তামিম, মুমিনুলদের সামনে কঠিন পথ

দিনের প্রথম বলটি হওয়ার আগে উইকেটের পেছন থেকে লিটন দাস মনে করিয়ে দিলেন, আজকে নতুন একটি দিন। বোলাররা শুনলেন কিন্তু নতুন দিনে নতুন শুরু এনে দিতে পারলেন না। ছন্নছাড়া বোলিংয়ের পর ব্যাটিংও খুব একটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। সাদা পোশাকে আরও একটি সাদামাটা দিন কেটেছে বাংলাদেশের।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতপচেফস্ট্রুম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2017, 02:15 PM
Updated : 30 Sept 2017, 08:18 AM

শেষ সেশনে ব্যাট করে বাংলাদেশ হারিয়েছে তিন উইকেট। লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম আউট হয়েছেন থিতু হয়ে। বাজে সময় আরেকটু লম্বা করে ৭ রানে ফিরেছেন ইমরুল কায়েস।

দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২৭/৩। প্রতিপক্ষকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাতে এখনও ১৭০ রান চাই।

চা-বিরতিতে আচমকা ইনিংস ঘোষণা করে ছোটোখাটো এক চমক দেখান ফাফ দু প্লেসি। সেটাই ব্যাটিং শুরুর আগে বড় ধাক্কা হয়ে আসে অতিথিদের জন্য। ৪৯ মিনিট মাঠে না থাকায় ইনিংস উদ্বোধন করতে পারেননি তামিম ইকবাল!

চোটের জন্য সৌম্য সরকার না থাকায় ওপেনিংয়ে ইমরুলের ফেরা নিশ্চিত ছিল। তামিম না থাকায় প্রথমবারের মতো ইনিংস উদ্বোধন করেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান লিটন দাস।

১৪৬ ওভার কিপিং করে ব্যাটিংয়ে নামা লিটনের ব্যাটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। ক্লান্তির জন্যই হয়তো ছেড়ে দেওয়ার মতো বলে খোঁচা মেরে ফিরেন চারটি চারে ২৫ করে।

তার আগেই ৭ রানে বিদায় নেন ইমরুল। কাগিসো রাবাদার শর্ট বল গ্লাভস ছুয়ে জমা পড়ে এইডেন মারক্রামের হাতে।

একাদশ ওভারে ৩৬ রানে উদ্বোধনী জুটিকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে মুশফিক ও মুমিনুল হকের ব্যাটে। ৬ ও ১৫ রানে কেশভ মহারাজের বলে দুইবার ডিন এলগারের হাতে জীবন পান অধিনায়ক।

জীবন পেয়ে পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান সংগ্রহ করেন মুশফিক। তাকে ফিরিয়ে প্রতিরোধ ভাঙেন মহারাজই। বাঁহাতি স্পিনারের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় মুশফিকের ৪৪ রানের ইনিংস।

আস্থার সঙ্গে খেলছেন মুমিনুল। প্রথমবারের মতো টেস্টে ওপেনিংয়ের বাইরে, পাঁচ নম্বরে নেমেছেন তামিম। দুই বাঁহাতির কাঁধে অনেক দায়িত্ব। তারা খেলছেনও দায়িত্ব নিয়ে। মুমিনুল অপরাজিত ২৮ রানে, দিনের শেষ বলে ছক্কা হাঁকানো তামিমের রান ২২।   

এর আগে অতিথিদের নির্বিষ বোলিং, এলগারের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং আর হাশিম আমলার দারুণ এক সেঞ্চুরিতে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অনেকটা আচমকাই চা-বিরতিতে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সে সময়ে তাদের রান ছিল ৪৯৬। পাঁচ সেশনে ১৪৬ ওভার বল করে অতিথিরা নিতে পেরেছে মোটে তিনটি উইকেট।

সেনওয়েস পার্কে শুক্রবারের প্রথম সেশনটা বাংলাদেশের জন্য শুধুই হতাশার। তরতর করে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের দিনের শতরানের জুটিকে দুইশ রান নিয়ে যান এলগার ও আমলা।

