৫ ছক্কার পর সাইফকে ব্যাট উপহার দিতে চেয়েছিলেন মিলার

প্রসঙ্গ উঠতেই লাজুক হাসি মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের কণ্ঠে, “আমি ভুলে গেছি ভাই… ভালো খেলি বা খারাপ খেলি, আমি দুটোই ভুলে যাই।” আলাপের বিষয় সেই টানা পাঁচ ছক্কা!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2017, 10:01 AM
Updated : 3 Nov 2017, 02:14 PM

ভালো বা খারাপ, দুটোই ভুলে যান সাইফ। ভালো-খারাপ - দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুটি দিকই চারদিনের মধ্যে দেখা হয়ে গিয়েছে তরুণ এই অলরাউন্ডারের। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল শেষের ওভারে তার বোলিং ও পরিণত ব্যাটিং। পরের টি-টোয়েন্টিতেই পাঁচ বলের দুঃস্বপ্ন। ডেভিড মিলারের ব্যাটে টানা পাঁচ বলে ছক্কা হজম!

এর পর পেরিয়ে গেছে কয়েকটি দিন। শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএল। সাইফের পরিচয় এখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অলরাউন্ডার। পাঁচ ছক্কার প্রসঙ্গ তবু পিছু নিল অবধারিতভাবেই।

সেদিন অল্পের জন্য ছয় ছক্কা হজমের বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হয়নি। যা হয়েছে, সেটির স্বাদও অবশ্য কম তেতো নয়। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে খরুচে ওভারের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন।

তবে বয়সে তরুণ, অভিজ্ঞতায় কমতি থাকলেও বোধের জায়গাটায় সাইফকে মনে হলো বেশ পরিণত। পাঁচ ছক্কার হতাশার বলয় থেকে বেরিয়ে তাকাচ্ছেন সামনে।

“আমি নিজেই আসলে ওটা ভুলে গেছি। ভাল খেলি বা খারাপ খেলি, আমি ভুলে যাই। এটা তো খেলারই অংশ। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। যেটা চলে গেছে, সেটা নিয়ে ভেবে তো লাভ নেই। ভবিষ্যতে কী করব, সেটা নিয়ে চিন্তা করি।”

“সামনের সময়ে ভাল করাটাই এখন আমার টার্গেট। আমি ওটা থেকে অনেক কিছু শিখেছি। জাতীয় দলে এমন হলে কাজে লাগাব। ভবিষ্যতে কীভাবে ভালো করব, কিভাবে উন্নতি করব, সেটাই থাকবে লক্ষ্য।”

ওভারের ষষ্ঠ বলটি সাইফ করতে চেয়েছিলেন ওয়াইড ইয়র্কার, সেটিই পেরেছেন। হয়েছে এক রান। ছক্কা পাঁচটিতেও একটিই হয়তো ছিল বাজে বল। বাকি চারটিতে মিলার খেলেছেন দারুণ।

“কোনো কোনো দিন এরকম হয় যে ব্যাটসম্যানরা যা চায়, সবই হয়...মিলারের অমন একটি দিনই ছিল”, এটি বলতে বলতেই হঠাৎ সাইফের কণ্ঠে একটু উচ্ছ্বাস, “আমার স্বপ্নের উইকেট পেয়েছি। এবি ডি ভিলিয়ার্সকে আউট করেছি। আমলার উইকেটও নিয়েছি। এসব তো কম নয়…।”

শুধু ডি ভিলিয়ার্সের উইকেটই নয়, সেদিনের ম্যাচ থেকে মনে রাখার মতো স্মৃতি আছে আরও। টিভি পর্দায় দেখা গেছে, সেদিন দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় বেশ কিছুক্ষণ মিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন সাইফ। হাত মিলিয়েছেন, আলিঙ্গন করেছেন পরস্পরকে।      

মিলারের সঙ্গে সেই কথোপকথনই এখন সাইফের কাছে দারুণ ভালো লাগার স্মৃতি হয়ে আছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনালেন সেই অভিজ্ঞতা।

“প্রথম ম্যাচে শেষ ওভারে আমি বেশ ভালো বোলিং করেছিলাম ওর বিপক্ষে। তখন ও আমাকে বলেছিল যে ‘দারুণ বোলিং করেছো।’ আমি তখন ওকে বলেছিলাম, ‘তুমি আমার প্রিয় ব্যাটসম্যান। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলার সময় থেকেই তোমার ব্যাটিং অনুসরণ করি, তোমার মতো ব্যাট করতে চাই।”

“পরের ম্যাচে তো পাঁচ ছক্কা মারল। আমি গিয়ে ওকে উইশ করেছিলাম। ও তখন বুকে টেনে নিল। সান্ত্বনা নিয়ে বলল, ‘ম্যাচ শেষে এসো, দুজন একসঙ্গে বসে ড্রিঙ্ক করব।’ আমি বললাম, ‘আমি তো ড্রিঙ্ক করি না। এমনিই কথা বলব তোমার সঙ্গে।’ ও বলল, ‘ঠিক আছে আসো, আমি তোমাকে একটি ব্যাট উপহার দেব।”

সেই উপহার অবশ্য আর পাওয়া হয়নি। সেদিন ম্যাচ শেষেই ছিল টিম মিটিং। এরপর টিম বাস ছেড়ে দেওয়ার তাড়া। একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ হয়নি। মিলার শুধু বলেছেন, “গুড লাক, তোমার সম্ভাবনা আছে, এগিয়ে যাও।”

প্রিয় ব্যাটসম্যানের উপহার না নিতে পারায় আফসোস নেই সাইফের। ভবিষ্যতে কতবারই তো দেখা হবে! বরং মিলারের শুভকামনাকেই করে নিয়েছেন অনুপ্রেরণা। সম্ভাবনাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে চান আলোকিত ভবিষ্যতের পথে।