প্রথম দিনেই চারশ ছাড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা

ব্লুমফন্টেইন টেস্টে টস জিতে বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম দিনটি কেটেছে হতাশায়। একদিনেই দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে ৪২৮ রান, উইকেট হারাতে হয়েছে মাত্র তিনটি।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2017, 07:38 AM
Updated : 6 Oct 2017, 03:52 PM

রান প্রসবা দিন

শেষ বেলায় দ্বিতীয় নতুন বলেও নেই আলোর রেখা। আমলা ও দু প্লেসি দিন শেষ করেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে। জুটিতে ফাটল ধরাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা।

৯৯ বলে ৮৯ রানে দিন শেষ করেছেন আমলা, ৯২ বলে ৬২ রানে দু প্লেসি। চতুর্থ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১৪০। জুটিতে রান উঠেছে ওভার প্রতি পাঁচের বেশি।

প্রথম দিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪২৮ রানের বেশি আছে আরেকটি ইনিংসে। ২০০৫ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ৭ উইকেটে ৪৪৯।

টস জিতে বোলিং নেওয়া, দিন শেষে প্রতিপক্ষের রান, উইকেট – স্কোর লাইনই বুঝিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের দিনটি কেমন গেল। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার গড়েছেন ২৪৩ রানের জুটি। সেঞ্চুরি করেছেন দুজনই। দিন শেষে সেঞ্চুরির কাছাকাছি আরেকজন, ষাট ছাড়িয়ে অপরাজিত একজন।

বাংলাদেশের বোলিং শুরু থেকেই ছিল পরিকল্পনাহীন, ধারহীন। খেলা শুরুর পরপরই ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা ছিল ভীষণ বাজে। প্রথম দুই সেশনে উইকেট মেলে একটি। বাউন্ডারির বল হয়েছে প্রচুর।

দিনে বাংলাদেশের সেরা সময় আসে চা-বিরতির পর। বোলিংয়ে দেখা যায় খানিকটা আগ্রাসন। মাঠ সাজানো ও বোলিংয় প্রমাণ মেলে কিছুটা পরিকল্পনার। সেটির ফলও মেলে হাতেনাতে। আউট হন মারক্রাম ও বাভুমা। তবে সেই চাপ ধরে রাখতে পারেনি বোলাররা। আবারও একের পর এক আলগা বল পেয়ে জুটি গড়ে তোলেন আমলা ও দু প্লেসি।

শুরুটা ভালো না হলেও দুটি উইকেট নিয়েছেন শুভাশিস। ভালো বোলিংয়ের পাশাপাশি অনেক বাজে বলও করেছেন মু্স্তাফিজ। একাদশে ফেরা তাইজুল ছিলেন ভীষণ বিবর্ণ। ১৯ ওভারে রান গুণেছেন ৯৮, মেডেন পাননি একটিও।

নাটকীয়ভাবে বদলে না গেলে দ্বিতীয় দিনেও বাংলাদেশের অপেক্ষায় কঠিন সময়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৪২৮/৩ (এলগার ১১৩, মারক্রাম ১৪৩, আমলা ৮৯*, বাভুমা ৭, দু প্লেসি ৬২*; মুস্তাফিজ ০/৭৮, শুভাশিস ২/৮৫, রুবেল ১/৯১, সৌম্য ০/২১, তাইজুল ০/৯৮, মাহমুদউল্লাহ ০/২৭, মুমিনুল ০/৬, সাব্বির ০/১৬)।

দ্বিতীয় নতুন বল

শেষ বিকেলে শুভাশিসের হাতে দ্বিতীয় নতুন বল তুল দিলেন মুশফিকুর রহিম। ৮৫.২ ওভার শেষে বাংলাদেশ নিয়েছে নতুন বল। শুভাশিসের জন্য শুরুতে থাকছে দুটি স্লিপ, একটি গালি।

