লুইস-পোলার্ডের ঝড়ের পর বোলিংয়ে দুর্দান্ত আফ্রিদি

শুরুতে এভিন লুইসের ঝড়, শেষে কাইরন পোলার্ডের টর্নেডো। দুইশ ছাড়ানো পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ের শুরু ও শেষে আবু হায়দারের ছোবল। মাঝে শহিদ আফ্রিদির দুর্দান্ত বোলিং। রাজশাহী কিংসকে উড়িয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস পেল আরও একটি দারুণ জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2017, 10:46 AM
Updated : 18 Nov 2017, 01:11 PM

শনিবারের প্রথম ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের ৬৮ রানের জয় এবারের বিপিএলে রানের হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়।

প্রথম ম্যাচ হারার পর টানা ৫ ম্যাচে অপরাজিত ঢাকা। জিতেছে চারটিতে, বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত একটি। ছয় ম্যাচে রাজশাহীর এটি চতুর্থ হার।

শনিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ঢাকা তুলে ২০১ রান। রাজশাহী করতে পারেনি সামান্য লড়াইও, গুটিয়ে গেছে ১৩৩ রানে।

শুরু আর শেষে ঝড়ো ফিফটি করেছেন ঢাকার লুইস ও পোলার্ড। আফ্রিদি নিয়েছেন ৪ উইকেট। তিন বিদেশির দাপুটে পারফরম্যান্সের পাশে ৩ উইকেট নিয়ে উজ্জ্বল আবু হায়দার। রাজশাহী ছিল অসহায়।

বেশ কজন ক্রিকেটারের চোটে জর্জ রাজশাহী এদিন একাদশে রেখেছিল মাত্র তিনজন বিদেশি। কিন্তু দল নির্বাচনে সাহসিকতা থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে ছিল না সেটির ছিটেফোঁটা।

টস জিতে বোলিং নেওয়া রাজশাহী শুরু করেছিল হাবিবুর রহমানের অফ স্পিন দিয়ে। এভিন লুইস ব্যাটে শান দিয়ে ফেলেন প্রথম ওভারেই দুটি বাউন্ডারিতে। ধারালো সেই ব্যাটে পরে কচুকাটা করেছেন বাকি বোলারদের।

দ্বিতীয় ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে মারেন দুই চারের মাঝে একটি ছক্কা। প্রথম দুই ওভারে মাত্র একটি বল খেলা আফ্রিদির ব্যাটে তৃতীয় ওভারে তিন চার। চতুর্থ ওভারে আবারও লুইস; এবার গতিময় তরুণ পেসার হোসেন আলিকে তিন বাউন্ডারি। চতুর্থ ওভারেই দলের পঞ্চাশ পার।

আফ্রিদিকে বেশি দূর যেতে দেননি মিরাজ। বোল্ড করে দেন পঞ্চম ওভারেই। তিনে নেমে জহুরুল ইসলাম শুরু করেছিলেন ছক্কা-চারে। কিন্তু লেগ ব্রেক অ্যাকশনে করা দারুণ ডেলিভারিতে তাকেও বোল্ড করে দেন মিরাজ।

লুইস তার মতোই খেলে গেছেন শট। থামানো যায়নি ফিফটির আগে। তবে আউটও হয়েছেন তার মতো করেই। হোসেন আলির অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে ক্যাচ দিয়েছেন মিড উইকেটে। ততক্ষণে করে ফেলেছেন নিজের কাজ। ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৪।

১০ ওভারে ৩ উইকেটে ঢাকার রান ছিল ৯৯। পরের ৫ ওভারে খানিকটা রাশ টেনে ধরে রাজশাহীর বোলাররা। দুইবার জীবন পেয়েও নাদিফ চৌধুরী ফেরেন ৬ রানে। অল্পতে ফেরেন সাকিব। ওই ৫ ওভারে রান আসে মোটে ৩১।

ঢাকা তখন তাকিয়ে পোলার্ডের ব্যাটে। সাতে নেমে দলকে নিরাশ করেননি বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে বল ফেলারই জায়গা দেননি বোলারদের। চালিয়েছেন ব্যাটিং তাণ্ডব।

জীবনও অবশ্য পেয়েছেন ১৮ রানে। ক্যাচ ছেড়েছেন মুমিনুল হক। সেটির চড়া মূল্য দিতে হয়েছে রাজশাহীকে।

আগের ম্যাচে ৬ ছক্কায় ২৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংসে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাচের মোড়। এবার ২৫ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংসে গড়ে দিয়েছেন দলের জয়ের ভিত। তিন ছক্কায় স্পর্শ করেছেন টি-টোয়েন্টিতে ৫০০ ছক্কা, যে কীর্তি আগে ছিল কেবল ক্রিস গেইলের।

পোলার্ডের সৌজন্যে শেষ ৫ ওভারে ঢাকা তুলেছে ৭১ রান। এবারের আসরে দ্বিতীয়বারের মত ছাড়িয়েছে তারা দুইশ।

ঢাকার বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে এই বিশাল রান তাড়ার শক্তি এমনিতেই রাজশাহীর ছিল না। নিজেদের ছাড়িয়ে তারা পারেনি অভাবিত কিছু করতে।

প্রথম ওভারেই রনি তালুকদারকে ফিরিয়ে দেন আবু হায়দার। বাঁহাতি পেসার পরে ফেরান তিনে নামা সামিত প্যাটেলকেও।

আগের ম্যাচের নায়ক জাকির হাসান এদিনও ঝড়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৩ বলে ৩৬ করে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন আফ্রিদিকে। পাকিস্তানি লেগ স্পিনারকে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন মুমিনুল-মুশফিকরাও।

পরে মিরাজকে বোল্ড করে আফ্রিদি পূর্ণ করেছেন টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থবার চার উইকেট। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট।

শেষ দিকে তেমন কিছু করতে পারেননি জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন ও ড্যারেন স্যামিও। শুরুর মত শেষটাও হয়েছে আবু হায়দারের বোলিংয়ে। ১০ বল আগেই শেষ ইনিংস।

৬ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান সংহত হলো ঢাকার। সমান ম্যাচে রাজশাহীর পয়েন্ট ৪।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ২০১/৭ (লুইস ৬৪, আফ্রিদি ১৫, জহুরুল ১৩, নাদিফ ৬, সাঙ্গাকারা ২৮, সাকিব ১১, পোলার্ড ৫২*, নারাইন ০; হাবিবুর ১/৪৩, মিরাজ ২/৩১, ফরহাদ ০/৪০, হোসেন ৩/৩৮, ফ্রাঙ্কলিন ০/২৯, সামিত ১/১৮)।

রাজশাহী কিংস: ১৮.২ ওভারে ১৩৩ (মুমিনুল ১৬, রনি ০, সামিত ৬, জাকির ৩৬, মুশফিক ২, ফ্রাঙ্কলিন ৯, স্যামি ১৯, মিরাজ ১০, ফরহাদ ৬, হাবিবুর ১*, হোসেন ১; আবু হায়দার ৩/১১, সাকিব ২/২২, নারাইন ০/৩২, মোসাদ্দেক ০/১৮, আফ্রিদি ৪/২৬, সাদ্দাম ১/১৯)

ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৬৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: এভিন লুইস