মাশরাফির ফেরার দিনে নাঈম-ধীমানের সেঞ্চুরি

ঘাসে ভরা উইকেট। যদিও রঙ যতটা সবুজ, তার চেয়ে বেশি বাদামী। এরপরও পেসারদের জন্য লোভনীয়। টস জিতে তাই খুলনার বোলিং। সাড়ে তিন বছর পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফিরে শুরুতেই মাশরাফি মুর্তজার বোলিং। করলেন ভালোই, তবে উইকেট মিলল না। বরং মাশরাফির ফেরার দিনটি সেঞ্চুরিতে রাঙালেন নাঈম ইসলাম ও ধীমান ঘোষ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2017, 03:14 PM
Updated : 15 Sept 2017, 03:14 PM

খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে শুক্রবার জাতীয় লিগের প্রথম স্তরের ম্যাচের প্রথম দিনে খুলনার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩২৫ রান তুলেছে রংপুর।

প্রথম স্তরের অন্য ম্যাচে কক্সবাজারে ভেজা আউটফিল্ডের কারণে ঢাকা-বরিশাল ম্যাচে একটি বলও হয়নি প্রথম দিনে।

গত মৌসুমের শেষ দিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে ৬ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরি করেছিলেন নাঈম। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান নতুন মৌসুমের প্রথম দিনটিতেও করলেন সেঞ্চুরি।

ধীমান যখন নেমেছিলেন, দল তখন বেশ অস্বস্তিতে। সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণে সেঞ্চুরি করেছেন ওয়ানডের গতিতে।

দুজনের দুর্দান্ত জুটিতেই প্রথম দিনটি নিজেদের করে নিতে পেরেছে রংপুর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২২তম সেঞ্চুরি করে নাঈম অপরাজিত ১২০ রানে। দ্বাদশ সেঞ্চুরিতে ধীমান ফিরেছেন ১০৫ রানে।

ঘাসে ভরা উইকেট দেখেই টস জিতে বোলিং নিয়েছিলেন খুলনা অধিনায়ক আব্দুর রাজ্জাক। শুরুতে বেশ সুইং পেয়েছন মাশরাফি ও আল আমিন হোসেন।

মাশরাফিকে দেখেশুনে খেলেছে খুলনার টপ অর্ডার। কিন্তু এড়াতে পারেনি আল আমিনের ছোবল। বাঁহাতি জাহিদ জাভেদকে আউট সুইঙ্গারে ফেরান আল আমিন। বাড়তি বাউন্সে গালিতে ক্যাচ দেন তিনে নামা মাহমুদুল হাসান।

তবে মরে যাওয়া বাদামী ঘাসে খেলা অনেকটা সহজ হয়ে আসে ক্রমেই। প্রথম ঘণ্টার পর থেকেই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। ওপেনার সায়মন আহমেদ ও নাঈম তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৭৩ রানের জুটি।

৫০ ছোঁয়ার পরই সায়মনকে বোল্ড করে দেন রাজ্জাক। খানিক পরই তুলে নেন আরেকটি বড় উইকেট। উইকেটে যাওয়ার পর পরই বেরিয়ে এসে রাজ্জাককে ওড়াতে চেয়েছিলেন নাসির হোসেন। খেসারত দিলেন মিড অনে ক্যাচ হয়ে। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া ক্রিকেটার আউট হলেন শূন্য রানেই।

পঞ্চম উইকেটে আরিফুল হককে নিয়ে নাঈমের জুটি ৮৩ রানে। আক্রমণাত্মক আরিফুল খেলছিলেন অনেক ধীরস্থির ভাবে। তবু বড় করতে পারেননি ইনিংস। ৩০ রানে তাকে ফেরান আল আমিন।

রংপুরের রান তখন ৫ উইকেটে ১৭৭। মোমেন্টাম খুলনার। উইকেটে গিয়েই দারুণ সব শট খেলে মোমেন্টাম কেড়ে নেন ধীমান। এই জুটিতে নাঈম স্রেফ দিয়ে গেছেন সঙ্গ। ধীমান বাড়িয়েছেন রান।

সেঞ্চুরিতে আগে পৌঁছান অবশ্য নাঈমই। আফিফ হোসেনকে কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ১৮৬ বলে। ২২তম সেঞ্চুরি করা নাঈমের সামনে আছেন কেবল ২৩ সেঞ্চুরি করা তুষার।

ধীমান পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৫৭ বলে। সেখান থেকে যে সেঞ্চুরিতে যেতে পারলেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবেন খুলনার ফিল্ডারদের প্রতি। ৫৮ রানে আফিফের অফ স্পিনে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন। ৬৮ রানে রাজ্জাকের বলে সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ ছেড়েছেন নুরুল হাসান।

ধীমান সেটির সুযোগ নিয়েছেন দ্বিতীয় নতুন বলে রানের গতি বাড়িয়ে। সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১০৯ বলে।

শেষ পর্যন্ত ধীমানের আউটেই ভেঙেছে জুটি। ১১৭ বলে ১০৫ রান করে আউট হয়েছেন রাজ্জাকের বলে।

১৪৮ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে নাঈমের রান ছিল ৪০। ধীমানের ১০৫। স্থিতধি বলেই হয়ত দিন শেষে টিকে নাঈম। প্রায় ৬ ঘণ্টা উইকেটে থেকে ২২৫ বলে অপরাজিত ১২০। ৯টি চারের সঙ্গে রাজ্জাকে লং অন দিয়ে একটি ছক্কা।

অনুশীলনের জন্য খেলা ম্যাচে প্রথম দুই স্পেলে অনুশীলন ভালোই হয়েছে মাশরাফির। ১১ ওভারে রান দিয়েছিলেন ৩৪। উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছেন কয়েকবার। ক্লান্তিতে শেষ বিকেলের ২ ওভারে রান দিয়ে ফেলেন ২২।

আল আমিন ও রাজ্জাক বল হাতে টেনেছেন খুলনাকে। মূল বোলারদের আরেকজন, পেসার আশিকুজ্জামান ছিলেন নিষ্প্রভ। তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ৮ বোলারকে বোলিং করায় খুলনা। লাভ হাতে খুব বেশি হয়নি।

উইকেট অবশ্য ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো এখন। রংপুর যেমন রান আরও বাড়াতে চাইবে, তেমনি আশা আছে খুলনার জন্যও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর ১ম ইনিংস: ৮৭.৩ ওভারে ৩২৫/৬ (সায়মন ৫০, জাভেদ ২, মাহমুদুল ৭, নাঈম ১২০*, নাসির ০, আরিফুল ৩০, ধীমান ১০৫; মাশরাফি ০/৫৬, আল আমিন ৩/৫০, রাজ্জাক ৩/৮৭, আশিকুজ্জামান ০/৩৬, জিয়াউর ০/৬, আফিফ ০/৬১, রবি ০/৫, তুষার০/২০)।