দু প্লেসির পঞ্চাশ

গত টেস্টে যেখানে শেষ করেছিলেন, ফাফ দু প্লেসি শুরু করেছেন যেন সেখান থেকেই। পচেফস্ট্রুমের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১ রানের পর এবার আরেকটি ফিফটি।

দু প্লেসি যখন উইকেটে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশের তখন দিনের সেরা সময়। বোলাররা একটু খুঁজে পেয়েছিলেন ছন্দ। মারক্রাম ও বাভুমার উইকেট পরপর নিয়ে খানিকটা হলেও চাপে রাখা গিয়েছিল প্রোটিয়া ব্যাটিংকে। আমলাকে নিয়ে অনায়াসেই দলকে সেই চাপ থেকে বের করে নিয়েছেন দু প্লেসি।

৬৮ বলে দু প্লেসি স্পর্শকরেছেন ষোড়শ টেস্ট অর্ধশতক। ইনিংসে চার ৬টি।

৮৩ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে ৩৯৯।

জুটির শতরান

সময় যত বাড়ছে, বেড়ে চলেছে যেন রানের গতিও। আমলা-দু প্লেসির জুটি স্পর্শ করল শতরান।

মাহমুদউল্লাহর বলে আমলার টানা দু বলে বাউন্ডারিতে পূরণ হয়েছে জুটির সেঞ্চুরি। ১৮.৪ ওভারেই ১০০, ওভারপ্রতি পাঁচ রানের বেশি!

৮০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩ উইকেটে ৩৮৮। ৬৩ রানে উইকেটে আমলা, ৪৮ রানে দু প্লেসি।

আমলার ফিফটি

আমলা ব্যাট করলেন নিজের মতোই। আগের টেস্টে সেঞ্চুরির পর আবার ছুঁলেন পঞ্চাশ।

ওয়ানডের গতিতে খেলে করেছেন অর্ধশতক। ৩৬তম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৬১ বলে। চার ছিল সাতটি।

৭৮ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩ উইকেটে ৩৭৩।

ঘুরছে রানের চাকা

চা বিরতির পর কিছুটা সময় দারুণ বোলিংয়ে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। তবে আস্তে আস্তে আলগা হয়েছে ফাঁস। বেশ কিছু বাজে বল উপহার পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন হাশিম আমলা ও ফাফ দু প্লেসি। বাউন্ডারি এসেছে নিয়মিত।

৭১ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩ উইকেটে ৩৪১। চা বিরতির পর ১৫ ওভারে রান উঠে গেছে ৮৫!

আমলা খেলছেন ৩৪ রানে, দু প্লেসি ৩১। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটির রান ৫৮ বলে ৫৩।

শুভাশিসের আরেকটি

আগের ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের বলে দারুণ এক কাট শটে চার মেরেছিলেন রুবেল হোসেনকে। শুভাশিসকেও একই চেষ্টায় আউট হলেন টেম্বা বাভুমা।

ফূল লেংথ বল করার পরই শর্ট অফ লেথ করেছিলেন শুভাশিস। স্টাম্পের বাইরে, তবে একটু বাড়তি বাউন্স। তাতেই সর্বনাশ বাভুমার। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উইকেটকিপার লিটন দাসের হাতে ক্যাচ।

৭ রানে ফিরলেন বাভুমা। দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে ২৮৮। ৪৫ রানের মধ্যে বাংলাদেশ তুলে নিল ৩ উইকেট।

রুবেলের দুর্দান্ত ইয়র্কার

রুবেলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এলো আরেকটি উইকেট। বোল্ড করে দিলেন এইডেন মারক্রামকে।

ওভরের প্রথম তিন ডেলিভারিই রুবেল করেছিলেন শর্ট বল। পেছনের পায়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন মারক্রামকে। এরপর দারুণ এক ইয়র্কার। শেষ মুহূর্তে একটু রিভার্স সু্ইং করে বল ঢোকে ভেতরে। ১৪০.২ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিতে উড়ল মারক্রামের মিডল স্টাম্প।

