সাব্বিরের আক্ষেপ আর মুশফিকের লড়াই

বলটি ছিল মারার মতোই। সাব্বির রহমান পুল করলেন। হলো না টাইমিং। তাল সামলাতে পারলেন না। মুহূর্তের জন্য ক্রিজের বাইরে পা। ওই সময়টুকুতেই কাজ সেরে নিয়েছেন ম্যাথু ওয়েড। ন্যাথান লায়নের ৫ উইকেট। সাব্বিরের বিদায় হয়ে রইল বাংলাদেশের বিকেলের আক্ষেপ!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2017, 11:54 AM
Updated : 4 Sept 2017, 03:29 PM

নিজে তাল সামলানোর আগে অবশ্য দলের তাল ঠিক করে দিয়েছেন সাব্বির। সঙ্গী ছিলেন মুশফিকুর রহিম। দুজনের জুটিতেই বিপর্যয় থেকে উদ্ধার বাংলাদেশ। লায়ন ৫ উইকেট পেয়েছেন, তবে অস্ট্রেলিয়ার বাকি সব বোলারকে বাংলাদেশ দিয়েছে ১ উইকেট। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ২৫৩।

প্রথম দিনের উইকেট মিরপুরের চেয়ে একটু বেশি ব্যাটিং বান্ধব। তেমন ছিল না অসমান বাউন্স। তবে যথারীতি মন্থর, বাউন্স ছিল না। বল নিচু হয়েছে বেশ। খুব বিপজ্জনক অবশ্য ছিল না। সব মিলিয়ে প্রথমদিন শেষে দুদলকেই রাখা যায় কাছাকাছি।

দিনের শুরুটায় বা মাঝামাঝি যা অবস্থা ছিল ইনিংসের, তাতে দিন শেষে খুশিই হওয়ার কথা বাংলাদেশের। ১১৭ রানেই দল হারিয়েছিল ৫ উইকেট। ষষ্ঠ উইকেট শতরানের জুটিতে দলকে টেনেছেন সাব্বির ও মুশফিক। 

লায়নের পঞ্চম শিকার হয়ে ৬৬ রান করে আউট হয়েছেন সাব্বির। তবে দলের ভরসা হয়ে ৬২ রান নিয়ে হাসি মুখে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক মুশফিক।

দিনের শুরুতেই বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখে ছিল হাসি, যখন মহাগুরুত্বপূর্ণ টস জিতে ব্যাটিংয়ের ঘোষণা দিলেন!

দুই দলই একাদশ সাজিয়েছে একজন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে। ৭৯ বছর পর ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং শুরু করেন একজন স্পিনার। বাংলাদেশের টপ অর্ডার মুখ থুবড়ে পড়ে সেই স্পিনারের বোলিংয়েই।

নতুন বলে পেস-প্রতিকূল উইকেটে আবারও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন প্যাট কামিন্স। প্রথম উইকেটও পেতে পারতেন তিনি। তামিম ইকবালের ৬ রানে স্লিপে সহজ ক্যাচ ছাড়েন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

প্রথম টেস্টের সেরা ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দেওয়ায় অবশ্য চড়া মূল্য দিতে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। ৩৪ বলে ৯ রানে তামিম এলবিডব্লিউ হন লায়নের বলে।

তিনে নেমে আবারও ব্যর্থ ইমরুল কায়েস (৪)। কী মনে করে লায়নকে ওভাবে সুইপ করতে গেলেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। দেখে মনে হলো, রান করার বড্ড তাড়া তার!

