আরেকটি হতাশার হার

বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। তার টর্নেডো ইনিংসে রানের পাহাড় গড়া স্বাগতিকরা জিতেছে সহজেই। সাড়ে তিনশ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে যে দৃঢ়তা প্রয়োজন তা দেখাতে পারেনি মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতপার্ল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 12:05 PM
Updated : 18 Oct 2017, 07:37 PM

ঝড় উঠার আগেই ডি ভিলিয়ার্সকে থামানোর সুযোগ এসেছিল। কাজে লাগাতে পারেননি নাসির হোসেন। দিতে হয়েছে তার মাশুল। ৩৫৪ রানের লক্ষ্য দিয়ে ফাফ দু প্লেসির দল জিতেছে ১০৪ রানে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করা দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে ২-০ ব্যবধানে।

প্রায় চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিং করতে নেমে বোলারদের নাকের পানি-চোখের পানি এক করে ছেড়েছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৭৬ রান করা ডি ভিলিয়ার্স।

বোল্যান্ড পার্কে বুধবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে অপেক্ষাকৃত ধীরে খেললেও শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ৩৫৩ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই মাঠে ওয়ানডেতে এটাই সর্বোচ্চ রান। জবাবে ৪৭ ওভার ৫ বলে ২৪৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। 

অনেক বড় রান তাড়ায় অতিথিরা তাকিয়ে ছিল চোট কাটিয়ে ফেরা তামিম ইকবালের দিকে। তার ব্যাটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি, ফিরেন ২৩ রান করে। তিন নম্বরে নামা লিটন দাসের আরও একটি ব্যর্থতায় চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

ইমরুল কায়েস আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ। দলের রান রেট ছয়ের কাছাকাছি রেখেছিলেন দুই জনে। যখন সময়ের দাবি ছিল রানের গতি বাড়ানোর তখনই ফিরে যান ইমরুল (৬৮)। ইমরান তাহিরের গুগলি বুঝতে না পেরে ফিরেন ডি ভিলিয়ার্সকে ক্যাচ দিয়ে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ভাঙে ৯৩ রানের জুটি।

লেগ স্পিনার তাহিরের পরের ওভারে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মুশফিক ফিরেন বাজে এক শটে। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের শর্ট বলে কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন জেপি দুমিনির হাতে।

৬৫ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ছাড়া বলার মতো রান নেই শেষ ৭ ব্যাটসম্যানের অন্য কারো। শেষ সাত উইকেটে হয়নি তেমন কোনো জুটি।

৪০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো। তাহির ৩ উইকেট নেন ৫০ রানে। বাংলাদেশের বোলাররা উইকেট থেকে যতটা সুবিধা পেয়েছিলেন ততটা না পেয়েও তারা বেশি সাফল্য পেয়েছেন।  

সকালে উইকেটে একটু আর্দ্রতা ছিল। উইকেট একটু মন্থরও ছিল। তাই সাবধানী শুরু করেছিলেন প্রথম ওয়ানডের দুই সেঞ্চুরিয়ান হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক। আঁটসাঁট বোলিংয়ে তাদের হাত খুলে খেলতে দেয়নি অতিথি বোলাররা। খানিকটা সহায়তা ছিল বাজে আউটফিল্ডের। সীমানার কাছে গিয়ে অনেকবারই থেমে গেছে রান। নয়তো সংগ্রহ আরেকটু বড় হতে পারতো দক্ষিণ আফ্রিকার।

আগের ম্যাচে অবিচ্ছিন্ন ২৮২ রানের জুটিতে দলকে ১০ উইকেটের জয় এনে দেওয়া ডি কক ও আমলা আবার দলকে ভালো শুরু এনে দেন। তাদের জুটিতে বাউন্ডারি মাত্র তিনটি, কিন্তু সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে রান রেট রাখেন পাঁচের ওপরে।

সিরিজে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট আসে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে, ১৮তম ওভারে। তার বাঁহাতি স্পিনে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন ডি কক। ভাঙে ৯০ রানের উদ্বোধনী জুটি।

প্রথম উইকেটের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করা বাংলাদেশ পরের উইকেট পেয়ে যায় দ্রুত। সাকিবের দারুণ এক ডেলিভারিতে শূন্য রানে বোল্ড হয়ে ফিরেন অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি।

চার বলের মধ্যে দুই উইকেট নেওয়া সাকিব পরের ওভারে পেতে পারতেন ডি ভিলিয়ার্সের উইকেট। সরে গিয়ে খেলতে গিয়ে স্লিপে নাসিরকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেরি করে ফেলা ফিল্ডার ক্যাচ ধরতে পারেননি।