১৪৩ রানে আউট মারক্রাম। বিদায় নিলেন সেঞ্চুরিয়ান দু ওপেনারই। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ২ উইকেটে ২৭৬।

সেশনের প্রাপ্তি ১ উইকেট

চা বিরতির আগে আরও একটি উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। রিভিউ নেওয়া হয়েছিল হাশিম আমলার বিরুদ্ধে। তবে শুভাশিসের বলটি পিচ করেছিল অফ স্টাম্পের বাইরে।

প্রথম সেশনের তুলনায় তবু খানিকটা স্বস্তিতে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় সেশন। ভাঙন ধরানো গেছে উদ্বোধনী জুটিতে। রানের চাকা অবশ্য ঘুরছে বেশ গতিতে। প্রথম সেশনে ২৯ ওভারে উঠেছিল ১২৬ রান, দ্বিতীয় সেশনে ২৭ ওভারে ১৩০।

চা বিরতির সময় দক্ষিণ আফ্রিকার রান ১ উইকেটে ২৫৬। মারক্রাম ব্যাট করছেন ১৩৫ রানে, আমলা ১।

অবশেষে উইকেটের দেখা

মুস্তাফিজের বাউন্সারে আউট হতে হতে বেঁচে গিয়েছিলেন ডিন এলগার। আউট হলেন শুভাশিসের বাউন্সারে। উইকেটে থাকল মুস্তাফিজের ছোঁয়াও।

নতুন স্পেলে শুভাশিসের সেটি প্রথম ওভার। বাউন্সারে এলগারের পুল শটে টাইমিংয়ে গড়বড়। ফাইন লেগ সীমান্ত থেকে ভেতরে ছুটে এসে দারুণ ক্যাচ নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

১১৩ রানে আউট হলেন এলগার। ২৪৩ রানে ভাঙল উদ্বোধনী জুটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জটি। মারক্রামের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন হাশিম আমলা।

হতে হতেও হলো না

রাউন্ড দা উইকেটে করা মুস্তাফিজের বাউন্সার ঠিকমত খেলতে পারেননি এলগার। গ্লাভসে লেগে বল যায় পেছনে, লিটন দাসের মাথার বেশ ওপর দিয়ে। লাফিয়ে শুধু বলে আঙুল ছোঁয়াতে পারেন লিটন, জমাতে পারেননি হাতে।

স্লিপ ফিল্ডারও ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঝাঁপিয়ে বল হাতে পাননি তিনিও। দিনের প্রথম সুযোগ, সেটিও হাতছাড়া।

১১০ রানে বাঁচলেন এলগার। ৫০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে ২২৫।

এবার তিন অঙ্কে মারক্রাম

অভিষেকে ৯৭ রানে রান আউটের হতাশা হয়ত তাকে ছুঁয়ে যাবে ক্যারিয়ার জুড়েই। তবে প্রথম সেঞ্চুরির জন্য খুব একটা অপেক্ষা করতে হলো না এইডেন মারক্রামকে। দ্বিতীয় টেস্টেই পেয়ে গেলেন কাঙ্ক্ষিত প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অনির্বচনীয় স্বাদ!

রুবেলকে টানা দুই বলে চার মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছালেন ১৪১ বলে। ইনিংস বাউন্ডারি ১৬টি। দক্ষিণ আফ্রিকার ভবিষ্যতের ভরসা জানিয়ে দিলেন, তিনি প্রস্তুত ‘বর্তমান’ হয়ে উঠতেই।

৪৪ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে ২১১।

জুটির দুইশ

আগের টেস্টে দুজনের জুটি থেমেছিল ১৯৬ রানে। কোনো বোলার নয়, জুটি ভেঙেছিল রান আউটে। এবার এলগার ও মারক্রাম ঠিকই গড়লেন দুইশ রানের জুটি। সেটিও দিনের খেলা অর্ধেক হওয়ার আগেই!

