বাজে ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার

দলীয় পারফরম্যান্স ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচেও পেল না বাংলাদেশ। হতাশার বোলিংয়ের পর তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল হেরেছে ২০০ রানে। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকইস্ট লন্ডন থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2017, 12:29 PM
Updated : 22 Oct 2017, 06:26 PM

টেস্টে সিরিজের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ওয়ানডে ১০ উইকেটে জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৪ রানে জিতেছিল ফাফ দু প্লেসির দল।

ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে রোববার সিরিজে প্রথমবারের মতো টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৬৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৪০ ওভার ৪ বলে ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

১৫ ওভারের মধ্যে পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা এক রকম শেষ করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সাকিব আল হাসান ছাড়া প্রথম ছয় জনের আর কেউ পাননি দুই অঙ্কের দেখা।

দিক হারানোর শুরু ইমরুল কায়েসকে দিয়ে। ডেন প্যাটানসনকে উড়ানোর চেষ্টায় দ্বিতীয় ওভারে ফিরেন বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। প্যাটারসনের পরের ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় নেন লিটন দাস।

দলে ফেরা সৌম্য সুবিধা করতে পারেননি। কাগিসো রাবাদাকে ঠিকভাবে ড্রাইভ করতে না পেরে ধরা পড়েন এইডেন মারক্রামের হাতে। মিডল অর্ডারের দুই ভরসা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহও দলের বিপর্যয়ে হতে পারেননি ত্রাতা।

সিরিজে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ফিরেন আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োকে উড়ানোর চেষ্টায় রাবাদাকে ক্যাচ দিয়ে। সোজা বলে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লিউ করে অভিষেকে উইকেটর স্বাদ পান ভিয়ান মুল্ডার।

সাব্বির রহমানকে নিয়ে ৬৭ রানের জুটিতে সাকিব গড়েন প্রতিরোধ। সহজাত ব্যাটিং ভুলে দুই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান খেলেন সাবধানী ক্রিকেট। পঞ্চাশ স্পর্শ করার পর আগ্রাসী হয়ে উঠতে চাইছিলেন সাকিব। মাশুল দিতে হয় তারই।

এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাতে একবার জীবনও পান। কিন্তু পরের বলেই আবার ঝুঁকি নিয়ে শট খেলেন। এবার ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে। সাকিবকে ফিরিয়ে অভিষিক্ত এইডেন মারক্রাম পান নিজের প্রথম উইকেট। অফ স্পিনারের সেই ওভারে কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফিরেন সাব্বির।

সাকিব-সাব্বিরের বিদায়ের পর বেশিদূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফিরা পারেননি পরাজয়ের ব্যবধান দুইশ রানের নিচে নামাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার দুইশ রানের ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে ২৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২০৬ রানে হেরেছিল তারা। 

৪৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার প্যাটারসন। দুটি করে উইকেট নেন মারক্রাম ও ইমরান তাহির।

এর আগে বোলারদের বিশাল পুঁজি এনে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা।

বিশ্রাম দেওয়ায় নেই হাশিম আমলা। তবুও ভালো শুরু পেতে কোনো সমস্যা হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ডি ককের সঙ্গে শতরানের জুটি গড়েন টেম্বা বাভুমা।

অভিষেক ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ডি ককের সঙ্গে বাভুমা গড়েছিলেন ১৫৯ রানের জুটি। এবার ফেরার আগে ১১৯ রানের জুটিতে দলকে দিয়ে যান বড় সংগ্রহের দৃঢ় ভিত।

ম্যাচের প্রথম বলে মাশরাফিকে চার হাঁকিয়ে শুরু করা বাভুমাকে বিদায় করেন মিরাজ। অফ স্পিনারকে উড়ানোর চেষ্টায় লং অনে লিটনের ক্যাচে পরিণত হন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

