‘কখনও কল্পনা করিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দেব’

দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র অধিনায়ক। সীমিত সামর্থ্যের প্রায় পুরোটা কাজে লাগানো পরিশ্রমী ক্রিকেটার। দারুণ প্রাণবন্ত ও আমুদে এক চরিত্র। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন। ড্যারেন স্যামি বিপিএল খেলছেন তৃতীয়বারের মত। টানা দ্বিতীয়বার রাজশাহী কিংসের কাণ্ডারি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার কথা বললেন তার ক্রিকেট, জীবন দর্শন, বোধ ও ভাবনা নিয়ে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2017, 04:53 AM
Updated : 9 Nov 2017, 05:04 AM

আপনাকে নিয়ে সবাই যে কথা সবার আগে বলে থাকেন, সেটি দিয়েই শুরু করি। আপনি সবসময়ই মজাপ্রিয়, আমুদে এক চরিত্র। এতটা হাসি খুশি থাকতে পারার রহস্য কি?

স্যামি: রহস্য নেই বলেই তো এত হাসিখুশি…(হাহাহাহা)। আসলে ক্যারিবিয়ানের জীবন দর্শনই আমুদে। আমার ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যাপার ছিল যে বেড়ে উঠেছি হইচইয়ের মধ্যে। আমার মা তার ১৫ ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। অনেক অনেক খালাতো-মামাতো ভাই-বোনের সঙ্গে একত্রে বেড়ে উঠেছি। সব সময়ই মজা করতাম আমরা।

যে এলাকায় আমি বেড়ে উঠেছি, সেটিও ছিল দারুণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আম-কলা-আনারনের বাগান, অবারিত প্রান্তর। ঘুম থেকে উঠে আমাদের কাজই ছিল ছুটোছুটি করা, ঘুরে বেড়ানো, নদীতে সাঁতার কাটা, সৈকতে ক্রিকেট আর মার্বেল খেলা। আমি বেড়ে উঠেছি তুমুল আমুদে পরিবারে। তাই এরকম না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তবু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেশাদারিত্বের খোলসে নিজেকে আবদ্ধ রাখেন অনেকে। হয়ত ড্রেসিং রুম বা মাঠের বাইরে হইচই করে। কিন্তু আপনার মত প্রকাশ্যে ততটা নয়!

স্যামি: আমি জটিল করে ভাবিই না। আমার ভাবনা সাধারণ, জীবনকে উপভোগ করা। সেটা মাঠের ভেতরে হোক বা বাইরে। মাঠের ভেতরে ক্রিকেটটা হয় সিরিয়াস, কিন্তু আমি সেটিও উপভোগ করি। শক্তি ও উৎসাহ পাই গ্যালারির দর্শক, সমর্থকদের কাছ থেকে। ক্রিকেটকে আমি জীবন থেকে আলাদা করি না। দুটোরই অপর নাম উপভোগ করা।

ছবির মত সুন্দর ক্যারিবিয়ানের অনেক জায়গাই কিছুদিন আগে লন্ডভণ্ড হয়েছে হারিকেনে। দুর্গতদের সাহায্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি চ্যারিটি ম্যাচ খেলেছেন আপনারা। উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন আপনি। ভাবনাটা কিভাবে এলো?

স্যামি: হারিকেনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপগুলোর একটি ছিল ডমিনিকা। আমাদের অনেকের কাছে ডমিনিকা দ্বিতীয় বাড়ির মত। শেন শিলিংফোর্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা অফ স্পিনার), লিয়াম সেবাস্টিয়ান (ডমিনিকান ক্রিকেটার), এরকম অনেকে ক্রিকেটার থাকে ওখানে। আমার মনে আছে, হারিকেনের ৫ দিন পর্যন্তও শিলিংফোর্ডকে টেক্সট পাঠিয়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু উত্তর আসছিল না। কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। সৌভাগ্যের ব্যাপার যে পরে সুস্থভাবে উদ্ধার করা গেছে।

এরপর আমরা ভাবছিলাম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য কিছু করা দরকার। কারণ ক্রিকেটই গোটা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ঐক্যের প্রতীক। ক্রিকেটই সবগুলো দ্বীপের মানুষের মুখে একসঙ্গে হাসি ফোটায়। প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান দিননাথ রামনারায়নের সঙ্গে কথা বলাম। ঠিক হলো ত্রিনিদাদে একটি ম্যাচ আয়োজন করব আমরা তহবিল সংগ্রহের জন্য।  

ক্রিকেটার, দর্শক থেকে শুরু করে সবাই দারুণভাবে সাড়া দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ১ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করা। সেটির কাছাকাছিই সংগ্রহ হয়েছে। ম্যাচটিও ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। দর্শকরা উপভোগ করেছে।

অধিনায়ক হিসেবে দু-দুটি বিশ্বকাপ জয়, ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন কি এটিই?