৪২ ওভার শেষে দুজনের জুটির রান ২০২। দক্ষিণ আফ্রিকা সবশেষ দুইশ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাইয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ২০৪ রানের জুটি গড়েছিলেন গ্রায়েম স্মিথ ও নিল ম্যাকেঞ্জি।

এলগারের সেঞ্চুরি

যেন প্রতিযোগিতা চলছিল, কে আগে ছুঁতে পারেন সেঞ্চুরি। বেশ কিছুটা এগিয়ে থেকে আগে অর্ধশতক করেছিলেন এলগার। আশির আগেই আবার তাকে ছাড়িয়ে যান মারক্রাম। শেষ পর্যন্ত টানা দুই বলে বাউন্ডারিতে আগে সেঞ্চুরি ছুঁলেন সেই এলগারই।

সেঞ্চুরি করছেন তিনি ওয়ানডের গতিতে, ১১৬ বলে। তবে খুব আক্রমণাত্মক বা উদ্ভাবনী শট খেলতে হয়নি। বাংলাদেশের বোলারদের বাজে বোলিংয়েই সহজ হয়েছে তার কাজ।

৪১ টেস্টে এলগারের দশম সেঞ্চুরি। চলতি সিরিজে দ্বিতীয়। প্রথমবার বছরে হাজার রান ছোঁয়ার ইনিংসটি স্মরণীয় করে রাখলেন সেঞ্চুরিতে।

৪১ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে ১৯৮। ১০৩ রানে খেলছেন এলগার, ৯০ রানে মারক্রাম।

দেড়শ পার

লাঞ্চের পরও কোনো সুখবর নেই বাংলাদেশের। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে এলগার ও মারক্রাম জুটির রান পেরিয়েছে দেড়শ।

৩৪ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ১৫৩। ৭৭ রানে খেলছেন এলগার, ৭১ রানে মারক্রাম।

খাবার বিভ্রাট

লাঞ্চের পর খেলা শুরু হতে দেরি হয় মিনিট দশেক। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুমে খাবার আসতে দেরি হওয়ায় আকস্মিক এই দেরি। দিনের খেলার সঙ্গে যোগ হবে হারিয়ে যাওয়া এই ১০ মিনিট।

বিবর্ণ প্রথম সেশন

আরও একটি টেস্টে টস জিতে বোলিং নেওয়া। এবার উইকেট একটু বেশি গতিময় ও বাউন্সি হলেও বাংলাদেশের বোলিং আগের মতোই বিবর্ণ। তাই আরও একটি হতাশার প্রথম সেশন।

প্রথম সেশনকে কাজে লাগানোর মতো কিছুই করতে পারেনি বাংলাদেশ। এক মুস্তাফিজ ছাড়া ভালো বোলিং করতে পারেননি কেউ। আলগা বোলিংয়ে অনায়াসেই রান বাড়িয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার। লাঞ্চের আগে পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছেন দুজনই। দুই টেস্ট একসঙ্গে জুটি বেধে দ্বিতীয়বার গড়েছেন শতরানের উদ্বোধনী জুটি।

লাঞ্চের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার রান ২৯ ওভারে বিনা উইকেটে ১২৯। এলগার লাঞ্চে গেছেন ৭২ রান নিয়ে, ৫৪ রান মারক্রামের।

মুস্তাফিজ ছাড়া বাংলাদেশের বাকি তিন মূল বোলারই রান গুণেছেন ওভারপ্রতি সাড়ে চারের বেশি।

জুটির শতরান
আবারও উদ্বোধনী জুটিতে শতরান। এলগার ও মারক্রামের নতুন উদ্বোধনী জুটি টানা দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দিল শতরানের উদ্বোধনী জুটি।
২৫ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ১০৪। এলগার খেলছেন ৬৩ রানে, মারক্রাম ৪১।

