কিন্তু ২৮ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যবধান আরও কমানোর সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ। সন্তুষ্টি কেবল দ্বিতীয়বার স্বাগতিকদের ব্যাট করতে পাঠানোতেই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আগে দুইবার পরে ব্যাটিং করে দুইবারই ফলোঅনে পড়েছিল বাংলাদেশ।
তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে অতিথিদের ৩২০ রানে গুটিয়ে দিয়ে প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের লিড নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এবারই প্রথম দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হচ্ছে তাদের।
পচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে শনিবার ৩ উইকেটে ১২৭ রান নিয়ে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের শুরুতে মর্নে মর্কেল, কাগিসো রাবাদার আগুনে বোলিং সামাল দিতে হয় তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হককে। সহজে আসেনি কোনো রান। প্রতিটা বলই তাদের ভাবিয়েছে, পরীক্ষা নিয়েছে।
রিভার্স সুইংয়ে ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়েছেন রাবাদা। তার দুর্দান্ত এক ওভারে তিনবার কোনোমতে বেঁচেছেন মুমিনুল। পরে অবশ্য তামিমকে নিয়ে নিয়ে রাবাদার এক ওভারে নিয়েছেন ১৭ রান।
বাউন্সারে অতিষ্ঠ করেছেন মর্কেল, তার প্রথম চারটি ওভারই ছিল মেইডেন। কঠিন সেই সময়টা পার করে ফিরেছেন তামিম। এদিন প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসেই প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো।
লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ের বাইরে অন্য কোথাও ব্যাটিং করা তামিম। তার বিদায়ে ভাঙে ৫৫ রানের জুটি।
এই ম্যাচ দিয়ে টেস্টে ফেরা মাহমুদউল্লাহ শুরুতে ছিলেন নড়বড়ে। ঝুঁকি নিয়ে শট খেলেছেন। সেভাবে এক-দুই বের করতে পারেননি। রানের চাকা সচল রাখতে তার সহায় ছিল বাউন্ডারি। ২৬ রানে কেশভ মহরাজের বলে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে জীবন পেয়েছেন। অন্য প্রান্তে যথারীতি অবিচল ছিলেন মুমিনুল। রিভার্স সুইং, শর্ট বল কিছুই দমাতে পারেনি তাকে।
মুমিনুলের ব্যাটে ছিল অনেক দূর যাওয়ার ইঙ্গিত। টানা দুই চার হাঁকিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন মহারাজকে। শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন তার স্পিনেই। সামনে না পিছনে খেলবেন এনিয়ে দ্বিধায় ঠিক মতো খেলতে পারেননি মুমিনুল। ক্যাচ চলে যায় ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে এইডেন মারক্রামের হাতে।
১৫০ বলে ১২টি চারে ৭৭ রান করে ফিরেন মুমিনুল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ও তাদের মাটিতে এটাই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ।
মুমিনুলের বিদায়ে ৬৯ রানের জুটি ভাঙা বাংলাদেশের সামনে তখনও ফলো-অনের চোখ রাঙানি। সাব্বির রহমানের সঙ্গে ৬৫ রানের জুটিতে সেটা অনেকটাই দূর করে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে গেছেন তিনি। শুরু থেকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন সাব্বির।
দুই জন বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৫ উইকেটে ২৯২ রানে। অলিভিয়েরের বলে সাব্বির বোল্ড হলে ভাঙে প্রতিরোধ। ভেতরে ঢোকা শর্ট বল শরীরের খুব কাছে খেলতে গিয়ে ঠিক মতো পারেননি তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প।
দারুণ এক ছক্কায় দক্ষিণ আফ্রিকায় দলকে প্রথমবারের মতো তিনশ রানে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ফিরেন যখন তাকে সবচেয়ে থিতু মনে হচ্ছিল।
১২৪ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৬ রান করে মাহমুদউল্লার বিদায়ের পর বেশিদূর এগোয়নি বাংলাদেশের সংগ্রহ। শেষের দিকে মুস্তাফিজুর রহমানের অপরাজিত ১০ রানে ৩২০ পর্যন্ত যায় অতিথিরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। সেরা ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে করা ৩২৬ রান।
২৮ রানে বাংলাদেশের শেষ ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বিশাল লিড নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩ উইকেটে ৪৯৬ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল দলটি।
৯২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার মহারাজ। দুটি করে উইকেট নেন মর্কেল ও রাবাদা। অলিভিয়ের ও ফেলুকওয়ায়োর শিকার একটি করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪৯৬/৩ ডি.
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৯.১ ওভারে ৩২০ (লিটন ২৫, ইমরুল ৭, মুমিনুল ৭৭, মুশফিক ৪৪, তামিম ৩৯, মাহমুদউল্লাহ ৬৬, সাব্বির ৩০, মিরাজ ৮, তাসকিন ১, শফিউল ২, মুস্তাফিজ ১০*; মর্কেল ২/৫১, রাবাদা ২/৮৪, মহারাজ ৩/৯২, অলিভিয়ের ১/৫২, ফেলুকওয়ায়ো ১/১৮, মারক্রাম ০/১৩)