ব্লুমফন্টেইনে প্রস্তুতি ম্যাচে ২৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৬ উইকেটে জিতেছে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশ। স্বাগতিকদের হাতে ছিল ২১ বল।
ম্যানগাউং ওভালে বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ৬৩ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারানো দলটি শেষ ৫ উইকেট হারায় ৫৯ রানে। মাঝের সময়টুকুতে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমানকে নিয়ে যা একটু লড়াই করেন সাকিব আল হাসান।
মাঝারি রান রান তাড়ায় টেস্ট সিরিজে ভোগানো এইডেন মারক্রাম আর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যাথু ব্রিয়েটসকার উদ্বোধনী জুটি ম্যাচের ফল নিয়ে অনিশ্চিয়তা এক রকম শেষ করে দেয়। তাদের দৃঢ়তাতেই শেষ হয়ে যায় ওয়ানডে সিরিজের আগে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ঠিকঠাক করে নেওয়ার সুযোগ।
প্রথম স্পেলে সুবিধা করতে পারেননি মাশরাফি, মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনদের কেউ। তরতর করে এগিয়ে যায় আমন্ত্রিত একাদশ।
৪৭ বলে ফিফটিতে পৌঁছান তরুণ মারক্রাম। তিনিই ফেরেন আগে। ততক্ষণে ব্রিয়েটসকার সঙ্গে জুটিতে উঠে যায় ১৪৭ রান। ২৬তম ওভারে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসির হোসেন। ৬৮ বলে খেলা মারক্রামের ৮২ রানের ইনিংসে চার ৮টি, ছক্কা একটি।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দারুণ এক কাটারে ব্রিয়েটসকাকে ফেরান মাশরাফি। ১০০ বলে ৯টি চারে ব্রিয়েটসকার রান ৭১।
তিন ম্যাচের সিরিজের দলে থাকা দুমিনি ও ডি ভিলিয়ার্স শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন। মাশরাফির বলে শূন্য রানেই ফিরতে পারতেন ডি ভিলিয়ার্স। ছেড়ে দিতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন কিন্তু নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ায় বেঁচে যান তিনি। শুরুতে অনেক বলই লাগে তার ব্যাটের কানায়।
ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়ে ফিরেন মৌসুমে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা দুমিনি। আমন্ত্রিত একাদশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে ফিরেন।
মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় শিকার ডি ভিলিয়ার্স। ৫০ বলে দুটি চার আর একটি ছক্কায় ৪৩ রান করে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। বাকিটুকু কায়া ঝন্ডোকে নিয়ে সহজেই সারেন হেইনরিখ ক্লাসেন।
দ্বিতীয় স্পেলে দারুণ বোলিং করেন মাশরাফি। তার কাটারগুলো পরীক্ষা নিয়েছে দুমিনি-ডি ভিলিয়ার্সের। উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেছেন রুবেল। ৭ ওভারের মধ্যে মাত্র একটি ওভারে মুস্তাফিজ ভোগাতে পেরেছেন ব্যাটসম্যানদের।
সাকিব বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারেননি। সাইফ উদ্দিনও পারেননি কোনো ছাপ ফেলতে। ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার মাহমুদউল্লাহ। অফ স্পিনে নাসির ৫১ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
এর আগে বোলারদের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। পরপর দুই বলে ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারে ফিরিয়ে শুরুতেই অতিথিদের চাপে ফেলে রবি ফ্রাইলিঙ্ক। ৩১ রানে দুই ওপেনারকে হারানো দলকে পথ দেখাতে পারেননি লিটন দাস ও মুশফিক।
তিন নম্বরে নেমে দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি লিটন। ডিফেন্স করতে গিয়ে স্টাম্পের বাইরের আউট সুইংয়ে ক্যাচ দেন তিনি। থিতু হয়ে ফিরেন মুশফিক। অ্যারন ফাঙ্গিসোর শর্ট বল উড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দেন ডিপ মিডউইকেটে।
বিশ্রাম কাটিয়ে ফেরা সাকিব শুরু থেকেই স্বচ্ছন্দ্য। দারুণ সব কাভার ড্রাইভ, পুল উপহার দিয়েছেন। খুব একটা ঝুঁকি নেননি। কাটের জন্য প্রলুব্ধ করলেও খেলছেন নিজেকে সামলে রেখে। মাহমুদউল্লাহ সঙ্গে ৫৭ ও সাব্বিরের সঙ্গে ৭০ রানের দুটি জুটিতে স্কোর তিনশ রানের আশপাশে যাওয়ার আশা জাগিয়েছিলেন তিনি।
ফাঙ্গিসোকে এগিয়ে এসে চার মারার পর আবার একই চেষ্টা করতে গিয়ে ফিরেন সাকিব। ৬৭ বলে খেলা তার ৬৮ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস গড়া ৯টি চারে। সাকিব ফেরার পর নিয়মিত উইকেট হারিয়ে আড়াইশ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশ।
সাকিবের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকেননি সাব্বির। স্কুপ করার চেষ্টায় উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৫২ রানে। তার ৫৪ বলের ইনিংসটি গড়া২টি চার ও তিনটি ছক্কায়। শেষের দিকে একটি করে ছক্কা-চারে ১৭ রান করেন অধিনায়ক মাশরাফি। তবে তাদের এই রান লড়াই করার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
আগামী রোববার কিম্বার্লিতে হবে প্রথম ওয়ানডে। তার আগে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছে কতটা লড়াই অপেক্ষা করছে তাদের সামনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৮.১ ওভারে ২৫৫ (ইমরুল ২৭, সৌম্য ৩, লিটন ৮, মুশফিক ২২, সাকিব ৬৮, মাহমুদউল্লাহ ২১, সাব্বির ৫২, নাসির ১২, সাইফ ১৩, মাশরাফি ১৭, মুস্তাফিজ ০*; হেনড্রিকস ১/৪০, ফ্রেইলিঙ্ক ২/২৫, সিবোতো ২/৪৯, বুদাজা ২/৪১, দুমিনি ০/২৬, মাল্ডার ১/২৫)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৬.৩ ওভারে ২৫৬/৪ (মারক্রাম ৮২, ব্রিয়েটসকা ৭১, দুমিনি ৩৪, ডি ভিলিয়ার্স ৪৩, ঝন্ডো ১০*, ক্লাসেন ৫*; মাশরাফি ১/৪৭, মুস্তাফিজ ০/৪৩, সাকিব ০/৩০, সাইফ ০/২৭, রুবেল ০/৪১, নাসির ১/৫২, মাহমুদউল্লাহ ২/১৩)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশ ৬ উইকেটে জয়ী