ব্যাটিং দুঃস্বপ্নে আশার সমাধি

দিনের শুরুটা ছিল স্বপ্নময়। অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেটের পতন ১১ বলেই। রান যোগ হয়নি একটিও। কে জানত, এরপরই অপেক্ষায় ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন! একের পর এক ব্যাটসম্যানের আসা-যাওয়ার মিছিল।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2017, 10:14 AM
Updated : 7 Sept 2017, 04:17 PM

প্রথম ইনিংসের ঘাটতি পোষানোর অনেক আগেই শেষ দ্বিতীয় ইনিংসের আধেক। এরপর ছোট দু-একটি জুটি আর খানিক লড়াইয়ে বাঁচল মান। তবে টিকল না আশা। ম্যাচের শেষ ইনিংসের আগেই অনেকটাই শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন।

দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ হারল ৭ উইকেটে। দারুণ জয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষ করল সমতায়।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ১৫৭ রানেই। প্রথম ইনিংসে ৭২ রানের লিড পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল মাত্র ৮৬ রান।

সেই রান তাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং আক্ষেপ বাড়িয়ে দিল আরও। ছোট রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া হারাল ৩ উইকেট। লক্ষ্য আর ৮০-১০০ রান বেশি দিতে পারলে হতে পারতো দারুণ লড়াই!

সেই লড়াইটা জমতে দেননি ন্যাথান লায়ন। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট। ম্যাচে ১৫৪ রানে ১৩ উইকেট, এই অফ স্পিনারের ম্যাচ সেরা বোলিং। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো বোলারের সেরা বোলিং। এশিয়ায় কোনো অস্ট্রেলিয়ান বোলারের সেরা বোলিংও।

আলাদা করে বলতে হবে প্যাট কামিন্সের কথাও। পেস-প্রতিকূল উইকেটে আবারও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। প্রথম স্পেলে দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন, পরে ফিরে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিমের উইকেটও।

ব্যাটিং হতাশার মিছিলে শুরুটা ছিল সৌম্যকে দিয়ে। প্রথম ইনিংসের চোয়ালবদ্ধ সৌম্য এদিন উধাও। দারুণ দুটি শট খেলে শুরু করেছিলেন। কিন্তু কামিন্সের গতি, বাউন্স ও লাইনের সামনে মনে হলো অসহায়।

কামিন্সের সামনে এদিন খানিকটা নড়বড়ে ছিলেন তামিম। তবে ওই সময়টুকু পার করে উইকেট দিয়ে এলেন লায়নকে।

আগের টেস্টে লায়নকে বেরিয়ে এসে খেলে বেশ সফল হয়েছিলেন। এদিনও একটি চার মেরে ইঙ্গিত দিলে একই পথে এগোনোর। তবে এবার জয় লায়নের। তামিমকে বাইরে টেনে এনে উপহার দিলেন স্টাম্পিং।

তখনও অনুমান করা যায়নি সামনে কী অপেক্ষায়। দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই ভীষণ দৃষ্টিকটু শটে বিদায় ইমরুল কায়েস। ত্রাতা হতে পারলেন না সাকিব আল হাসানও। বিস্ময়করভাবে চার নম্বরে উন্নীত নাসির হোসেন ব্যর্থ সুযোগ কাজে লাগাতে।

ইনিংসের বয়স তখন ২০ ওভারও হয়নি। দলের রান ৫ উইকেটে ৪৩। বড় রান তুলে চ্যালেঞ্জ জানানো বহুদূর, ইনিংস পরাজয় এড়াতে তখনও চাই ২৯ রান!

ষষ্ঠ উইকেট জুটি বাংলাদেশকে লিডে নিয়ে গেল। লাঞ্চ পর্যন্ত নিরাপদে কাটল। তবে দলের রান তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগে সেই জুটিও শেষ। সাব্বির রহমানের (২৪) বিদায়ে ভাঙল ৫৪ রানের জুটি।

সাব্বির যেভাবে খেলছিলেন, আউটটি যে কোনো সময় অবধারিতই মনে হচ্ছিলো। বিপর্যয়েও খেলছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ সব শট। এমনি লাঞ্চের আগে ওভারেও পরপর দুই বলে খেললেন রিভার্স সুইপ। শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে এসে স্টাম্পড।

ক্যারিয়ার জুড়ে তিন-চারে খেলে যাওয়া মুমিনুল হকের দেখা মিলল আটে। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে স্পিন ভালো খেলছিলেন দুজন। স্টিভেন স্মিথ ফিরিয়ে আনলেন পেস। ভাঙল এই প্রতিরোধও। কামিন্সের অফ স্টাম্প ঘেঁষা বলে খোঁচা মারার লোভ সামলাতে পারলেন না মুশফিক। অধিনায়কের ১২৮ মিনিটের লড়াইয়ের সমাপ্তি ৩১ রানে।

একটু পর একই পথের পথিক মুমিনুল (২৯)। দলকে টানার দায়িত্ব মাঠে ফেলে আসলেন সুইপ করতে গিয়ে। লায়ন পূর্ণ করলেন ম্যাচে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট।

মেহেদী হাসান মিরাজ চেষ্টা করেছেন দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের। ছিল না তাকে সঙ্গ দেওয়ার কেউ। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্যটাকে নেওয়া গেল না তিন অঙ্কেও।

স্মিথ-ওয়ার্নারদের উইকেটে থেকে জয় নিয়ে ফিরতে দেয়নি বোলাররা। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড ওয়ার্নারকে আবারও শর্ট বলে ফেরান মুস্তাফিজ। ব্যাটিংয়ের সময় আঙুলে চোট পাওয়া মিরাজ বল করেননি। দুটি করে চার-ছক্কায় জয় তরান্বিত হয়েছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (১৭ বলে ২৫*) ব্যাটে।

মিরপুরে চার দিনে হারের জবাব চট্টগ্রামে চার দিনে জিতেই দিল অস্ট্রেলিয়া। বড় দলের সঙ্গে সিরিজ জয়ের স্বাদটা বাংলাদেশের রইল অধরাই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০৫

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৭৭

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৭১.২ ওভারে ১৫৭ (তামিম ১২, সৌম্য ৯, ইমরুল ১৫, নাসির ৫, সাকিব ২, মুশফিক ৩১, সাব্বির ২৪, মুমিনুল ২৯, মিরাজ ১৪*, তাইজুল ৪, মুস্তাফিজ ০; কামিন্স ২/২৭, লায়ন ৬/৬০, ও’কিফ ২/৪৯, অ্যাগার ০/৯)

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৮৬) ১৫.৩ ওভারে ৮৭/৩ (রেনশ ২২, ওয়ার্নার ৮, স্মিথ ১৬, হ্যান্ডসকম ১৬*, ম্যাক্সওয়েল ২৫*; মুস্তাফিজ ১/১৬, সাকিব ১/৩৫, তাইজুল ১/২৬, নাসির ০/১০)

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ন্যাথান লায়ন

সিরিজ সেরা: ন্যথান লায়ন ও ডেভিড ওয়ার্নার