বাংলাদেশকে হতাশ করলেন ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম

সুযোগ ছিল ক্যাচের। বল হাতে রাখতে পারেননি মুমিনুল হক। সুযোগ ছিল স্টাম্পিংয়ের। বল হাতে স্পর্শই করতে পারেননি মুশফিকর রহিম। দুবার জীবন পেয়ে বহাল তবিয়তে টিকে ডেভিড ওয়ার্নার। গরম আর পানিশূন্যতাকে জয় করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন পিটার হ্যান্ডসকম। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির ফলাফল, বাংলাদেশের হতাশা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2017, 12:01 PM
Updated : 5 Sept 2017, 02:34 PM

বিবর্ণ ব্যাটিংয়ে শুরু দিনটি শেষ হলো বোলিং-ফিল্ডিংয়ের হতাশায়। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি পুরোপুরিই অস্ট্রেলিয়ার। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ৩০৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে নিজেরা দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ২২৫ রানে। পিছিয়ে আর ৮০ রান, হাতে এখনও ৮ উইকেট।

আগের টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ওয়ার্নার এবার অপরাজিত ৮৮। ২৬৬ মিনিট উইকেটে থেকেও সেঞ্চুরি করতে পারেননি ওয়ার্নারের মত ব্যাটসম্যান, চার মাত্র চারটি! কন্ডিশন বুঝে স্বভাব-বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে ফুটে উঠল দারুণ নিবেদনের প্রতিচ্ছবি।

এই ওয়ার্নার ফিরতে পারতেন ৫২ রানে। তাইজুল ইসলামের বলে শর্ট লেগে কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি মুমিনুল হক। আউট হতে পারতেন ৭৩ রানে। এবার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ। অনেকটা বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু নিচু হওয়া বলটি নিচু হয়ে গ্লাভসে নিতে পারেননি মুশফিক।

হ্যান্ডসকম খেলেছেন দারুণ, কোনো সুযোগ দেননি। আগের টেস্টে দুই ইনিংসে ভালো শুরু করেও বড় কিছু করতে পারেননি। এবার সেটির পুনরাবৃত্তি হতে দেননি। দিন শেষে অপরাজিত ৬৯ রানে।

তৃতীয় উইকেটে দুজনের অবিচ্ছ্নি জুটির রান ১২৭। শেষ সেশনে অস্ট্রেলিয়া হারায়নি কোনো উইকেট, রান এসেছে ১১৪।

অথচ বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ ক্যাচে শুরুতেই ফেরেন ম্যাট রেনশ। মুস্তাফিজের লেগ স্টাম্পে থাকা বল গ্লান্স করতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি রেনশ, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় গ্লাভসে জমান মুশফিক।

তবে স্মিথ নেমেই পাল্টে দেন চিত্র। মুস্তাফিজকে দৃষ্টিনন্দন চারে শুরু করেছিলেন। পরেও খেলেন দারুণ সব শট। মনে হচ্ছিলো, ব্যাটিংয়ের চেয়ে সহজ কাজ আর নেই!

আসলে যে ব্যাটিং কঠিন ছিল, সেটি বোঝা গেছে ওয়ার্নারের ব্যাটিংয়ে। শট খেলা কঠিন। তাই নিজের প্রিয় পথে হাঁটেননি ওয়ার্নার। কন্ডিশন ভাবনায় বেছে নেন ধীরে চলার বিরুদ্ধ পথ।

৮১ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন স্মিথ। ওয়ার্নারের সঙ্গে জুটি শতরানের পথে। ম্রিয়মান বাংলাদেশকে তাজা করলেন তাইজুল ইসলাম। নিজের প্রথম ডেলিভারিতেই বোল্ড করলেন স্মিথকে (৫৮)। টার্ন করবে ভেবে খেলতে চেয়েছিলেন, বল উঠল সামান্য, ভেতরে ঢুকে খুঁজে নিল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক।

সেই উইকেট জাগিয়ে দিতে পারত বাংলাদেশকে। উল্টো দারুণ ব্যাটিংয়ে মুশফিকদের জীবনীশক্তি শুষে নিলেন ওয়ার্নার ও হ্যান্ডসকম। আর ওই দুটি সুযোগ হাতছাড়া তো ছিলই।

ওয়ার্নার অর্ধশতক স্পর্শ করেন ৯৮ বলে। পঞ্চাশে ছিল মাত্র দুটি চার। দিন শেষে ১৭০ বলে ৮৮। নিজের ব্যাটিংয়ের ধরনর সঙ্গে আপোস করে প্রমাণ রাখলেন টেম্পারামেন্ট ও নিবেদনের। দেখিয়ে দিলেন তিনি এভাবেও খেলতে পারেন।

স্মিথ যেভাবে খেলছিলেন, হ্যান্ডসকম ছিলেন একইরকম সাবলীল। স্মিথের মতোই শাফল করে খেলেন। ব্যাটিংয়ে ছিল একই গতি ও ছন্দ। প্রচণ্ড গরমে দিনের শেষ ভাগে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, ভুগলেন পানিশূন্যতায়। কিন্তু মনোসংযোগে চিড় ধরেনি। ছাড়েননি লড়াই।

তারা লড়াই ছাড়েননি বলেই দিনটি অস্ট্রেলিয়ার। প্রথম ইনিংসে বড় লিড গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। ঘুরে দাঁড়াতে তাই তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের চাই নতুন পরিকল্পনা, নতুন প্রাণশক্তি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০৫

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৬৪ ওভারে ২২৫/২ (রেনশ ৪, ওয়ার্নার ৮৮*, স্মিথ ৫৮, হ্যান্ডসকম ৬৯*; মিরাজ ০/৫৩, মুস্তাফিজ ১/৪৫, সাকিব ০/৫২, তাইজুল ১/৫০, নাসির ০/৪, মুমিনুল ০/৬, সাব্বির ০/৯)