জোড়া ধাক্কা সামলে দলকে টানেন সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হক। দুজনের ব্যাটিং যদিও ছিল দুরকম।

মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংসে ব্যর্থ সৌম্যর শুরুটা ছিল নড়বড়ে। লায়নকে বাজে এক শটে ব্যাটের কানায় লেগে চার পেয়েছিলেন শুরুতে, প্রথম ২১ বলে একমাত্র স্কোরিং শট ছিল সেটিই। তবে হাল না ছেড়ে লড়াই চালিয়ে যান। নিজের সহজাত ব্যাটিং ছেড়ে আঁকড়ে রাখেন উইকেট।

কিছুটা থিতু হওয়ার পর আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। বেরিয়ে এসে লায়নকেই মারেন ছক্কা।

শফিউল ইসলামের বদলে দলে ফেরা মুমিনুলের ওপর ছিল চাপের পাহাড়। তবে ব্যাটিংয়ে সেটির প্রতিফলন পড়েছে বলে মনে হয়নি। শুরু থেকে খেলছিলেন আস্থায়।

দুজনের ব্যাটেই লাঞ্চের সময় চলে এসেছিল প্রায়। কিন্তু লাঞ্চের আগে আঘাত লায়নের। সৌম্যর ১২২ মিনিটের লড়াই শেষ ৩৩ রানে।

মিরপুর টেস্টে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের হন্তারক ছিল বাংলাদেশের স্পিনারদের জোরের ওপর করা সোজা বল। সেই ডেলিভারিতেই এবার ভুগল বাংলাদেশ। লায়নের প্রথম তিনটি উইকেটই ছিল একটু দ্রুতগতির, সোজা স্কিড করা বল।

লাঞ্চের পর মুমিনুলও ফিরলেন সোজা বলেই। যেভাবে ব্যাট করছিলেন, মনে হচ্ছিলো বাদ পড়ার জবাব দেবেন ব্যাটে। সম্ভাবনায়ময় ইনিংসটি শেষ হলো ৩১ রানে।

প্রথম চার ব্যাটসম্যানকেই এলবিডব্লিউ করে লায়ন ঢুকলেন রেকর্ড বইয়ে। প্রথম চার জনকে একা এলবিডব্লিউ করতে পারেনি টেস্ট ইতিহাসের আর কোনো বোলার।

সাকিব খেলছিলেন তার মতোই। কামিন্সকে দারুণ দুটি চার মেরে শুরু করেছিলেন। এগিয়ে যাচ্ছিলেন অনায়াসেই। কিন্ত কটবিহাইন্ড হলেন ২৪ রানে। আবারও জোরের ওপর করা বল, এবার বোলার অ্যাশটন অ্যাগার।

১১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে দল। কাঁপুনি ছাড়ল সাব্বির ও মুশফিকের ব্যাটে। সহজাত ব্যাটিংয়ে দারুণ সব শটে চাপটা সরিয়ে দেন সাব্বির। আরেকপাশে মুশফিক খেলেছেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞতায়।

গত অক্টোবরে টেস্ট অভিষেকে এই মাঠেই চতুর্থ ইনিংসে সাব্বির খেলেছিলেন অপরাজিত ৬৪ রানের দারুণ ইনিংস। এবার সেটিকে ছাড়িয়ে করলেন ৬৬। সেঞ্চুরির আশা পূরণ না হলেও এই ইনিংস দলে বাঁচাবে তার জায়গা, জোগাবে আত্মবিশ্বাস।

১৪৯ বল খেলে ৬২ রানে অপরাজিত বাংলাদেশ অধিনায়ক। শেষ বিকেলে নাসিরের ব্যাটিংও (১৯*) ভরসা দেবে দলকে। লায়নের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও তাই দিনটি শুধুই অস্ট্রেলিয়ার নয়।

প্রথম সেশনে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছিল তিনটি, পরের সেশনে দুটি, শেষ সেশনে একটি। সেই ধারাবাহিকতায় এরপর যদি আসে একটি উইকেটবিহীন সেশন, ম্যাচের লাগামও তাহলে হাতে নিতে পারে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৫৩/৬ (তামিম ৯, সৌম্য ৩৩, ইমরুল ৪, মুমিনুল ৩১, সাকিব ২৪, মুশফিক ৬২*, সাব্বির ৬৬, নাসির ১৯*; কামিন্স ০/৩৩, লায়ন ৫/৭৭, ও’কিফ ০/৭০, অ্যাগার ১/৪৬, ম্যাক্সওয়েল ০/৬, কার্টরাইট ০/১৬)