ব্লুমফন্টেইন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকের আগে-পরে মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহর হেলমেটে আঘাত হানে বাউন্সার। তিনবারই দেখা গেছে বল থেকে অনেক আগেই চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল খেলোয়াড়ী জীবনে ছিলেন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। জানেন বাউন্সার সামলানো কতটা কঠিন। তবে এখন বোলিং মেশিনে দ্রুত গতির বলে এত অনুশীলনের পরও এক ইনিংসে তিন জনের হেলমেটে বল লাগায় অবাক হয়েছেন তিনি।
“আমি বলবো মনোযোগের ঘাটতির জন্য এমন হয়েছে। মনসংযোগ নড়ে না গেলে বল থেকে চোখ সরবে না। খেলার সময় তো বটেই ছাড়ার সময়ও শেষ পর্যন্ত বলে চোখ রাখতে হয়। বলে ওদের চোখ ছিল না। এটার আরেকটা কারণ হতে পারে, ওরা আগেই ঠিক করে রেখেছিল এই বল খেলব না।”
মুশফিক এখন ঠিক আছেন। চিকিৎসক নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন কোনো ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। বল হেলমেটে লাগলেও আঘাত পাননি মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আর বাউন্সারে লুটিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
পচেফস্ট্রুমে প্রথম ইনিংসে ৩২০ করা বাংলাদেশ গুঁড়িয়ে যায় ৯০ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে ১৪৭ রানের পর ১৭২। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানের রান উৎসবের বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের গল্পটা উইকেট যাওয়া আর আসার। বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেবল মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ আর লিটন দাসের তিনটি ফিফটি। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা তিন ইনিংসে পেয়েছেন ছয়টি সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে আরও লড়াই আশা করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধনায়ক শন পোলক। ফ্ল্যাট উইকেটে ব্যাটসম্যানের এমন ব্যর্থতায় বিস্মিত তিনি। নিজের মতো করেই খোঁজার চেষ্টা করেছেন ব্যর্থতার ব্যাখ্যা।
“আমার মনে হয়েছে, ওরা প্রতিটি বল খেলতে চেয়েছে। টেস্টে তো বল ছাড়াটা শিখতে হবে। ব্যাটসম্যানদের উচ্চতাও বেশি না। ওরা যখন শর্ট বল শক্ত হাতে খেলেছে সেটা লাফিয়ে উঠেছে। ওদের কাছ থেকে আরও ভালো টেকনিক আশা করেছিলাম।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে কিভাবে কোর্টনি ওয়ালশ আর কার্টলি অ্যামব্রোসের আগুনে গোলা সামলানোর প্রস্তুতি নিতেন পোলক বলছিলেন সেই গল্প।
“আমরা ইনডোরে লম্বা সময় ধরে টেনিস বল ছাড়তাম। বলগুলো খুব দ্রুত আসত। কিছু শরীরে লাগত, কিছু ছাড়তে পারতাম। এভাবে নিজেদের প্রস্তুত করে যাওয়ার পর ওয়ালশ-অ্যামব্রোসকে খেলা সম্ভব ছিল। আমি জানি না, বাংলাদেশ ঠিক কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।”
বাউন্স সামলাতে দৃশ্যমান তেমন কোনো কৌশল দেখা যায়নি। বাংলাদেশের আগের সিরিজেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা স্পিন আক্রমণ সামলাতে এক পায়ে প্যাড ছাড়া নেটে ব্যাটিং করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত দলগুলো এভাবে সব কৌশলেই নিজেদের প্রস্তুত করে।
শুধু সব বল খেলার চেষ্টায় নয়, ব্যাটসম্যানরা তালগোল পাকিয়েছেন বল ছাড়ার ক্ষেত্রেও। খেলার বল ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ, বোল্ডের ঘটনা দেখা গেছে কয়েক বার। কঠিন সময় পার করে দিয়ে বাজে বলে উইকেট ছুড়ে আসার হওয়ার প্রবণতাও ছিল ব্যাটসম্যানদের মাঝে। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কয়েকবারই উইকেট উপহার পেয়েছেন স্বাগতিক বোলাররা।
মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকার প্রবণতা দেখা যায়নি প্রায় কারোর মাঝেই। সবই শট খেলার চেষ্টা করেছেন। রানের জন্য তাদের সহায় ছিল বাউন্ডারি। প্রান্ত বদল করে খেলার চেষ্টা দেখা গেছে কমই। হয়নি তেমন কোনো জুটি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাটসম্যানরা কেন বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না তার ব্যাখ্যা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার দেননি। ক্রিকেটে এমন হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে তারা এড়িয়ে গেছেন।
একটা ব্যাখ্যা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসির কাছে। তিনি মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বড় সংগ্রহের জন্য চাপে পড়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সেই চাপ আর বোলারদের ভালো বোলিংয়ে ভেঙে পড়েছে মুশফিকের দল।
“আমরা জানতাম ওরা খুব চাপে আছে। আমাদের দায়িত্ব ছিল এটা নিশ্চিত করা, ওরা যেন চাপটা কাটিয়ে উঠতে না পারে। ওদের আমরা কোনো জায়গা দেইনি। ওরা প্রচুর শট খেলে তাই বোলাররা জানত, সুযোগ আসবেই। আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে উন্মুখ ছিলাম।”
ক্রিকেট বিশ্বকে নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসা বাংলাদেশ জেনেছে, ঠিক কোন অবস্থানে আছে তারা। নিজেদের আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে ঠিক কতটা উন্নতি করতে হবে তাদের।
মুশফিক বলেছেন, এবারের সফর থেকে তাদের শেখার অনেক কিছু আছে। তারা কতটা শিখতে পেরেছেন সেটা সময়ই বলে দেবে।