স্যামি: বিশ্বকাপ জয় সবসময়ই স্পেশাল। আমরা বরাবরই খুব ভালো টি-টোয়েন্টি দল ছিলাম। ঈশ্বর আমাদের পাশে ছিলেন দুবারই। আমরা খেলেছিও দারুণ। আমি অবশ্যই খুব গর্বিত দুটি বিশ্বকাপ জিতে।

তবে শুধু বিশ্বকাপ জয় নয়, গোটা ক্যারিয়ারেই যা পেয়েছি, সত্যি বলতে সেটি কল্পনারও বাইরে। ছেলেবেলায় ক্রিকেটের প্রেমে পড়েছি। খেলাটা শুরু করেছি। এরপর ক্রিকেটকেই যখন ভবিষ্যত হিসেবে বেছে নেওয়ার ভাবনা শুরু, অনেকেই মনে করেছে আমি টিকতে পারব না। আমার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করেছি। ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি। এটিই তো দারুণ গর্বের ব্যাপার!

সেন্ট লুসিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, এই দ্বীপের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দেওয়া, এই অর্জনগুলোও নিশ্চয়ই খুব গর্বের?

স্যামি: অনেক গর্বের। ঈশ্বরের অপার কৃপা পেয়েছি আমি। আমার পথ ধরেই হয়ত জনসন চার্লস, গ্যারে মাথুরিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। আরও অনেক তরুণ উঠে আসছে। অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রতিনিধিত্ব করছে এই দ্বীপের অনেকেই। এভাবে পথ প্রদর্শক হতে পারা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার, অনেক সম্মানের ব্যাপার।

সেই সেন্ট লুসিয়ার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম এখন আপনার নামে। নিজের নামে নামকরণ হওয়া মাঠে খেলছেন। অনুভূতি কেমন?

স্যামি: অনুভূতিটা সত্যি বলতে বলে বোঝানোর নয়। আমি এখনও হজম করে উঠতে পারিনি, প্রক্রিয়া চলছে…(হাহহাহাহা)। গ্রেট স্যার ভিভ রিচার্ডসের নামে স্টেডিয়াম হয়েছে খেলা ছাড়ার অনেক পরে। সেখানে আমার মত নগন্য একজন ক্রিকেটারের নামে খেলোয়াড়ী জীবনেই স্টেডিয়ামের নামকরণ, আমি জানি না আসলে আমি এত বড় সম্মানের যোগ্য কিনা। এটি আসলে বলে দিচ্ছে, সেন্ট লুসিয়ার মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে। আমি অবশ্যই সেই ভালোবাসাকে সম্মান করি।  

আমার নামে নামকরণ হওয়ার পর এখানে খেলতে নেমে প্রথম দুটি ম্যাচেই ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছি। আমার পারফরম্যান্সকেই হয়ত নতুন স্তরে নিয়ে গেছে এই অনুপ্রেরণা!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার শুরুটা ছিল বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। অভিষেক টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন, পরেও দারুণ কিছু পারফরম্যান্স ছিল। দুই দিকে সু্ইং করাতে পারতেন। নিয়্ন্ত্রণ ছিল দারুণ। এখন তো বোলিং অনেক কম করেন। বোলার স্যামিকে মিস করেন?

স্যামি: শুরুতে তো বোলিংই ছিল আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। বোলিংটা উপভোগও করেছি দারুণ। পরে টি-টোয়েন্টির আবির্ভাব, সেটির সঙ্গে পথ চলতে চলতে ব্যাটিংটাই বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছে।

বোলার স্যামিকে মিস করি, এমনটি বলব না। এখনও তো করি। বল হাতে নিলে সর্বস্বই দিতে চাই। তবে অবশ্যই আগের মত নিয়মিত নই। আমি এটিকে বলব সময়ের চাহিদা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দাবির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি, সে কারণেই হয়ত এখনও টিকে আছি। দুটি বিশ্বকাপ জয়ে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছি। এই যে বিপিএল খেলছি, অন্য লিগগুলোতে লোকে ডাকে!

