এক সেশনও টিকল না বাংলাদেশ

পচেফস্ট্রুম টেস্টের শেষ দিনের শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে ৩৩৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2017, 08:03 AM
Updated : 2 Oct 2017, 06:13 PM

লাঞ্চের আগেই শেষ

আশা ছিল সারদিন খেলার। বাংলাদেশ খেলতে পারল না এক সেশনও। পঞ্চম দিন সকালে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস।

একটি চার ও ছক্কায় একটু লড়াই করছিলেন মিরাজ। কিন্তু আরেক প্রান্তে শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমানকে ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করে দিলেন মহারাজ।

৯০ রানেই অলআউট বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৩৩৩ রানে।

৩ উইকেটে ৪৯ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল আর ১৭.১ ওভার খেলেই। শেষ দিনে ৩৫ রানে পড়েছে শেষ ৭ উইকেট।

টেস্টে এই নিয়ে নবমবার একশর নিচে গুটিয়ে গেল বালাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে প্রথমবার। ২০০২ সালে ১০২ রান ছিল প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আগের সর্বনিম্ন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নিজেদের মতো উইকেট পেয়েও কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই টিভি ধারাভাষ্যে মাইক হেইসম্যান মনে করিয়ে দিলেন, নিষ্প্রাণ উইকেটে টস জিতে বোলিং নিয়েছিল বাংলাদেশ, যেটি ছিল ভয়াবহ ভুল। বাংলাদেশ হেরে গেছে মানসিকতায়।

রান আউট শফিউল

এমনিতেই উইকেট যাওয়ার মিছিল, তার মাঝেই উপহার একটি রান আউট। অযথা দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে গেলেন শফিউল ২ রানে।

বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ৭৫।

তাসকিনেরও বিদায়

উইকেটে পড়ে থাকার মানসিকতা নেই লোয়ার অর্ডারদেরও। টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বলে ফ্লিক করতে চাইলেন তাসকিন। আড়াআড়ি ব্যাটে লাগল না বল। এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারলেন না তাসকিন।

৪ রানে ফিরলেন তিনি। বড় ব্যবধানে হারার পথে বাংলাদেশ। রান ৮ উইকেটে ৭১।

এবার গেলেন সাব্বির

একের পর এক উইকেট পড়ছে, তার পরও শট খেলায় কমতি নেই! কেশভ মহারাজের জোরের ওপর করা ফুল লেংথ বলে সুইপ খেলতে গেলেন। ব্যাটে-বলে হলো না। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ারের আঙুল উঠেছে সঙ্গে সঙ্গেই।

৪ রানে আউট হলেন সাব্বির। শেষ দিন সাতসকালেই নেই বাংলাদেশের ৪ উইকেট। রান ৭ উইকেটে ৬৮।

রাবাদার আরেকটি

ভেতরে ঢোকা বলটি কি মনে করে না খেলে ছেড়ে দিলেন লিটন দাস, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। বল লাগল প্যাডে, উঠল আম্পায়ারের আঙুল। লিটন রিভিউ নিয়েছিলেন, বাঁচার প্রশ্নই ওঠেনা।

মর্কেলের চোটে দল তাকিয়ে ছিল রাবাদার দিকে। কী দারুণ ভাবেই না সেটির প্রতিদান দিচ্ছেন তরুণ ফাস্ট বোলার! চার ওভারের মধ্যে নিয়ে নিলেন ৩ উইকেট।

৪ রানে আউট হলেন লিটন। ৪২৪ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ৬৭।

আবার রাবাদার ছোবল

প্রথম ইনিংসের মত আবারও প্লেড অন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটে লেগে বল ছোবল দিল স্টাম্পে। দিনের প্রথম উইকেটের মত দ্বিতীয় উইকেটও রাবাদার।

দিনের দ্বিতীয় বলে চার দিয়ে শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে এরপরই ছিলেন বেশ নড়বড়ে। ব্যাটিংয়ে ছিল অস্বস্তি। লেংথ বলটিতে মাহমুদউল্লাহ খেলবেন না ছাড়বেন ভাবতে ভাবতেই শরীর থেকে দূরে ডিফেন্স মতো করলেন। আসলে হলো না কিছুই। ব্যাটের কানা দিয়ে ব্যাট ও শরীরের বিশাল ফাঁক গলে বল স্টাম্পে।

৯ রানে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৬২।

শুরুতেই নেই মুশফিক
 
শেষ দিনের কঠিন পরীক্ষায় সামনে থেকে নেতৃত্বে দিতে পারতেন যিনি, সেই অধিনায়কই আত্মসমর্পণ করলেন সবার আগে। দিনের শুরুতেই আউট মুশফিকুর রহিম।
 
কাগিসো রাবাদার সেটি প্রথম ওভার। দ্বিতীয় বলটিই শর্ট অব লেংথ থেকে বাড়তি লাফিয়ে ছোবল দিয়েছিল মুশফিকের গ্লাভসে। এক বল পর আবার বাড়তি বাউন্স। এবার শরীর থেকে দূরে ব্যাট বাড়িয়ে দিলেন মুশফিক। স্লিপে মাথার ওপর থেকে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নিলেন হাশিম আমলা।
 
১৬ রানে আউট মুশফিক। ৪২৪ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ৫৫।

রৌদ্রোজ্জ্বল পচেফস্ট্রুম

সকাল থেকে পচেফস্ট্রুমে চকচকে রোদ। বলা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার আশার আলো! আগের দিন পুরো একটি সেশন গেছে বৃষ্টির পেটে। শেষ দিনের শুরুটায় অন্তত আবহাওয়াকে পাশে পাচ্ছে স্বাগতিকরা।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির শঙ্কা আছে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত। সেটিও অবশ্য বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি স্বস্তির খবর নয়। হাতে উইকেট যে মাত্র ৭টি। ৪২৪ রানের লক্ষ্যে নেমে আগে দিন প্রথম ওভারেই হারিয়েছে তারা তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হককে। পরে বিদায় নিয়েছেন ইমরুল কায়েসও। বাংলাদেশ দিন শেষ করেছিল ৩ উইকেটে ৪৯ রান নিয়ে।

আগের দিনের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে শেষ দিনে খেলা হবে ৯৮ ওভার।

বাংলাদেশের স্বস্তি, শেষ দিনে বোলিং করতে পারবেন না মর্নে মর্কেল।

তবে কাগিসো রাবাদার পাশাপাশি বড় চ্যালেঞ্জ হবেন কেশভ মহারাজ। উইকেটের দু পাশেই খানিকটা ক্ষত আছে। যেটা কাজে লাগাতে পারেন বাঁহাতি এই স্পিনার। উইকেট যদিও পঞ্চম দিন বিবেচনায় ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। ম্যাচ বাঁচাতে হলে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বিরদের খেলতে হবে বড় ইনিংস। লড়াই করতে হবে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায়।