এলগারের পঞ্চাশ

আগের টেস্টে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৯৯ রান। এবারও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পরীক্ষা নিতে পারল না ডিন এলগারের। বরং আলগা বোলিংয়ে বাড়িয়ে দিল বন্ধুত্বের হাত। এলগারও উপহার সাদরে গ্রহণ করে ছুঁয়ে ফেললেন পঞ্চাশ।

প্রথম পানি পানের বিরতির আগেই ৮ বাউন্ডারিতে করেছিলেন ৪১ রান। দশম বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৬০ বলে। এলগারের নবম টেস্ট ফিফটি। সেঞ্চুরিও আছে ৯টি।

২১ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ৮২। এলগার উইকেটে ৫২ রান নিয়ে, ৩০ মারক্রাম।

প্রথম ঘণ্টায় ৫৫ রান!

এক জায়গায় বল করতে না পারা, বাউন্ডারি বল উপহার দেওয়ার ছড়াছড়ি, প্রথম ৬ ওভারেই চারজন বোলার-সব মিলিয়ে টস জিতে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রায় অপমৃত্যু।

শুরুতে পেসারদের জন্য সহায়তার কথা ভেবে নেওয়া হলো বোলিং। কিন্তু সহায়তা আদায় করার বোলিংই করতে পারলেন না পেসাররা। প্রথম ঘণ্টায় তাই দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে ফেলল বিনা উইকেটে ৫৫ রান।

১৪ ওভারে বাউন্ডারি হয়েছে ১০টি। সবগুলোই বাজে বলে। ৮টিই মেরেছেন ডিন এলগার। গত টেস্টের ম্যাচ সেরা ক্রিকেটার খেলছেন  ৪৭ বলে ৪১ রান নিয়ে, ১৪ রান নিয়ে মারক্রাম।

প্রথম দুই ওভারে দুটি হাফ ভলিতে বাউন্ডারি হজম করার পর প্রান্ত বদলে ফিরে ভালো বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ। টানা দুই ওভার নিয়েছেন মেইডেন। পরের দুই ওভারও খারাপ করেননি।

শুরুটা একটু ভালো করলেও পরে বিবর্ণ রুবেল হোসেন। মেডেনে শুরু করে শুভাশিস পরের ওভারে গুণেছেন ১৫ রান।

এলগারের হাজার

এ বছর প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ডিন এলগার। ১৬ রানের মাথায় ছুঁয়ে ফেলেন হাজার রান।

৮৫১ রান নিয়ে দুইয়ে ভারতের চেতেশ্বর পুজারা। হাশিম আমলা এই টেস্ট শুরু কছেন ৮১০ রান নিয়ে।

বাউন্ডারির ছড়াছড়ি

প্রথম ওভারেই লেগ স্টাম্পে হাফ ভলি দিয়ে ডিন এলগারকে হাত খোলার সুযোগ করে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। পরের ওভারটি মেইডেন নিয়েছিলেন শুভাশিস। তবে তৃতীয় ওভারে আবারও লেগ স্টাম্পে হাফ ভলি করে বাউন্ডারির সুযোগ দিয়েছেন মুস্তাফিজ।

চতুর্থ ওভারে শুভাশিসও দিলেন একের পর এক উপহার। ফুলটসে চার মারলেন এইডেন মারক্রাম। দুটি হাফ ভলিতে চার মারলেন এলগর।

প্রথম চার ওভারেই বাংলাদেশ হজম করল পাঁচ বাউন্ডারি! পঞ্চম ওভারেই তাই বোলিংয়ে পরিবর্তন। এলেন রুবেল হোসেন। শুরু করলেন মেইডেন নিয়ে।

৫ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ২৩।

নতুন চেহারার প্রোটিয়া বোলিং

ডেল স্টেইন, ভার্নন ফিল্যান্ডার ও ক্রিস মরিস চোটের কারণে নেই আগে থেকেই। প্রথম টেস্টে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন মর্নে মর্কেলও। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ তাই অনভিজ্ঞ ও দ্বিতীয় সারির। ২০০৭ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট খেলছেন স্টেইন-ফিল্যান্ডার-মর্কেল এই তিনজনকে ছাড়াই।

