ওয়ার্নারের পর মুস্তাফিজ-মিরাজের আলো

আকাশ মেঘলা, চারপাশ হয়ে আসছিল অন্ধকার হয়ে। শেষদিকে খেলা হলো ফ্লাড লাইটে। তবে এই কৃত্রিম আলোর চেয়ে উদ্ভাসিত ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের বোলিং আলোকিত এই দুজনের আলোয়।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2017, 12:51 PM
Updated : 6 Sept 2017, 02:47 PM

ডেভিড ওয়ার্নারকে সেঞ্চুরির আগে থামানো যায়নি। তবে সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে ফেরানোর পর অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বৃষ্টি বিঘ্নিত দিন শেষে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার রান ৯ উইকেটে ৩৭৭।

লিড অবশ্য এর মধ্যেই হয়ে গেছে ৭২, হাতে একটি উইকেট। এই লিড ম্যাচে রাখতে পারে বড় ভুমিকা। তার পরও আগের দিনের হতাশাকে পেছনে ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ।

এই নতুন আশার মূল কারিগর মুস্তাফিজ ও মিরাজ। বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ানো ওয়ার্নারসহ মুস্তাফিজ নিয়েছেন তিন উইকেট। তিনটি নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও।

দিনের সেরা প্রাপ্তি বলা যায় মুস্তাফিজের বোলিং। প্রথম টেস্টে প্রথম স্পেলটি দুর্দান্ত করার পর ছিলেন বিবর্ণ। এখানেও আগের দিন ছিলেন ম্রিয়মান। তবে এদিন যেন জেগে উঠেছিলেন। উইকেট তিনটি পেয়েছেন বলেই নয়, শরীরী ভাষায় ছিল আগ্রাসন। গতিও ছিল ভালো।

ক্যাচ মিসের ধারাবাহিকতায় অবশ্য যথারীতি সফল বাংলাদেশে। আগের দিন দুটি সুযোগ হাতছাড়ার পর এদিন ক্যাচ পড়েছে তিনটি। নইলে হয়ত আরেকটু ভালো হতে পারত বাংলাদেশের অবস্থান।

বুধবার সকালে রাজত্ব ছিল বৃষ্টির। খেলা শুরু হতে হতে দুপুর সোয়া একটা। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, ওয়ার্নার ও হ্যান্ডসকম শুরু করেছিলেন যেন সেখান থেকেই। দুজনই খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। বাংলাদেশের ত্রাতা তখন সাকিব আল হাসান। তবে বোলিংয়ে নয়, ফিল্ডিংয়ে। ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ছুটে গুলির বেগে থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগিয়ে রান আউট করে দিলেন হ্যান্ডসকমকে(৮২)।

ওয়ার্নারের খেলায় তাতে প্রভাব পড়েনি। আগের দিনের মতোই খেলে যান ধীরস্থীর ভাবে। ব্যাটিংয়ে ছিল না বিন্দুমাত্র তাড়া কিংবা ক্ষনিকের জন্য ভড়কে যাওয়া। ৯৯ রানে ফিল্ডিং চাপানো হলো, ওয়ার্নারও ছটফট না করে টানা ১৫ বলে রানই করলেন না। শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি ছুঁলেন ২০৯ বলে। তিন অঙ্ক ছুতেঁ লাগল ৩১৩ মিনিট।

বলের হিসেবে বা সময়, অনায়াসেই এটি ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারের মন্থরতম সেঞ্চুরি। আগের ধীরগতির সেঞ্চুরিটি ছিল ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে।

দুই ইনিংস আগেও উপমহাদেশে ছিল না তার কোনো সেঞ্চুরি। গড় ছিল মাত্র ২৫.০৪। মিরপুরে চতুর্থ ইনিসে দারুণ সেঞ্চুরিতে ঘোচালেন অপূর্ণতা। পরের ইনিংসেই চট্টগ্রামে স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে খেললেন অসাধারণ এই ইনিংস। সেঞ্চুরিতে বাউন্ডারি ছিল মাত্র পাঁচটি।

সেঞ্চুরির পর ছুটছিলেন যেন নতুন উদ্যমে। তাকে ফেরালেন শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজ। লেগ গালিতে তিনবারের চেষ্টায় ক্যাচ নিলেন ইমরুল কায়েস। ২৩৪ বলে ১২৩ রান। ৩৬২ মিনিটের ইনিংসে বাউন্ডারি মাত্র ৭টি, এটিই বলে দিচ্ছে নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন ওয়ার্নার। 

ম্যাক্সওয়েল আউট হতে পারতেন আগেই। ১০ রানে মুস্তাফিজের বলেই সহজ ক্যাচ ছাড়লেন মিরাজ। খানিকপর মিরাজ ছাড়লেন অভিষিক্ত হিল্টন কার্টরাইটের ফিরতি ক্যাচ।

মিরাজ খানিকটা প্রায়শ্চিত্ত করেছেন দুজনকেই ফিরিয়ে। ৬ রানে জীবন পাওয়া কার্টরাইট কাটা পড়েছেন ১০ রানেই। তবে ম্যাক্সওয়েল ভুগিয়েছেন আরেকটু বেশি। শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন ৯৮ বলে ৩৮ রান করে।

ব্যাট হাতে ম্যাথু ওয়েডের দু:সময় দীর্ঘায়িত করেছেন মুস্তাফিজ। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস তখন শেষের অপেক্ষা। কিন্তু বাগড়া দিলেন অ্যাশটন অ্যাগার ও স্টিভেন ও’কিফ। দ্রুত কিছু রান করলেন অ্যাগার। সাকিবের বলে স্লিপে তার সহজতম ক্যাচ ছাড়লেন সৌম্য।

পরে দারুণ এক টার্নিং ডেলিভারিতে অ্যাগারকে ফিরিয়ে সাকিব নিয়েছেন ম্যাচের প্রথম উইকেট। আলোক স্বল্পতায় শেষ জুটিকে আর শেষ করা যায়নি।

তবে বাংলাদেশের আশার শেষও হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে চাই ভালো ব্যাটিং। অস্ট্রেলিয়াকে তো ব্যাট করতে হবে শেষ ইনিংসে। ম্যাচের তাই বাকি এখনও অনেক। তৃতীয় দিন বার্তা দিয়েছে, শেষ দুটি দিন হতে পারে রোমাঞ্চকর!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০৫

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ১১৮ ওভারে ৩৭৭/৯ (আগের দিন ২২৫/২) (রেনশ ৪, ওয়ার্নার ১২৩, স্মিথ ৫৮, হ্যান্ডসকম ৮২, ম্যাক্সওয়েল ৩৮, কার্টরাইট ১৮, ওয়েড ৮, অ্যাগার ২২, কামিন্স ৪, ও’কিফ ৮*, লায়ন ০*; মিরাজ ৩/৯৩, মুস্তাফিজ ৩/৮৪, সাকিব ১/৮২, তাইজুল ১/৭৮, নাসির ০/১৪, মুমিনুল ০/৬, সাব্বির ০/৯)