মুমিনুলকে আটে নামানোর সিদ্ধান্ত ‘ট্যাকটিক্যাল’

চারে নামলেন নাসির হোসেন। খানিকটা বিস্ময়কর। পাঁচে সাকিব আল হাসান, ছয়ে মুশফিকুর রহিম। মুমিনুল হক কোথায়? এমনকি সাতেও সাব্বির রহমানকে দেখে অনেকের বিস্ময় চূড়ায়। মুমিনুল কেন আট নম্বরে! ব্যাটিংয়ে হতাশার দিনে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটির উত্তর দিলেন মুশফিকুর রহিম ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2017, 01:33 PM
Updated : 7 Sept 2017, 04:18 PM

আগের দিন ফিল্ডিংয়ের সময় গায়ে বল লেগেছিল মুমিনুলের। তবে অধিনায়ক জানালেন, চোট নয়, চিন্তা-ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

“আসলে চিন্তা ছিল ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন করার। এখন আটে নেমে মুমিনুল ভালো খেলেছে বলে হয়তো বলতে পারেন আরেকটু আগে কেন নামানো হয়নি। তবে আমরা তো ফল দেখে চিন্তা করি না। দলের যেটায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেটা করার চেষ্টা করি আমরা।”

“আটে খেলা, সত্যি বলতে, আমাকেও যদি খেলতে বলেন, খুবই কঠিন। কোনো ব্যাটসম্যানেরই আটে খেলা যথার্থ নয়। তবে যেটা বললাম, সিদ্ধান্তটি ছিল ট্যাকটিকাল।”

সেই ট্যাকটিক্যাল ব্যাপারটির বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিলেন মুশফিক।

“চার নম্বরে গত কয়েক টেস্টে স্পেশালিস্ট সেভাবে নেই আমাদের। সাব্বির খেলেছে। ওর কাছ থেকে যতটা পাওয়ার, আমরা পাচ্ছিলাম না। সাব্বির যেহেতু সাত নম্বরে খেলে ভালো রান করেছে, আমরা চেয়েছি ওকে ওই জায়গায় রাখতে। আর সাকিব সবসময় পাঁচে খেলে।”

“তিন নম্বরে মুমিনুল আগে খেলেছে। তবে আমদের যেহেতু তিনজন ওপেনার খেলে, ওই জায়গাটা বদলানো কঠিন হয়ে যায়। আমরা চিন্তা করেছি, অন্তত মাঝে একটা ডানহাতি ব্যাটসম্যান গেলে ওদের ছন্দের সমস্যা হতে পারে।”

চারে বিশেষজ্ঞ নেই বললেন বটে, অথচ চার নম্বরে মুমিনুলের রেকর্ড দুর্দান্ত। কারিয়ার গড় এই পজিশনে ষাটের বেশি। এই টেস্টেও প্রথম ইনিংসে করেছেন ৩১ রান। এবার খানিকটা অসহায় শোনা গেল মুশফিকের কণ্ঠ।

“এই প্রশ্ন করতেই পারেন, মুমিনুলই নিচে কেন? কিন্তু একজন ব্যাটসম্যানকে তো যেতেই হবে নিচে।”

প্রথম ইনিংসে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের কথা ভাবেনি দল। প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানই খেলিয়েছে বাঁহাতি। মুশফিক জানালেন, উইকেট তখন তুলনামূলক সহজ ছিল বলেই ব্যাটিং অর্ডারে নাড়াচড়া করা হয়নি।

“প্রথম ইনিংসে আমরা মনে করেছি যে উইকেট এমন কোনো কঠিন ছিল না যে বাঁহাতিদের জন্য কঠিন হবে। কেউ কিন্তু স্লিপে বা কাভারে বা উঁচিয়ে মারতে গিয়ে আউট হননি। সব সোজা বল মিস করেছে। বাঁহাতি বলে সমস্যা হয়নি।”

দ্বিতীয় ইনিংসে চারে সুযোগ পেয়েও নাসির হোসেন কাজে লাগাতে পারেননি, মুশফিক ইঙ্গিত দিলেন সেই ব্যর্থতার দিকে।

“অনেকে প্রশ্ন করতে পারে সাব্বির সাতে কেন। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ও সাতেই ব্যাট করেছে এবং ভালো করেছে। আমরা চেষ্টা করি, টিম ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করে, যে ব্যাটসম্যান আছে সেভাবে পরিকল্পনা করার। বাস্তবায়ন সেভাবে না হওয়া মানেই সিদ্ধান্তে ভুল ছিল, এমনটি নয়। বরং যাদের প্রমোশন দেওয়া হয়েছে, তারা যদি আরও বেশি নিবেদন দেখাতে পারত, তাহলে অন্যরকম হতে পারত।”

ক্যারিয়ারে আগে সব সময় তিন-চারের বাইরে কখনও খেলেননি মুমিনুল। এই টেস্টে এসেছিলেন প্রবল চাপ নিয়ে। দুই ইনিসে খুব বড় কিছু করতে পারেননি। তবে প্রথম ইনিংসে ৩১ রানের পথে খেলেছেন স্বচ্ছন্দে। দ্বিতীয় ইনিংসে আটে নামানো হলেও করেছেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান। এই পারফরম্যান্সে মুমিনুলকে নিয়ে, মুমিনুলের জন্য আশা দেখছেন অধিনায়ক।

“ও অফ স্পিন খেলতে পারে না বলে কথা ছিল। কিন্তু সে দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনারকে খেলে। যতক্ষণ ছিল, ভালো খেলেছে। ভবিষ্যতে আমরা চেষ্টা করব এগুলো মাথায় রাখতে এবং সেভাবেই পরিকল্পনা গড়তে।”

আটে নামার দিনে হয়ত এটিই মুমিনুলের সান্ত্বনা। ভবিষ্যত পরিকল্পনায় অন্তত জায়গা পেতে পারেন!