ওয়ার্নারের মন্থরতম সেঞ্চুরি

সেই একইরকম অন্য প্রান্তে ছুটে চলা। উইকেট পেরিয়ে গিয়ে একভাবে লাফ। এক হাতে ব্যাট, আরেক হাতে হেলমেট নিয়ে দুহাত উঁচিয়ে অভিনন্দনের জবাব। ডেভিড ওয়ার্নারের চেনা ‘ট্রেডমার্ক” উদযাপন। কিন্তু ইনিংস জুড়েই ওয়ার্নার ছিলেন অচেনা!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2017, 09:13 AM
Updated : 6 Sept 2017, 09:20 AM

দেখা যায়নি রান তোলার তাড়া। ছিল না শট খেলতে চাওয়া। উইকেট মন্থর। কন্ডিশন প্রতিকূল। ওয়ার্নার যেন পণ করেছিলেন নিজেকে নতুন করে চেনানোর। এই ওয়ার্নার বিস্ফোরক কোনো ব্যাটসম্যান নন, রোমাঞ্চকর ইনিংস খেলতে তৃষ্ণার্ত নন। বরং কন্ডিশন বুঝে দলের প্রতি নিবেদিত একজন ব্যাটসম্যান। উইকেট আঁকড়ে রেখেছেন। লড়াই করেছেন।

লড়াই প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে। লড়াই নিজের সহজাত প্রবৃত্তির সঙ্গে। যিনি টেস্টও খেলেন ওয়ানডের গতিতে, সেঞ্চুরি করে ফেলেন এক সেশনেই, সেই ওয়ার্নার সেঞ্চুরি করলেন ৩১৩ মিনিট খেলে। ২০৯ বলে স্পর্শ করলেন সেঞ্চুরি, যেটি অনয়াসেই তার ক্যারিয়ারের মন্থরতম!

এর আগে তার মন্থরতম সেঞ্চুরি ছিল ১৫৪ বলে, ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে। সেঞ্চুরি করতে তার দেড়শ বল লেগেছিল ওই একবারই।

ওয়ার্নারের লড়াইয়ের সূচনা আগের দিনই। স্টিভেন স্মিথ, পিটার হ্যান্ডসকম এই উইকেটেও খেলেছেন নিজেদের মত শট। কিন্তু ওয়ার্নার ছিলেন পুরোপুরিই খোলসে আবদ্ধ। খেলে গেছেন নিজের তৈরি করা জোনে থেকে।

আগের দিন করেছিলেন ২৬৬ মিনিটে অপরাজিত ৮৮। তৃতীয় দিনে বৃষ্টিতে ভেসে গেল পুরো একটি সেশন। খেলার শুরুর পর লম্বা জুটির সঙ্গী হ্যান্ডসকম হলেন রান আউট। কিন্তু ওয়ার্নার অবিচল। মনোসংযোগে ধরেনি এতটুকু চিড়।

সেঞ্চুরির ঠিক আগেও তার পরীক্ষা নিয়েছে বাংলাদেশ। তাকে ৯৯ রানে আটকে রেখেছিল অনেকক্ষণ। ৯৯ থেকে ১০০ পর্যন্ত যেতে লাগল ১৫ বল। তবু হাল ছাড়েননি। ঠাণ্ডা মাথায় চালিয়ে যান নিজের কাজ। শেষ পর্যন্ত নাসির হোসেনের বলে চার মেরে ছুঁয়েছেন সেঞ্চুরি। সেটি ছিল মাত্র তার পঞ্চম বাউন্ডারি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেঞ্চুরিতে এত কম বাউন্ডারিও এই প্রথম!

সব মিলিয়ে ৬৬ টেস্টে সেঞ্চুরি হলো তার ২০টি। আগের টেস্টের চতুর্থ ইনিংসেও করেছিলেন সেঞ্চুরি। সেটি ছিল নিজের চেনা গতিতেই। এবার উল্টো। এশিয়ায় পিঠেপিঠি সেঞ্চুরি করা মাত্র ষষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান তিনি।

শেষ পর্যন্ত আউট হলেন ২৩৪ বলে ১২৩ রানে। তবে দলকে দিয়ে গেছেন শক্ত ভিত। বাংলাদেশ হয়ত আক্ষেপ করবে, দু দফায় তাকে জীবন না দিলে ম্যাচের গতিপথই হতো অন্যরকম!

আগের টেস্টের সেঞ্চুরি ছিল উপমহাদেশে তার প্রথম সেঞ্চুরি। চতুর্থ ইনিংসে টার্নিং উইকেটের সেই সেঞ্চুরিকে বলেছিলেন নিজের সেরা সেঞ্চুরি। এবার মন্থর উইকেটে, কঠিন কন্ডিশনে, নিজের সহজাত খেলার সঙ্গে আপোস করে যে সেঞ্চুরি করলেন, হয়ত সেরার বাছাইয়ে হয়ত নতুন করে ভাবতে হবে তাকে!