মুশফিকের কাঠগড়ায় বোলাররা

সাদা পোশাকে সাদামাটা পারফরম্যান্সে আরও একবার মুশফিকুর রহিমের কাঠগড়ায় দলের বোলিং ইউনিট। পচেফস্ট্রুম টেস্টে বোলারদের পারফরম্যান্সে ভীষণ হতাশ অধিনায়ক। আরও একবার সতীর্থদের তাগিদ দিয়েছেন নিজে থেকে এগিয়ে আসার।

ক্রীড়া প্রতিবেদক পচেফস্ট্রুম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2017, 02:32 PM
Updated : 2 Oct 2017, 06:12 PM

গত কয়েক বছরে ব্যাটসম্যানরা অনেক উন্নতি করেছেন। কোচের সঙ্গে কাজ করে দূর করেছেন ত্রুটি। নিজের চেষ্টায় এগিয়ে গেছেন অনেক দূর। কিন্তু বোলারদের মধ্যে সেই চেষ্টা একেবারেই দেখেন না মুশফিক। এটাই তাকে পোড়ায় সবচেয়ে বেশি। 

“স্কিলের উন্নতি নিজেরই করতে হয়। কেউ বারবার আপনাকে শিখিয়ে দেবে না। ব্যাটিংয়ে যারা আছে, ব্যক্তিগতভাবে তারা যে উন্নতি করেছে, বোলিং ইউনিট হিসেবে আমরা সেই উন্নতি করতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা ধাক্কা।”

অসম্ভব কোনো দাবি করছেন না মুশফিক। বলছেন না গতির ঝড় তুলতে। তিনি দেখতে চান উন্নতি। দেখতে চান সতীর্থরা নিজের কাজটা করছে মন দিয়ে।

“আমি এখনই বলছি না, ওদের দুই দিকে বল সুইং করাতে। অন্তত জায়গায় তো বোলিং করতে পারবে। এটার জন্য একজন কোচের দরকার হয় না। এটা আপনি নিজে থেকেও করতে পারেন। যদি মন থেকে চান, ওভারে পাঁচ বল আপনি এক জায়গায় ফেলতে পারবেন।”

“আমরা এই কাজটা এক দিন-দুই দিন হয়তো করি কিন্তু এটা আমাদের দিনের পর দিন করে যেতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের করতে হবে, যদি আমরা যে সম্মান অর্জন করেছি সেটা হারাতে না চাই। আমার মনে হয়, বোলিং ইউনিট হিসেবে আমাদের শেখার অনেক, অনেক, অনেক বাকি আছে।”

মুশফিকের এই চাওয়া বহু দিনের। এখন পর্যন্ত আলোর দেখা মেলেনি। বোলাররা নিজে থেকে এগিয়ে না এলে শুধু কোচিং করিয়ে তাদের এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ দেখেন না তিনি। 

“আগে তাদের নিজেদের ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগটা নিতে হবে। এটা যদি তারা না নিতে পারে, সেই প্যাশন যদি না থাকে তাহলে কাজটা খুব কঠিন হয়ে যাবে।”

মুশফিক বরাবরই বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের বোলারদের উইকেট পেতে হলে পিচ থেকে সহায়তা লাগে।

“ফ্ল্যাট উইকেটে যে আমাদের বোলারা (ভালো) বোলিং করতে পারবে সেটা আমি কখনোই বিশ্বাস করি না। ফ্ল্যাট উইকেটে আপনি উইকেট না পান, অন্তত একটা লাইন-লেংথে তো বোলিং করতে পারবেন। এই স্কিলের জন্য আপনি জাতীয় দলে খেলেন। নইলে তো আমিও ছয়টা বলের মধ্যে দুইটা বল লাইনে ফেলতে পারতাম!”

প্রথম টেস্টের প্রথম দিন ১ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় দিন ৩ উইকেটে ৪৯৬ রানে ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। ৬ উইকেটে ২৪৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ফাফ দু প্লেসির দল।

দুই ইনিংস মিলিয়ে ২০২ ওভার বোলিং করে মাত্র ৯টি উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ, তার একটি রান আউট। বোলারদের এই পারফরম্যান্সে ভীষণ হতাশ অধিনায়ক।

“আপনি একটা সেশনে উইকেট না পেলেও রানটা বেঁধে রাখতে পারেন। সেটা দলের জন্য ভালো হয়।”

বাংলাদেশের বোলাররা অনভিজ্ঞ এই অজুহাত এখন আর দেখানোর কোনো সুযোগ দেখেন না মুশফিক। মর্নে মর্কেল বাদ দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার বাকি বোলারদের কেউ ২০১৫ সালের আগে কোনো টেস্ট খেলেনি। বাংলাদেশের শফিউল ইসলাম টেস্ট খেলছেন সেই ২০১০ থেকে, একাদশের বাইরে থাকা রুবেল হোসেন খেলছেন তারও এক বছর আগে থেকে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতার কোনো ছাপ পড়ে না তাদের বোলিংয়ে।

“আপনি ওদের বোলিং লাইন আপ দেখেন, ওরা যে খুব বেশি ম্যাচ খেলেছে তাও না। অনভিজ্ঞতার অজুহাত আমরা আর কত দিন দিব? আমার মনে হয়, এভাবে ৫-১০ বছর খেললে দেখা যাবে নামের পাশে ৫/১০টা টেস্ট রয়েছে। যদি ভালো নাই করে তখন আমাদের আরেক জনের কথা চিন্তা করতে হবে।”

টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা তাসকিন আহমেদ বলেছিলেন, নিজেদের বোলিংয়ে তারা খুশি। মুশফিকের কাছে এটা ডানহাতি পেসারের ব্যক্তিগত মতামত।

“আপনি যদি এতটুকু করেই মনে করেন খুব ভালো করেছেন, তাহলে যতই উন্নতি করতে চান সেটা আপনাকে রুখে দিবে। আমার মনে হয়, ৫/৬ উইকেট পেলেও অনেক জায়গা থাকে উন্নতি করার।”

পচেফস্ট্রুম টেস্ট শেষে মুশফিকের উপলব্ধি, ব্যাটিং-বোলিংয়ের বাজে এক প্রর্দশনী দেখিয়েছেন তারা। দায়িত্বশীল হলেই কেবল এখান থেকে উত্তরণ সম্ভব। ব্লুমফন্টেইনে পরের টেস্টে সবার মাঝে সেই তাড়না দেখতে চান অধিনায়ক।