ব্যাটিংটা এতটা আগ্রাসী, এতটা উন্নতি কিভাবে করলেন?

স্যামি: বোলার হিসেবে আমার সামর্থ্য ছিল সীমিত। এজন্যই ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে চেয়েছি। বরাবরই শট খেলতে ভালোবাসতাম। টি-টোয়েন্টির জন্য ব্যাটিংটাকে সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছি, (পেশি দেখিয়ে) শক্তি বাড়িয়েছি। নিজের শক্তির জায়গাগুলো আরও শানিত করেছি অনুশীলন করে।

২০০৯ সালের বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের কথা মনে পড়ে? এই সিরিজ দিয়ে দলে ফিরলেন। দুই টেস্টেই ৫ উইকেট পেয়েছিলেন!

স্যামি: সব মনে আছে। মূল দলের অনেকেই স্ট্রাইক করেছিল। আমি ডাক পেলাম। সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে ৫ উইকেট নিলাম, পরে গ্রেনাডা টেস্টেও। তবে দুটি টেস্ট হেরেছিলাম, যেটি ছিল হতাশার।

পরের বছরই তো নেতৃত্ব পেলেন। কি মনে হয়, বাংলাদেশ সিরিজ দিয়ে ফেরা ও ওই সিরিজের পারফরম্যান্সই কি অধিনায়ক হওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছিল?

স্যামি: আমি ঠিক নিশ্চিত নই। হতে পারে। ওই সিরিজ দিয়ে দলে এসেছিলাম আবার। আমাকে যখন অধিনায়ক করা হয়েছিল, বোর্ড চেয়েছিল দলে স্থিতিশীলতা আনতে। চেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে ইতিবাচকতা ফিরিয়ে আনতে।

কেউ যদি প্রশ্ন করে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখতন? আমি বলব, ‘না’। আমার সুদূরতম কল্পনাতেও তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু সুযোগটা যখন এসেছে, সেটিকে আমি বড় সম্মান মনে করেছি এবং লুফে নিয়েছি।

কাজটা তো খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল? ক্রিস গেইল চুক্তিতে সই করেননি, সিনিয়রদের  সঙ্গে বোর্ডের টানাপোড়েনের কারণেই মূলত আপনাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ক্রিকেটার হিসেবে আপনার নিজেরও অনেক কিছু প্রমাণ করার ছিল…

স্যামি: অবশ্যই, খুব কঠিন ছিল। নেতৃত্ব ছিল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ নিতে কখনোই ভয় পাইনি। ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে আমার ক্যারিয়ার এগিয়েছে। নেতৃত্বেও সবটা দিয়ে লড়েছি। অর্জন যতটুকু করেছি, ব্যক্তিগতভাবে এবং দলীয়ভাবে, আমি তাতে গর্বিত।

বেড়ে ওঠার সময়গুলোতে আপনার নায়ক ছিলেন কে?

স্যামি: স্যার ভিভ রিচার্ডসের শৌর্যের কথা শুনে আমরা বেড়ে উঠেছি। সামনাসামনি যদিও খুব বেশি দেখা হয়নি, টিভিতেই বেশি দেখেছি। কী অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, মাঠে উজ্জ্বল উপস্থিতি!

ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রিয় ছিল কার্টলি অ্যামব্রোস ও ব্রায়ান লারা। ক্যারিবিয়ানের বাইরে জ্যাক ক্যালিসকে সবসময় শ্রদ্ধা করেছি।

আপনার মতে, নিজের স্মরণীয় পারফরম্যান্স?

স্যামি: টেস্ট অভিষেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৬ রানে ৭ উইকেট অবশ্যই ছিল বিশেষ কিছু। তবে টেস্ট অভিষেকের তিন বছর আগে ছিলাম ২০০৪ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। প্রিয় ব্রায়ান লারার নেতৃত্বে সেই টুর্নামেন্ট জয়ী দলের একজন সদস্য হতে পারা ছিল দারুণ আনন্দময়।

২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় সম্ভবত আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩ বলে ৩৪ রান করে ম্যাচ জয়, আমার দিকে সতীর্থদের ছুটে আসা, আমাদের খ্যাপাটে উদযাপনের স্মৃতিও মনে দাগ কেটে আছে।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেই সময়ের পরিস্থিতির কারণে। আমার একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরিও ভোলার নয়, ট্রেন্ট ব্রিজে ব্রড-অ্যান্ডারসনদের বিপক্ষে। আরও অনেক সময়, হয়ত আমি কিছু করিনি কিন্তু দল দারুণভাবে জিতেছে, এমন অনেক স্মরণীয় স্মৃতি আছে।

দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের কোনটি আপনার কাছে সেরা? কিংবা কোনটি হৃদয়ের বেশি কাছে?

