বাংলাদেশের পেসারদের পোলকের পরামর্শ

বাড়াতে হবে গতি, শিখতে হবে ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা বের করার আর্ট। টেস্টে উইকেট নিতে এক জায়গায় বলের পর বল করার দক্ষতা থাকতে হবে। নইলে পড়তে হবে ভোগান্তিতে- বলছিলেন শন পোলক। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়কের বিশ্বাস, এবারের সফর থেকে এই উপলব্ধি করতে পেরেছেন বাংলাদেশের পেসাররা।

ক্রীড়া প্রতিবেদক ব্লুমফন্টেইন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2017, 03:47 PM
Updated : 9 Oct 2017, 06:06 PM

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের বোলিং দেখে হতাশ দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক সাবেক পেসার ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্স। মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, শুভাশিস রায় চৌধুরীর কাছ থেকে আরও নিয়ন্ত্রিত বোলিং আশা করেছিলেন তিনি।    

২-০ ব্যবধানে হারা সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে একবারও অলআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে ৪৯৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৪৭ রান করে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় টেস্টে দ্বিতীয়বার নামতেই হয়নি; স্বাগতিকরা একমাত্র ইনিংসে ৪ উইকেটে করে ৫৭৩ রান।

সিরিজে সেঞ্চুরি হয়েছে ছয়টি, তার সব কটিই স্বাগতিকদের। প্রথম টেস্টে শতক পাওয়া ডিন এলগার, হাশিম আমলা সেঞ্চুরি পেয়েছেন দ্বিতীয় টেস্টেও। ব্লুমফন্টেই রান উৎসবে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এইডেন মারক্রাম ও ফাফ দু প্লেসি পৌঁছান তিন অঙ্কে। 

এলগার-মারক্রাম-আমলা-দু প্লেসিদের একদমই ভাবাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। পেস-স্পিন সবই সহজে খেলেছেন স্বাগতিকরা। অতিথি বোলারদের এত সহজে সামলানোর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক দু প্লেসি।

“ওরা প্রচুর বাউন্ডারি বল দিয়েছে। আমরা ভালো বলগুলো ঠেকিয়ে গেছি। জানতাম, ওভারে একটা-দুইটা বাউন্ডারি বল মিলবে। আমরা সেগুলো কাজে লাগানোর ব্যাপারে মনোযোগী ছিলাম।”

সঠিক লাইন, লেংথে লম্বা সময় বল করতে না পারায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা অনেক সহজ ছিল বলে মনে করছেন পোলক।

“বাংলাদেশের পেসারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, সঠিক লাইন, লেংথে একটানা বল করে যাওয়া। দক্ষিণ আফ্রিকায় উইকেট নিতে হলে এটা আপনাকে শিখতেই হবে। ব্যাটসম্যানকে ঠিক মতো পড়তে পারতে হবে।”

উইকেটে থাকা বাউন্স কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের পাঁচ পেসারের কেউ। তাতে অবশ্য খুব একটা অবাক হননি পোলক।

“পেসারদের উচ্চতা বেশি ছিল না। যে কারণে ওরা উইকেটে থাকা সুবিধা সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। গতিও খুব বেশি ছিল না, তাই ওদের পরিকল্পনা কাজে লাগেনি।”

সুইং বোলিংয়ের জন্য পরিচিত সাবেক পেসার ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, টেস্টে সাফল্য পেতে বাংলাদেশের বোলারদের গতি বাড়াতেই হবে। তাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে।

“টেস্টে উইকেট পেতে হলে আপনার গতি লাগবে। তার সঙ্গে লাগবে দারুণ নিয়ন্ত্রণ। চার-পাঁচ ওভারের স্পেল সব সময় কার্যকর নাও হতে পারে। গতি বজায় রেখে লম্বা সময় ধরে বল করে যাওয়ার সামর্থ্য লাগবে।”

বাংলাদেশের পেসাদের বাউন্সার কেন কার্যকর ছিল না তার ব্যাখ্যা দিলেন ১৮ টেস্টে ৮৫ উইকেট নেওয়া ডি ভিলিয়ার্স।

“দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা লম্বা, ওদের কাঁধ উচ্চতায় বল তুলতে বাংলাদেশের বোলারদের প্রায় মাঝ পিচে বল ফেলতে হয়। গতি বেশি না থাকায় সেই বল সহজেই খেলে ব্যাটসম্যানরা। অন্য দিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা ব্যাটসম্যানের অনেক সামনে থেকে আচমকা বল তুলে ফেলতে পারে। এটাই দিন শেষে পার্থক্য গড়ে দেয়।”

দক্ষিণ আফ্রিকার দুই সাবেক পেসারই মুগ্ধ মুস্তাফিজে। পোলক মনে করেন, ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য ইনসুইং শিখলে পারলে আরও কার্যকর হয়ে উঠবেন বাঁহাতি পেসার। ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, আরেকটু শক্তিশালী হতে হবে বাংলাদেশের এই তরুণকে।

“মুস্তাফিজের মধ্যে আমি সুইং বোলিংয়ের দারুণ সম্ভাবনা দেখি। ওকে স্রেফ আরেকটু দ্রুত গতিতে বল করতে হবে। ওকে আরেকটু শক্তিশালী হতে হবে। আগামী কয়েক বছরে ও দুর্দান্ত এক বোলারে পরিণত হবে।”

দুই টেস্টেই বোলারদের পারফরম্যান্সে হতাশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বোলারদের কাছে তার চাওয়াটা ছিল অল্প। শুরুতে উইকেটে থাকা সুবিধাটা নেওয়া আর সঠিক লাইন, লেংথে বল করে যাওয়া। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও এই কাজের অভিজ্ঞতা খুব একটা না থাকায় হয়তো পেরে উঠেননি পেসাররা।

কোর্টনি ওয়ালশের মতো একজন কিংবদন্তি পেসার বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ। তার কাছ থেকে কেন পেসাররা কিছু শিখতে পারছেন না সেটা একটা বিস্ময় পোলক-ডি ভিলিয়ার্সের কাছে। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটেও একটা বড় বিস্ময়।