মেহেদি, রশিদের স্পিনে কুমিল্লার জয়

ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে নিয়ে ছিল তুমুল আগ্রহ। জয়ে ফিরতে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল রংপুর রাইডার্স। কিন্তু জ্বলে উঠতে পারলেন না টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুই তারকা। তাদের ছাপিয়ে নায়ক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দুই স্পিনার মেহেদি হাসান ও রশিদ খান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2017, 04:05 PM
Updated : 19 Nov 2017, 02:10 PM

দুই তরুণের স্পিনে দারুণ জয় পেয়েছে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪ রানে জিতেছে তামিম ইকবালের দল। হার দিয়ে শুরু করা কুমিল্লার পাঁচ ম্যাচে এটি টানা চতুর্থ জয়।

কুমিল্লার ১৫৪ রান তাড়ায় রংপুর করেছে ১৩৯ রান। জয় দিয়ে বিপিএল শুরু করা মাশরাফি বিন মুর্তজার দল চার ম্যাচে টানা তৃতীয় পরাজয়ের স্বাদ পেল।  

দুই বিস্ফোরক ওপেনার গেইল, ম্যাককালাম সমৃদ্ধ রংপুরের জন্য লক্ষ্যটা খুব কঠিন ছিল না। তবে শুরুর ব্যাটিং ব্যর্থতা ম্যাচে পিছিয়ে দেয় তাদের। সেখান থেকে আর জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি দলটি।

রংপুরের রান তাড়ার শুরুটা ঘটনাবহুল। প্রথম বলেই আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বেঁচে যাওয়া ক্রিস গেইল শেষ পর্যন্ত ফিরেন আরেক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। মাঝে একবার বেঁচে যান লিটন দাসের ব্যর্থতায়।

জীবন পেয়ে হাসান আলিকে টানা তিনটি চার হাঁকান গেইল। নড়বড়ে শুরুর পর ফিরছিলেন স্বরূপে। কিন্তু রশিদ খানের বলে লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলে বিদায় এলবিডব্লিউ হয়ে।  

রংপুরের ছোটখাটো ধসের শুরু ওই উইকেট দিয়ে। এক রানের মধ্যে গেইলসহ চার উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি।

এক বল বিরতিতে কুসল পেরেরাকে তুলে নেন আফগান লেগ স্পিনার রশিদ। পরের ওভারে তিন বলের মধ্যে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও শাহরিয়ার নাফীসকে তুলে নেন মেহেদি।

গত মৌসুমে দুটি ম্যাচ খেলা মেহেদি মাত্র ৬ বল করে ১৩ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। এবার আল আমিনকে ছক্কা-চার হাঁকানো ম্যাককালামকে দিয়ে শুরু হল তার উইকেট শিকার। এক বল পর বোল্ড হয়ে ফিরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার।

বিনা উইকেটে ৩১ থেকে খুলনার স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৩২।

মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে রবি বোপারার ৬৭ রানের জুটিতে ম্যাচে টিকে থাকে রংপুর। তবে রানের দাবি যখন বাড়ছে, গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ফিরেন মিঠুন। এরপর চেষ্টা করেছিলেন মাশরাফি। একটি করে ছক্কা চারে ১৭ রান করে ফিরেন রান আউট হয়ে।

শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন বোপারা। দেড়শ ছাড়ানো স্কোর তাড়ার সময়ে তার ব্যাটিং ছিল দৃষ্টিকটু। বোলিংয়ের ওপর খুব একটা চড়াও হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়নি তাকে।

এমনিতে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হলেও মেহেদি সফল বোলিংয়ে। ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন দুটি উইকেট। রশিদ ২ রান নিতে খরচ করেছেন ১৯ রান।

অফ স্পিনার সোহাগ গাজী ভোগায় তামিমকে। তবে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাবলীল ছিলেন পেসের বিপক্ষে। মাশরাফির প্রথম তিন বলে তুলে নেন দুটি চার। রুবেল হোসেনকে প্রথম দুই বলেই মারেন বাউন্ডারি।

তবে শেষ হাসি হাসেন রুবেলই। তার সেই ওভারেই পুল করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তামিম।

পরপর দুই ওভারে মাশরাফি ফিরিয়ে দেন লিটন ও জস বাটলারকে। ওপেনার লিটন বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে হন বোল্ড। আড়াআড়ি খেলার চেষ্টা করে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায়ে নেন বাটলার।

নবম ওভারে ৫৫ রানে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়া কুমিল্লাকে পথ দেখান ইমরুল কায়েস-মারলন স্যামুয়েলস। দুই জনের ৪৫ রানের জুটিতে তিন অঙ্কে যায় দলের সংগ্রহ। ৩২ বলে ৪৭ রান করা ইমরুলকে বোল্ড করে ফেরান থিসারা পেরেরা।

সুবিধা করতে পারেননি শোয়েব মালিক। রান আউট হয়ে ফিরেন দুই অঙ্কে যাওয়ার আগেই। স্যামুয়েলকে ঝড় তুলতে দেননি রংপুরের বোলাররা। ক্যারিবিয়ান তারকা ৪১ রান করতে খেলেন ৩৪ বল।

শেষটায় রুবেল হোসেনকে একটি করে ছক্কা-চার হাঁকিয়ে দলের সংগ্রহ দেড়শ পার করেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

দুটি করে উইকেট নেন মাশরাফি ও থিসারা। উইকেট না পেলেও আঁটসাঁট বোলিং করেন সোহাগ।

৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে উঠে এসেছে কুমিল্লা। চার ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচেই থাকল রংপুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৫৩/৬ (তামিম ২১, লিটন ১১, ইমরুল ৪৭, বাটলার ১, স্যামুয়েলস ৪১, মালিক ৯, সাইফ ১৬*, হাসান ২*; সোহাগ ০/২৪, মাশরাফি ২/২২, রুবেল ১/৪৫, নাজমুল ০/২৪, বোপারা ০/৮, থিসারা ২/২৬)

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৩৯/৭ (ম্যাককালাম ১৩, গেইল ১৭, কুসল ০, শাহরিয়ার ০, মিঠুন ৩১, বোপারা ৪৮*, মাশরাফি ১৭, থিসারা ১, সোহাগ ০*; মেহেদি ২/১৫, আল আমিন ১/৩৩, হাসান ১/৩৯, রশিদ ২/১৯, সাইফ ০/৩০)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১৪ রানে জয়ী