এক ওভার বিরতিতে আবার আঘাত হানেন মিরাজ। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে বিদায় করে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা ডি কককে। ৬৮ বলে ৯টি চার আর একটি ছক্কায় তিনি ফিরেন ৭৩ রান করে।

আগের ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা দু প্লেসি বিদায় নিতে পারতেন ৫ রানে। মিরাজের বলে রিভিউ নিলেই ফিরতেন অধিনায়ক। বেঁচে যাওয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১৫১ রানের জুটি গড়েন অভিষিক্ত মারক্রামের সঙ্গে।

কাছাকাছি সময়ে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের বিদায়ে স্বাগতিকদের চেপে ধরার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। সেটা কাজে লাগাতে পারেনি অতিথিরা। মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরের চার ওভারে সহজ কিছু রান থিতু হওয়ার সুযোগ করে দেয় দুই ব্যাটসম্যানকে।

থিতু হওয়ার পর বোলারদের ওপর চড়াও হন দু প্লেসি, মারক্রাম। অগ্রণী ছিলেন অধিনায়ক। তাকে থামানোর পথ পাচ্ছিল না অতিথিরা। দু প্লেসিকে হার মানতে হয় চোটের কাছে। ৬৭ বলে ১০টি চার ও একটি ছক্কায় ৯১ রান করা ডানহাতি ব্যাটসম্যান মাঠ ছাড়েন দুই জনের কাঁধে ভর করে।  

এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি মারক্রাম। টেস্ট অভিষেকে ৯৭ রানে রান আউট হওয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবারও ফিরেন সেভাবে। মারক্রামকে (৬৬) সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করেন ইমরুল।

ঝড় তোলার আগেই ডি ভিলিয়ার্সকে ফিরিয়ে দেন রুবেল হোসেন। আকাশে উঠে যাওয়া বল একস্ট্রা কাভারে মুঠোয় নেন অধিনায়ক মাশরাফি।

শুরুতে এলোমেলো বোলিং করা তাসকিন আহমেদ শেষটায় দ্রুত ফিরিয়ে দেন মুল্ডার ও ফেলুকওয়ায়োকে। তবে ঠিকই দ্রুত রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফারহান বেহারদিন ও কাগিসো রাবাদার শেষে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৬৯ পর্যন্ত যায় স্বাগতিকদের সংগ্রহ।

৫৯ রানে ২ উইকেট নেন মিরাজ। প্রথম ওভারে ১২ রান দিয়ে শুরু করে অফ স্পিনার পরে ফিরেন ছন্দে। তাসকিন ২ উইকেট নিতে ৭ ওভারে খরচ করেন ৬৬ রান। বোলিংয়ের দুই বড় ভরসা সাকিব ও মাশরাফি উইকেট পাননি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৬৯/৬ (বাভুমা ৪৮, ডি কক ৭৩, দু প্লেসি আহত অবসর ৯১*, মারক্রাম ৬৬, ডি ভিলিয়ার্স ২০, বেহারদিন ৩৩*, মুল্ডার ২, ফেলুকওয়ায়ো ৫, রাবাদা ২৩*; মাশরাফি ০/৬৯, মিরাজ ২/৫৯, রুবেল ১/৭৫, সাকিব ০/৫৬, তাসকিন ২/৬৬, মাহমুদউল্লাহ ০/৩৩, সাব্বির ০/৮)

বাংলাদেশ: ৪০.৪ ওভারে ১৬৯ (ইমরুল ‌১, সৌম্য ৮, লিটন ৬, মুশফিক ৮, সাকিব ৬৩, মাহমুদউল্লাহ ২, সাব্বির ৩৯, মিরাজ ১৫, মাশরাফি ১৭, তাসকিন ২, রুবেল ০*; রাবাদা ১/৩৩, প্যাটারসন ৩/৪৪, মুল্ডার ১/৩২, ফেলুকওয়ায়ো ১/১৩, তাহির ২/২৭, মারক্রাম ২/১৮)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০ রানে জয়ী

সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-০ ব্যবধানে জয়ী