প্রথম দিনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দলে চারটি পরিবর্তন, তার তিনটিই বোলিংয়ে। ব্লুমফন্টেইন টেস্টের প্রথম দিনে পড়েনি তার কোনো ছাপ। ডিন এলগার আর এইডেন মারক্রামের সেঞ্চুরির পর হাশিম আমলা আর ফাফ দু প্লেসির জুটিতে বিশাল সংগ্রহ গড়ার পথে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতব্লুমফন্টেইন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2017, 04:08 PM
Updated : 6 Oct 2017, 07:30 PM

একটি দুইশ, আরেকটি একশ রানের জুটি; দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে দুটি অপরাজিত ফিফটিতে সিরিজে আবার স্বাগতিকদের রান উৎসব। নির্বিষ, আলগা বোলিংয়ের সুবিধা নিয়ে প্রথম দিনই দক্ষিণ আফ্রিকা করে ফেললো ৪২৮ রান। সারাদিনে বাংলাদেশ নিতে পেরেছে মাত্র তিনটি উইকেট। 

অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে শতরানের জুটি গড়া আমলা খেলছেন ৮৯ রানে। অধিনায়ক দু প্লেসির রান ৬২। তাদের খেলার সময়ে মনে হয়েছে উইকেট যেন ব্যাটিং স্বর্গ।  

শুক্রবারের প্রথম সেশন যেন পচেফস্ট্রুম টেস্টের পুনরাবৃত্তি। স্বাগতিকরা লাঞ্চে যায় বিনা উইকেটে ১২৬ রান নিয়ে।

সেনওয়েস পার্কের চেয়ে ম্যানগাউং ওভাল উইকেটে বোলারদের জন্য সুবিধা বেশি। কিন্তু সেটা আবিষ্কার করতে পারলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। তাদের এলোমেলো বোলিংয়ের জন্য আরও একবার প্রশ্নবিদ্ধ টস জিতে মুশফিকুর রহিমের ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত।

শুরুতে অধিনায়ক নিজেও একটু অধৈর্য ছিলেন। ৬ ওভারের মধ্যে ব্যবহার করেন চার জন বোলার। এরপর থেকে অবশ্য অত দ্রুত বোলিংয়ে পরিবর্তন করেননি, সবাইকে দেন যথেষ্ট সুযোগ। সেটা কাজে লাগাতে পারেননি কেউই।

প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের ব্যবধানে হারের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠতে যে শুরু বাংলাদেশে চেয়েছিল, হয়েছে তার বিপরীত। এলগার ও মারক্রামকে একের পর এক বাউন্ডারি বল উপহার দিয়েছেন বোলাররা। সেটা কাজে লাগিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতরানের জুটি উপহার দিয়েছেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। প্রথম সেশনে ফিফটি পেয়েছেন দুই জনে। দ্বিতীয় সেশনে সেঞ্চুরি।

১১৬ বলে আসে এলগারের দশম সেঞ্চুরি, যা নিজের দ্রুততম। এর জন্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে হয়নি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। আলগা বোলিং করে কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা।

প্রথম টেস্টে ৯৭ রানে আউট হওয়া মারক্রাম নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ১৪১ বলে। তার আগেই জুটিতে রান ছাড়ায় দুইশ। দুয়েকটা বল কানায় লাগা ছাড়া আর কিছুই ছিল না বাংলাদেশের বোলারদের জন্য। প্রথম সুযোগ আসে ৫০তম ওভারের শেষ বলে।

মুস্তাফিজুর রহমানের বল এলগারের গ্লাভস ছুঁয়ে আসা ক্যাচ গ্লাভসে নিতে পারেননি লিটন দাস। স্লিপ থেকে ছুটে এসে চেষ্টা করেছিলেন সৌম্য সরকার। তিনিও হাতে নিতে পারেননি।

জীবন কাজে লাগাতে পারেননি এলগার। শুভাশিস রায় চৌধুরীর বলে ফিরেন ফাইন লেগে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে। প্রথম টেস্টের সেরা খেলোয়াড়ের ১৫২ বলে খেলা ১১৩ রানের ইনিংসটি গড়া ১৭টি চারে।      

এলগারের বিদায়ে ভাঙে ২৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি, টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।

এরপর কিছুটা প্রাণ ফিরে বোলিংয়ে। খানিকটা পরিকল্পিত বোলিংয়ে সুফল মেলে একটু পরে। ২২টি চারে ১৪৩ রান করে ফিরে যান মারক্রাম।

তরুণ ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে প্রথম তিনটি বল শর্ট লেংথে করেন রুবেল হোসেন। পরের বলটি ছিল দ্রুত গতির ইয়র্কার। রিভার্স সুইং করে বল একটু ভেতরে ঢুকে মারক্রামের মিডল স্টাম্প উড়িয়ে দেয়।

সেঞ্চুরি পাওয়া দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় টেম্বা বাভুমাকে। শুভাশিসের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে লিটনের গ্লাভসবন্দি হন তিনি।

৪৫ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। আমলা ও দু প্লেসির দারুণ ব্যাটিংয়ে উড়ে যায় অতিথিদের রোমাঞ্চ। ওয়ানডে ম্যাচের গতিতে জুটির রান তিন অঙ্কে দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ১১১ বলে ১০০!

দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার আগে সৌম্য, সাব্বির রহমানকে বোলিংয়ে এনে লাভ হয়নি। দিনের শেষ বেলায় দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েও কোনো কাজ হয়নি। জমে যাওয়া জুটি ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। দিন শেষে আমলা-দু প্লেসির জুটির রান ১৪০।

প্রথম দিনে ৯০ ওভারে ৫৮টি বাউন্ডারি পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। রান দেওয়ার সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে গেছেন দলে ফেরা তাইজুল, রুবেল। ৮৫ রানে ২ উইকেট নেওয়া শুভাশিসও খুব একটা পিছিয়ে নেই। ৭৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য মুস্তাফিজ।

বল হাতে আরও একটি বিবর্ণ দিন কেটেছে বাংলাদেশের। পারফরম্যান্সে দারুণ কোনো উন্নতি করতে না পারলে সামনে অপেক্ষা করছে আরেকটি দুঃস্বপ্ন।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৪২৮/৩ (এলগার ১১৩, মারক্রাম ১৪৩, আমলা ৮৯*, বাভুমা ৭, দু প্লেসি ৬২*; মুস্তাফিজ ০/৭৮, শুভাশিস ২/৮৫, রুবেল ১/৯১, সৌম্য ০/২১, তাইজুল ০/৯৮, মাহমুদউল্লাহ ০/২৭, মুমিনুল ০/৬, সাব্বির ০/১৬)