স্যামি: আমি বলব, প্রথমটিই। প্রথম সবকিছুরই আলাদা মাহাত্ম্য থাকে। সেটির স্বাদই আলাদা। ২০১২ সালে আমরা যখন জিতেছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট খুব চাপে ছিল। বোর্ড, ক্যারিবিয়ানের মানুষ, সংবাদমাধ্যম, গোটা ক্রিকেট বিশ্ব, সবার সংশয় জন্মে গিয়েছিল আমাদের সামর্থ্য নিয়ে।

শ্রীলঙ্কায় যখন গেলাম বিশ্বকাপ খেলতে, মনে হয়েছিল গোটা বিশ্বের ভার আমার কাঁধে। সেখান থেকে বিশ্বকাপ জয় ছিল দারুণ ব্যাপার। সতীর্থদের কাছ থেকে, ক্যারিবিয়ানের মানুষদের কাছ থেকে সম্মান পেতে শুরু করলাম। ১৯৭৯ সালের পর আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমটির স্বাদ আসলেই অনির্বচনীয়।

কিন্তু একটু আগে যেটি বললেন, দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের সময়ের পরিস্থিতি কঠিন ছিল। বোর্ডের অসহযোগিতা ছিল। বিশ্বকাপ জয়ের পর আবেগময় বক্তৃতা দিলেন। বোর্ডের চক্ষুশূল হয়ে দল থেকে বাদ পড়লেন…

স্যামি: ক্যারিবিয়ানে এরকম কিছু সবসময়ই হতেই থাকে। যেটি বললাম, প্রথমটি ছিল অতুলনীয়। দ্বিতীয়টি ছিল সোনায় সোহাগা। দুটি বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতিই, ভালো লাগা আমরা সবাই আজীবন লালন করব।

বিশ্বকাপ জয়ের পর যা বলেছি, এরপর যা হয়েছে, সবাই জানে। ওসব নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমরা জানি, কতটা বিরুদ্ধ সময় পেরিয়ে, প্রতিকূল সাগর সাঁতরে আমরা শিরোপা জিতেছিলাম। আমার কাছে সেই সাফল্যের স্মৃতিই সবচেয়ে বড়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার চেয়ে বড় কিছু নেই। যতটুকু যা হয়েছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেই আমি আজকে স্যামি। দল যতবার আমাকে ডাকবে, ততবারই নিজেকে উজার করে দেব।

বাংলাদেশেও আপনি তুমুল জনপ্রিয়। রাজশাহী কিংসের তো প্রায় ঘরের ছেলে হয়ে উঠছেন!

স্যামি: বাংলাদেশে খেলতে সবসময়ই উপভোগ করেছি। এখানে ভালো কিছু বন্ধু গড়ে উঠেছে। এবার তৃতীয়বার বিপিএল খেলছি, রাজশাহী কিংসে দ্বিতীয়বার। এবারও চেষ্টা করব সমর্থকদের বিনোদন দিতে।

আর রাজশাহী কিংস আমার কাছে খুব আপন। আমি নিশ্চিত, বিপিএলের সেরা সমর্থকেরা রাজশাহী কিংসেরই। সবসময় দলকে সমর্থন দেন। আমাদের মালিকপক্ষও দারুণ। খুব গোছানো। সবচেয়ে বড় কথা, ফ্র্যাঞ্চাইজি হলেও কিংস আসলে একটি পরিবার। আমরা সবাই এক। আবার এই পরিবারের অংশ হতে পারা দারুণ। আশা করি, এবার গতবারের চেয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে শিরোপা জিততে পারব।

কিভাবে অবসর কাটাতে ভালো লাগে?

স্যামি: পরিবারের সঙ্গে। সেন্ট লুসিয়ায় নিজের বাড়ির ব্যালকনিতে বসে আছি, ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করছি, নিজেদের জীবনের গল্প থেকেই খুনসুটি করছি দুজন, বাচ্চারা পাশে খেলা করছে… ব্যস, এটিই স্বর্গ। আর কিচ্ছু প্রয়োজন নেই!