টেস্টে ২৭তম সেঞ্চুরি পাওয়া আমলা ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। চোখ জুড়ানো সব শটে দ্রুত রান তুলেছেন তিনি। অনায়াস ব্যাটিংয়ে মনোবল ভেঙেছেন বাংলাদেশের বোলারদের। আমলার রানের তোড় সামলাতে ক্রমেই সীমানায় ফিল্ডার বাড়াতে হয়েছে মুশফিকুর রহিমকে। 

নিজেকে নিংড়ে দেওয়া মুস্তাফিজুর রহমানকে পর্যন্ত অনায়াসে খেলেছেন আমলা। গালির পাশ দিয়ে আদায় করে নিয়েছেন একের পর এক বাউন্ডারি। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে একটু আড়ালেই পড়েছিলেন বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এলগার। তবে একটু একটু করে এগোচ্ছিলেন তিনিও।

প্রথম ঘণ্টায় ১৫ ওভারে ৭০ রান সংগ্রহ করেন এলগার-আমলা। উইকেটশূন্য প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে ১১৩।

দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে মিলে সাফল্য। রানের গতি বাড়াতেই হয়তো অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক খেলতে চেয়েছিলেন আমলা। শফিউল ইসলামের স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে বাজে শটে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজকে।

২০০ বলে ১৭টি টি চার আর একটি ছক্কায় ১৩৭ রান করে আমলা ফেরায় ভাঙে ২১৫ রানের দারুণ জুটি। তার বিদায়ের পর রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন এলগার।

ক্যারিয়ার সেরা ১৪০ ছাড়িয়ে এলগার ছিলেন প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির পথে। মুস্তাফিজের দারুণ এক শর্ট বলে তাকে ফিরতে হয় মাত্র ১ রান দূর থেকে। ৩৮৮ বলে ১৫টি চার আর তিনটি ছক্কায় ১৯৯!

মুস্তাফিজকে পরপর দুটি চার হাঁকিয়ে শুরু করেন দু প্লেসি। শুরুতে নড়বড়ে ব্যাটিং করা টেম্বা বাভুমাও ফিরে পান নিজেকে। দুই জনে অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৫১ রানের জুটি। ইনিংস ঘোষণার সময় বাভুমা খেলছিলেন ৩১ রানে, অধিনায়ক দু প্লেসি ২৬ রানে।

দ্বিতীয় সেশনটিই এখন পর্যন্ত পচেফস্ট্রুম টেস্টে বাংলাদেশের সেরা সেশন। ২৯ ওভারে ৮৫ রান দিয়ে নেওয়া গেছে দুটি উইকেট। ফিল্ডিং ছিল আক্রমণাত্মক, বোলিংয়ে ছিল পরিকল্পনার ছাপ। তারই ফল পেয়েছে বাংলাদেশ। সেটাই দেখিয়েছে, নিজেদের পরিকল্পনায় অটল থাকলে চিত্রটা ভিন্নও হতে পারত। 

২৭ ওভার বল করে মুস্তাফিজ ৯৮ রানে নেন ১ উইকেট। শফিউল ২৫ ওভারে ৭৪ রান দিয়ে একটি। অফ স্পিনার মিরাজ ৫৬ ওভার বল করে ১৭৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৪৬ ওভারে ৪৯৬/৩ ইনিংস ঘোষণা (এলগার ১৯৯, মারক্রাম ৯৭, আমলা ১৩৭, বাভুমা ৩১*, দু প্লেসি ২৬*; মুস্তাফিজ ১/৯৮, শফিউল ১/৭৪, মিরাজ ০/১৭৮, তাসকিন ০/৮৮, মাহমুদউল্লাহ ০/২৪, মুমিনুল ০/১৫, সাব্বির ০/১৫)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৪ ওভারে ১২৭/৩ (লিটন ২৫, ইমরুল ৭, মুমিনুল ২৮*, মুশফিক ৪৪, তামিম ২২*; মর্কেল ১/৩৪, রাবাদা ১/২৩, মহারাজ ১/৩৮, অলিভিয়ের ০/২৭, ফেহলুকওয়ায়ো ০/৪)