প্রথম জয়ের সন্ধানে বাংলাদেশ

যখন স্বাগতিকেরা বোলিং করে তখন মনে হয় বোলিং উইকেট, যখন তারা ব্যাটিং করে, মনে হয় মনে হয় ব্যাটিং স্বর্গ। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মনে হচ্ছে যেন অজেয়। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা বিশ্বাস, তাদের হারানোর একটা পথ বের হবেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে ব্যর্থতার বৃত্ত এবার ভাঙবে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতকিম্বার্লি থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2017, 05:25 PM
Updated : 14 Oct 2017, 08:29 PM

ডায়মন্ড ওভালে রোববার প্রথম ওয়ানডে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটায়। ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর এটাই কিম্বার্লিতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গত ১৪ বছরে এই মাঠে ওয়ানডে হয়েছে মাত্র তিনটি।

কিম্বার্লিতে এর আগে খেলা দুই ওয়ানডেতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ও ২০০৩ বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছিল ৭ উইকেটে। ডায়মন্ড ওভালে খেলা ৭ ওয়ানডের ছয়টিতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, হেরেছে অন্যটিতে।

শনিবার মাঠে এসে সবার আগে উইকেট দেখতে যান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। পরে মুমিনুল হককে নিয়ে উইকেট দেখতে যান মুশফিকুর রহিম। পরে নাসির হোসেনও যোগ দেন তাদের সঙ্গে। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে উইকেট দেখেন দুই বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ও সুনীল জোশী।

ছোট শহরের এই মাঠের উইকেটে আছে রানের হাতছানি। কিউরেটর আভাস দিয়েছেন, স্পিন একদমই ধরবে না। বোলারদের জন্য তেমন কিছু নেই। ব্যাটসম্যানদের জন্য আর্দশ এক উইকেট।

ব্লুমফন্টেইনেও প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ এক উইকেট পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি তারা। যেভাবে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন তাতে ওয়ানডে সিরিজে অতিথিদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা ব্যাটিং।

দলের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ থিতু হয়ে আউট হয়ে ফিরছেন ব্যাটসম্যানরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ মিলিয়েও সেঞ্চুরি পাননি অতিথিদের কেউ। কেউ পঞ্চাশ ছুঁলে দল তার কাছে প্রত্যাশা করে তিন অঙ্কের রান। এখন পর্যন্ত ততটা দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি কেউ।

বাংলাদেশের জন্য সুখবর; ঊরুর চোট কাটিয়ে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। তার সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকারের যে কোনো একজনকে বেছে নিতে হবে বাংলাদেশকে। 

তামিমের ফেরার সুখবর ম্লান হয়ে গেছে মুস্তাফিজুর রহমানের ছিটকে পড়ার দুঃসংবাদে। পা মচকে যাওয়ায় প্রথম ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেছেন বোলিং আক্রমণের অন্যতম সেরা এই অস্ত্র। একাদশ সাজানো নিয়ে চিন্তায় থাকা মাশরাফির দুর্ভাবনা এতে একটু বাড়বে।

বোলিং আক্রমণ কেমন হবে এনিয়ে অনেক ভাবতে হচ্ছে মাশরাফিকে। চার পেসার নিয়ে খেলার দিকে ছিল তার ইঙ্গিত। মুস্তাফিজ ছিটকে যাওয়ার পরও চার পেসার খেলানো সম্ভব। সেক্ষত্রে অভিষেক হতে পারে তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের। অধিনায়কের সঙ্গে পেস আক্রমণে থাকতে পারেন রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আরেক জন স্পিনার খেলানো হবে কি না এনিয়ে দ্বিধায় আছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং দুই দিকের কথা চিন্তা করে একাদশে তার সঙ্গী হতে পারেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার নাসির হোসেন।

নিজেদের মাঠে ভয়ঙ্কর দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের প্রথম বল থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেললে অতিথিদের জেতার একটা সম্ভাবনা দেখেন মাশরাফি। সতীর্থদের তেমন ক্রিকেট খেলার জন্যই তৈরি হতে বলেছেন অধিনায়ক। 

নতুন ভেন্যুতে বাংলাদেশের আরেক পরীক্ষা তীব্র বাতাস। আগের দুই ভেন্যুতে বাউন্স ও গতি ভুগিয়েছে। এবার লড়তে হবে বাতাসের বিরুদ্ধেও। বাংলাদেশ দল অবশ্য নতুন সমস্যা নিয়ে সচেতন। বাতাসকে কিভাবে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করা যায় সেই কৌশল ঠিক করছে তারা।

টেস্ট সিরিজ সহজে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অধিনায়ক দু প্লেসি মনে করেন, ওয়ানডে সিরিজ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।

“আমি মনে করি, সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দেশের বাইরে নিজেদের প্রমাণ করেছে। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওরা সেমি-ফাইনালে খেলেছে। দেশের বাইরে ওদের টেস্ট রেকর্ড সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাদা বলের ক্রিকেটে ওরা দেখিয়েছে, তারা বিপজ্জনক একটি দল। অবশ্যই টেস্টে আমরা দাপট দেখিয়েছে কিন্তু ওয়ানডেতে তারা ভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।” 

টেস্টর পর যে সময় পেয়েছে অতিথিরা তাতে স্কিলে বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই মানসিকতায় পরিবর্তন এনে লড়াইয়ের কৌশল নিয়েছেন মাশরাফি। এই কৌশলে যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি জয় পাওয়া যায়!