন লুইস। সীমানায় হাসান আলির হাতের ফাঁক গলে সেটি হয়ে যায় ছক্কা।

হাসান প্রায়শ্চিত্ত করেই খানিক পরই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার আর নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন লুইসকে। এক বল পরই আরেকটি উইকেট। এবার হাসানের আরেকটি ফুল লেংথ বল ফ্লিক করতে গিয়ে বোল্ড একাদশে ফেরা মেহেদি মারুফ।

জোড়া ধাক্কা অবশ্য নারাইনকে টালমাটাল করতে পারেনি এতটুকুও। সেই হাসানকেই পরের ওভারে দুই চারের মাঝে ছক্কায় ওড়ান মাথার ওপর দিয়ে। কুমিল্লার মূল অস্ত্র রশিদ খানকেও প্রথম ওভারে উড়িয়ে ফেলেন সীমানার ওপারে।

নারাইনের প্রতিআক্রমণে সরে যায় চাপ। এলোমেলো হয়ে যায় কুমিল্লার পরিকল্পনাও। এক পাশে নারাইনের ব্যাটে রানের উত্তাল স্রোত, আরেক পাশে কুমার সাঙ্গাকারার ব্যাটে শান্ত স্রোত ধারা। দুজনের জুটি দারুণভাবে এগিয়ে নেয় দলকে।

৩০ বলে নারাইন স্পর্শ করেন তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ফিফটি। দল পেরিয়ে যায় শতরান। দুজনের জমাট এই জুটি ভাঙে রান আউটে।

দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন সাঙ্গাকারা। ৩০ বলে সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক করেছেন ২৮ রান। নারাইনের সঙ্গে জুটি ছিল ৬৮ বলে ৯২ রানের। এই উইকেট দিয়েই শুরু ঢাকার ধসের।

৫ ছক্কায় ৪৫ বলে ৭৬ করা নারাইন সাইফ উদ্দিনের বলে ক্যাচ দেন তামিমকে। আগের দুই ম্যাচে ঝড় তোলা কাইরন পোলার্ড কাটা পড়েন রান আউটে। সাইফের বলেই দৃষ্টিকটু এক শটে বোল্ড সাকিব। আর শেষে হাসান আলির তোপ!

দ্বিতীয় স্পেলে ৯ বলে মাত্র ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন হাসান। এবারের বিপিএলে প্রথম বোলার হিসেবে শিকার করেন ৫ উইকেট। হাসানের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেও যেটি প্রথম।

৩৪ বলের মধ্যে মাত্র ২৪ রানে ঢাকা হারায় শেষ ৮ উইকেট। তবে ১২৮ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই হলো। খেলা জমল। ছড়াল উত্তেজনাও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৮.৩ ওভারে ১২৮ (নারাইন ৭৬, লুইস ৭, মারুফ ০, সাঙ্গাকারা ২৮, পোলার্ড ১, সাকিব ৩, মোসাদ্দেক ১, জহুরুল ২, সাদ্দাম ১, আমির ৬*, আবু হায়দার ০; মেহেদি ০/৩৩, হাসান ৫/২০, রশিদ ১/১৭, মালিক ০/১৬, সাইফ উদ্দিন ২/২৯, আল আমিন ০/১২)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.৪ ওভারে ১২৯/৬( তামিম ১৮, লিটন ০, ইমরুল ২০, মালিক ৫৪*, ড্যারেন ব্রাভো ১২, বাটলার ১১, সাইফ উদ্দিন ৪, মেহেদি ৩*; আমির ২/২৮, আবু হায়দার ১/২৫, নারাইন ২/১৭, সাকিব ০/২৩, সাদ্দাম ১/৩৬)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: হাসান আলি