২ রানে জীবন পাওয়া ডি ভিলিয়ার্স এরপর ডানা মেলেন। দারুণ সব শটে মুগ্ধতা ছড়ান পার্লে। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রণ। ৮৪ বলে হয় আমলা-ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড দ্বাদশ সেঞ্চুরি জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে বেশি তিন অঙ্কের জুটির রেকর্ড এখন এককভাবে তাদের অধিকারে।

আরেকটি সেঞ্চুরির পথে থাকা আমলাকে কট বিহাইন্ড করে ১৩৬ রানের জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন। শাফল করে অফ স্টাম্পে এসে গ্লাইড করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমকে সহজ ক্যাচ দেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ৯২ বলে ৮৫ রান করে ফিরেন আমলা। বাউন্ডারি মাত্র চারটি হলেও স্ট্রাইক রেট ৯২.৩৯।

অন্য প্রান্তে ডি ভিলিয়ার্স খেলে যান এক ছন্দে। ৩৪ বলে ফিফটি। পরের পঞ্চাশও ৩৪ বলে। ৬৮ বলে ১০টি চার আর একটি ছক্কায় সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারে ২৫তম, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম। সেঞ্চুরির পর আরও খুনে মেজাজে দেখা যায় ডি ভিলিয়ার্সকে। তার টর্নেডো ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় ছিলেন বাংলাদেশের সব বোলার।

মাশরাফির বলে ইমরুল কায়েসের হাতে জীবন পাওয়া জেপি দুমিনির মনোযোগ ছিল ডি ভিলিয়ার্সকে স্ট্রাইক দিয়ে যাওয়ার দিকে। ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডবে দ্রুত জুটিতে উঠে যায় শতরান।

৭০ বলে ১১৭ রানের বিধ্বংসী জুটি ভাঙেন রুবেল। ক্যারিয়ার সেরা ১৬২ ছাড়িয়ে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে যাওয়া ডি ভিলিয়ার্সকে থামান ডানহাতি এই পেসার। ডিপ মিডউইকেটে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ ডি ভিলিয়ার্সের ১৭৬ রানের ইনিংস। ১০৪ বলের ইনিংসে ১৫টি চারের সঙ্গে ছক্কা ৭টি।

শেষ ওভারে পরপর দুই বলে দুমিনি ও ডোয়াইন প্রিটোরয়াসকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়েছিলেন রুবেল। পারেননি তিনি। তবে ৬২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের সেরা বোলার।

সাকিব ২ উইকেট নেন ৬০ রানে। ডি ভিলিয়ার্সের ঝড়ের সবচেয়ে বড় অংশ গেছে মাশরাফি ও তাসকিন আহমেদের ওপর দিয়ে। অধিনায়ক ও ৮২ ও তাসকিন ৭১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।

শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানেই হেরেছে বাংলাদেশ। ডি ভিলিয়ার্সের পাগলাটে ইনিংস ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার আগ পর্যন্ত অতিথিদের বোলিংয়ে ছিল পরিকল্পনার ছাপ। তৃতীয় ম্যাচে আরও বেশি সময় তেমন বোলিং করতে পারলে ইস্ট লন্ডনে চিত্রটা ভিন্ন হতে পারে। আগামী রোববার সেখানেই হবে তৃতীয় ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৫৩/৬ (আমলা ৮৫, ডি কক ৪৬, দু প্লেসি ০, ডি ভিলিয়ার্স ১৭৬, দুমিনি ৩০, বেহারদিন ৭*, প্রিটোরিয়াস ০, ফেলুকওয়ায়ো ০*; মাশরাফি ০/৮২, তাসকিন ০/৭১, সাকিব ২/৬০, নাসির ০/৪৯, রুবেল ৪/৬২, সাব্বির ০/১১, মাহমুদউল্লাহ ০/১৬)

বাংলাদেশ: ৪৭.৫ ওভারে ২৪৯ (তামিম ২৩, ইমরুল ৬৮, লিটন ১৪, মুশফিক ৬০, সাকিব ৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৫, সাব্বির ১৭, নাসির ৩, মাশরাফি ০, তাসকিন ৩*, রুবেল ৮; রাবাদা ০/৪০, প্যাটারসন ১/৬৭, প্রিটোরিয়াস ২/৪৮, ফেলুকওয়ায়ো ৪/৪০, তাহির ৩/৫০) 

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী