কুমিল্লার প্রথম জয়ে নায়ক সাইফ উদ্দিন

একই দলের ইনিংস। কিন্তু ইনিংসের দুটি ভাগে অন্ধকার আর আলোর ব্যবধান! উদ্ভাসিত শুরুর পর চিটাগং ভাইকিংসের ইনিংস যেন হারিয়ে গেল তিমিরে। বল হাতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর দাপুটে ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জিতল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2017, 11:46 AM
Updated : 7 Nov 2017, 12:31 PM

এবারের বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা চিটাগং ভাইকিংসকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দ্বিতীয় ম্যাচে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা পেয়েছে প্রথম জয়।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার চিটাগংয়ের ১৪৩ রান তাড়ায় ১৬ বল বাকি থাকতেই জিতে যায় কুমিল্লা।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগংয়ের শুরু ছিল বিস্ফোরক। ১০ ওভারে রান ছিল ১ উইকেটে ৯১। কিন্তু ডোয়াইন ব্রাভো ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেষ ১০ ওভারে চিটাগং করতে পারে মাত্র ৫২ রান।

২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে কুমিল্লার ম্যাচে ফেরার মূল নায়ক সাইফ উদ্দিন। পরে জস বাটলার ও মারলন স্যামুয়েলসের দারুণ ব্যাটিংয়ে জিততে কোনো সমস্যাই হয়নি কুমিল্লার।

রান তাড়ায় কুমিল্লা শুরু করে ঝড়ের গতিতে। লিটনের সঙ্গে বাটলারের নতুন উদ্বোধনী জুটি ৪ ওভারেই তোলে ৪২ রান।

১৩ বলে ২৩ রান করে লিটন আউট হয়ে গেলেও বাটলার চালিয়ে যান। আরেক পাশে সঙ্গ দেন তিনে নামা ইমরুল কায়েস। এই জুটিই কুমিল্লাকে এগিয়ে নেয় জয়ের কাছে।

লিটনের মত বাটলারকেও ফেরান শুভাশিস রায়। ৪২ বলে বাটলার করেছেন ৪৮ রান।

এই উইকেটের পতনে চিটাগংয়ের বিপদ যেন বাড়ল আরও। চারে নেমে ধুন্দুমার ব্যাটিংয়ে দ্রুতই ম্যাচ শেষ করে দিলেন মারলন স্যামুয়েলস। অনেক পরে নেমেও ছাড়িয়ে যান ইমরুলকে।

১৮ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন স্যামুয়েলস। চারটি চারের সঙ্গে তাসকিনকে মেরেছেন বিশাল ছক্কা। ৩১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত ইমরুল।

অথচ এত বাজে ভাবে হেরে যাওয়া চিটাগয়ের শুরুটা ছিল বিধ্বংসী। লুক রনকি ও সৌম্য সরকার শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী।

৯ রানে অলক কাপালির হাতে জীবন পাওয়ার পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন রনকি। আরাফাত সানিকে বেরিয়ে এসে মারেন ছক্কা। ওই ওভারেই রিভার্স সুইপে বল গ্যালারিতে পাঠান সৌম্য।

পেস আক্রমণে এনেও রানের গতি বাগে আনা যায়নি। আল আমিনকে টানা দুই বলে চার মারেন রনকি। ডোয়াইন ব্রাভোর প্রথম ওভারে টানা দুটি ছক্কা!

কুমিল্লা অধিনায়ক মোহাম্মদ নবিকে টানা দুটি চারে স্বাগত জানান সৌম্য। কুমিল্লা প্রথম উইকেটের দেখা পায় সেই ওভারেই। নবির লেংথ বল টেনে মারতে গিয়ে রনকি তুলে দেন কাভারে। ২১ বলে ৪০ রানের ইনিংসে নিজের কাজটুকু অবশ্য করে যান।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান ছিল ১ উইকেটে ৬৩। তিনে নেমে দিলশান মুনাবিরা নবিকে ওড়ান ছক্কায়। বড় স্কোরের হাতছানি দলের সামনে। কিন্তু ক্রমেই সেই হাতছানি গেল মিলিয়ে।

হঠাৎ করেই যেন ঠিকঠাক টাইমিং করতে ভুলে গেলেন সৌম্য ও মুনাবিরা। রানের গতি গেল প্রায় থমকে। সেটির বলি হলেন একের পর এক ব্যাটসম্যান।

ব্রাভোর স্লোয়ারে স্কুপ করে সহজ ক্যাচ তুলে দিলেন মুনাবিরা। রানের জন্য ছটফট করতে করতে সাইফ উদ্দিনকে প্যাডল করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন সৌম্য। ঝড়ো শুরুর পরও করেছেন ৩৩ বলে ৩৮।

এক বল পরই আরেকটি ধাক্কা। এবার সাইফ উদ্দিনের বলকে সোজা লং অনে তুলে দিলেন এনামুল হক (৬ বলে ৩)।

প্রায় অচেনা ইংলিশ লুইস রিস বা বর্ষীয়ান মিসবাহ-উল-হক (১১ বলে ৬), দলকে বিপদে ফেলেছেন আরও। নবম ওভার থেকে ১৯ ওভার পর্যন্ত বাউন্ডারি এসেছে মাত্র একটি। শেষ ওভারে তিন বলের মধ্যে দুটি চার মারেন সিকান্দার রাজা।

প্রথম ১০ ওভারে যে দলের রান ছিল ১ উইকেটে ৯১, শেষ ১০ ওভারে তারা তুলতে পারে মোটে ৫২ রান। 

প্রথম ওভারে ১৫ রান গোণার পর দারুণ ভাবে ফিরে ২৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন ব্রাভো। ৪ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার সাইফ উদ্দিন।

বাটলার-স্যামুয়েলসদের ঝড়ের পরও ম্যাচের সেরা এই তরুণ অলরাউন্ডারই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (রনকি ৪০, সৌম্য ৩৮, মুনাবিরা ২১, এনামুল ৩, মিসবাহ ৬, রিস ৯, রাজা ১৮*, শুভ ৩, সানজামুল ১*; সানি ০/১৯, আল আমিন ১/২৮, ব্রাভো ২/২৯, নবি ১/১৮, রশিদ ০/২১, সাইফ ৩/২৪)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৭.২ ওভারে ১৪৪/২(লিটন ২৩, বাটলার ৪৮, ইমরুল ৩৩*, স্যামুয়েলস ৩৫*; সানজামুল ০/২৭, শুভ ০/২৯, তাসকিন ০/৩৬, শুভাশিস ২/২৪, রাজা ০/১৭, রিস ০/১০)।

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন