হাসানের ৫ উইকেটের পর অভিষেকে ইমামের সেঞ্চুরি

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে রান করেছেন প্রচুর। করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটেও। এ বছরই বাংলাদেশে এসিসি ইমার্জিং কাপে করেছেন দুটি সেঞ্চুরি। তার পরও জাতীয় দলে তার সুযোগ পাওয়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল প্রবল। সাবেক অধিনায়ক ও এখনকার প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল-হকের ভাতিজা বলে কথা! কিন্তু প্রথম সুযোগেই সমালোচনা থামিয়ে দিলেন ইমাম-উল-হক। বাঁহাতি ওপেনার অভিষেকেই করলেন সেঞ্চুরি!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2017, 06:27 AM
Updated : 19 Oct 2017, 06:27 AM

ইমামের সেঞ্চুরির আগে ৫ উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের ভুগিয়েছেন হাসান আলি। তৃতীয় ওয়ানডেতে বুধবার আবু ধাবিতে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। টানা তৃতীয় জয়ে দুই ম্যাচ বাকি রেখেই নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়।

হাসান আলির দুর্দান্ত বোলিংয়ে লঙ্কানরা গুটিয়ে যায় ২০৮ রানে। ৫ উইকেট নেওয়ার পথে পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ৫০ উইকেটের রেকর্ড গড়েছেন এই পেসার। এরপর ইমামের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তান জেতে ৪৫ বল বাকি রেখে।

অভিষেকে মাত্র দ্বিতীয় পাকিস্তানি হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন ইমাম। সব দেশ মিলিয়ে তিনি ত্রয়োদশ। ২১ বছর ৩১০ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে অভিষেকে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান ইমাম।

পাকিস্তানের জয় ছিল একতরফা। অথচ শুরুটা ভালো করেছিল শ্রীলঙ্কাই। নিরোশান ডিকভেলা ও উপুল থারাঙ্গা উদ্বোধনী জুটিতে দলকে এনে দেন ৫৯ রান।

এরপরই পাকিস্তানি স্পিনাররা চেপে ধরে লঙ্কানদের। এক সময় ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি থাকা রান রেট নেমে আসে চারে।

রানের গতি কমার পর নিয়মিত উইকেটও হারাতে থাকে লঙ্কানরা। ৪৯ বলে ধুঁকতে ধুঁকতে ১৯ রান করা দিনেশ চান্দিমালকে দারুণ গুগলিতে ফেরান শাদাব খান। খানিক পর এই লেগ স্পিনার ফিরিয়ে দেন ৬১ রান করা থারাঙ্গাকেও।

এরপর দৃশ্যপটে হাসান। পাকিস্তানের মিডল ও লোয়ার অর্ডারে ছোবল দিয়ে তুলে নেন একের পর এক উইকেট। শেষ দিকে থিসারা পেরেরার ৩৮ রানে কোনো রকমে দুইশ পেরোয় শ্রীলঙ্কা।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয় ৩৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান। ২৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারেই ৫ উইকেট পেলেন তিনবার। ২৪ ম্যাচে ৫০ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে গেলেন ওয়াকার ইউনুসকে। ২৭ ম্যাচে ৫০ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের দ্রুততম ছিলেন ওয়াকার। পাশাপাশি এ বছর ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও হয়ে গেছেন হাসান।

সহজ রান তাড়ায় পাকিস্তানকে বেগ পেতে হয়নি এতটুকুও। ইমামের ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি তার অভিষেক ম্যাচ। পরিণত ব্যাটিং করেছেন। ফখর জামানের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে তুলেছেন ৭৮ রান।

দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে ইমামের জুটি ৬৬ রানের। আগের দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বাবর এবার ৩০ রানে বোল্ড হয়েছেন লাহিরু গামাগের অনেক বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে।

এরপর মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে ইমামের জুটিতে জয়ের কাছে পাকিস্তান। সেঞ্চুরির আনন্দের আগে ইমাম অবশ্য ক্ষনিকের জন্য পেয়েছিলেন কাছে গিয়ে না পাওয়ার যন্ত্রণাও!

৮৯ রানে কটবিহাইন্ড হয়েছিলেন দুশমন্থ চামিরার বলে। হতাশায় যেন নুইয়ে পড়ছিলেন। পারলে হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলেন ব্যাট। ড্রেসিং রুমে ফিরছিলেন রাজ্যের হতাশা নিয়ে। কিন্তু ফিরতে হলো না, তাকে থামালেন আম্পায়ার। তৃতীয় আম্পায়ার টিভি রিপ্লেতে দেখলেন ক্যাচটি। কিপারের গ্লাভসে ঢোকার সময় ছুঁয়েছে মাটি! বেঁচে গেলেন নাটকীয়ভাবে।

খানিক পরই সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। ৫ চার ও ২ ছক্কায় সেঞ্চুরি স্পর্শ করলেন ১২৪ বলে। মুহূর্তটিতে আচ্ছন্ন থেকেই কিনা, লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল পুল করতে গিয়ে আউট হয়েছেন পরের বলেই।

ম্যাচ শেষ করে আসতে না পারলেও ম্যাচের সেরা হয়েছেন ইমামই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৪৮.২ ওভারে ২০৮ (ডিকভেলা ১৮, থারাঙ্গা ৬১ চান্দিমাল ১৯, মেন্ডিস ১০, কাপুগেদেরা ১৮, থিরিমান্নে ২৮, সিরিবর্দনা ২, ভ্যান্ডারসে ০, থিসারা ৩৮, দনঞ্জয়া ১, চামিরা ১০, গামাগে ০*; জুনাইদ ১/৩২, রাইস ০/৫২, হাফিজ ১/৩৯, হাসান ৫/৩৪, আশরাফ ০/১০, শাদাব ২/৩৭)।

পাকিস্তান: ৪২.৩ ওভারে ২০৯/৩ (ফখর ১১, ইমাম ১০০, বাবর ৩০, হাফিজ ৩৪*, মালিক ০*; গামাগে ১/৩৫, চামিরা ০/৩৩, দনঞ্জয়া ০/৫৭, ভ্যান্ডারসে ১/৪৩, থিসারা ১/২২, সিরিবর্দনা ০/১২)।

ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ৩-০ তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমাম-উল-হক