২১ টেস্ট খেলা তরুণ কাগিসো রাবাদা বোলিং আক্রমণের নেতা। সঙ্গে আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো, ডুয়ানে অলিভিয়ের। ওয়েইন পার্নেল রঙিন পোশাকে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হলেও টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৫টি। 

বাংলাদেশ দলে চার পরিবর্তন

একটি পরিবর্তন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন তামিম ইকবাল। তার বদলে চোট কাটিয়ে ফিরছেন সৌম্য সরকার। বাকি তিনটি পরিবর্তন বোলিং লাইন আপে। প্রথম ম্যাচে বোলারদের বিবর্ণ চেহারা ও প্রকাশ্যে অধিনায়কের কড়া সমালোচনার পর পরির্বতনগুলো অনুমিতই ছিল।

প্রথম টেস্টে বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল মুস্তাফিজুর রহমান টিকে গেছেন। বদল এসেছে বাকি তিন বোলারে। জায়গা হারিয়েছে তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দলে এসেছেন রুবেল হোসেন, শুভাশিস রায় ও তাইজুল ইসলাম।

২৪ টেস্টে ৭৭.৯৩ গড়ে ৩২ উইকেট নেওয়া রুবেলের জন্য সুযোগ নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে নতুন দম দেওয়ার।

বাংলাদেশ দল: ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান, লিটন দাস, তাইজুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, শুভাশিস রায়, মুস্তাফিজুর রহমান।

এবারও টস জয়

মুদ্রা নিক্ষেপ করলেন ফাফ দু প্লেসি, মুশফিকুর রহিম ডাকলেন ‘টেইলস’। এবারও বাংলাদেশ অধিনায়ক জিতলে টসে। এবারও নিলেন বোলিং। তবে গত টেস্টের পর এবার সিদ্ধান্তটি বিস্ময়কর নয়।

ব্যাটিং পেয়ে অবশ্য খুব অখুশি নন প্রোটিয়া অধিনায়ক। প্রথম সেশনের পর উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হবে বলেই বিশ্বাস তার।

বাদামী ঘাসের উইকেট

প্রথম টেস্টে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেট পাওয়ার পর ক্ষোভ জানিয়েছিলেন ফাফ দু প্লেসি। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের চাওয়া ছিল পরের টেস্টে সবুজ ঘাসের ও বাউন্সি উইকেট। তার চাওয়া কিছুটা পূরণ হয়েছে, কিছুটা নয়।

উইকেটে ঘাস আছে, তবে বেশির ভাগই মরা বাদামী ঘাস। তবে বেশ গতিময় হবে উইকেট। বাউন্স থাকবে টেস্ট জুড়েই। পিচ রিপোর্টে শন পোলক বললেন, টস জিতলে বোলিং নেওয়াই হবে শ্রেয়। 

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

প্রথম টেস্টে প্রাপ্তি ছিল কেবল টস জয়। টসে জিতে বোলিং নেওয়ার বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত শুরু করা থেকে গোটা ম্যাচই বাংলাদেশের জন্য ছিল হতাশার, যেটির শেষ ছিল ৯০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার বিব্রতকর স্বাদ দিয়ে। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে লড়াইটা তাই ঘুরে দাঁড়ানোর।

ঘুরে দাঁড়ানো মানে শুধু জয় নয়। লড়াই করা। নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখা। দেশের মাটিতে উন্নতির যে ধারা, বিদেশের মাটিতেও সেটির কিছুটা ছাপ রাখা। নিজেদের উজার করে দেওয়া। দ্বিতীয় টেস্টে দলের কাছে চাওয়া, মাঠে নিজেদের নিংড়ে দেওয়া। হারার আগেই হেরে না বসা।