সেঞ্চুরি হতে পারত দুই ইনিংসেই। হলো না একটিতেও। প্রথম ইনিংসে ৭১, দ্বিতীয়টাতে ৭৮। তবে তাতেই ধরা দিয়েছে বড় একটি অর্জন। আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে তামিম উঠেছেন ১৪ নম্বরে। তার নিজের ক্যারিয়ার সেরা তো বটেই, টেস্ট ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস-সেরা র্যাঙ্কিং।
এই মিরপুর টেস্টের আগে সাকিব আল হাসান ছিলেন ১৬ নম্বরে। বাংলাদেশের সেরা ছিল সেটিই। মুশফিকুর রহিমের সেরা ২১। সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের সেরা ছিল ২৪। আর সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা মোহাম্মদ আশরাফুলের সেরা ছিল ৪২।
ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সেরা বিশে প্রথম কাউকে পেয়েছিল তামিমকে দিয়েই। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে সেঞ্চুরি, পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরির পর উঠে এসেছিলেন ১৮ নম্বরে। এবার সেরা পনেরোতেও বাংলাদেশের প্রথম তামিম। সেরা দশেও কেন নয়? মিরপুরে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করায় তামিমের আক্ষেপটা ওখানেই।
এই র্যাঙ্কিংয়ের খবরটিই যা একটু আফসোস জাগাল। নইলে সেঞ্চুরি না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ ছিল না তামিমের। প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আচমকা লাফানো বলে। দ্বিতীয় ইনিংসে প্যাট কামিন্সের বাড়তি বাউন্সের গোলা, যেটিতে ব্যাটসম্যানের করার ছিল সামান্যই। তামিম বরং নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে ইতিবাচক দিকটা ভেবে।
“এমন দুটি ডেলিভারি, আমার কিছু করার ছিল না। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে। এই দুই ডেলিভারিতে যে কোনো সময় যে কোনো ব্যাটসম্যান আউট হতে পারত। এমনও হতে পারত যে আমার ১০ রানের মধ্যে এমন ডেলিভারি পেলাম, তাহলে তখনই আউট। ৭১ ও ৭৮ সেই তুলনায় খারাপ নয়।”
খারাপ তো নয়ই, বরং দারুণ। ডেভিড ওয়ার্নার সেঞ্চুরি করেছেন বটে, তবে দুই ইনিংস মিলিয়ে মিরপুর টেস্টের সেরা ব্যাটসম্যান তামিমই। ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে যেভাবে ব্যাট করেছেন, সেটি আরও একবার চিনিয়েছে তার জাত।
দুই ইনিংসেই আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত মনে হয়নি তামিম আউট হতে পারেন। টার্নিং ও অসমান বাউন্সের উইকেট, কম-বেশি সব ব্যাটসম্যানই ভুগেছেন। একমাত্র তামিমকেই হয়ত সেভাবে ভোগাতে পারেনি উইকেট। এমন উইকেট ও কামিন্স-লায়নদের বোলিংয়ের সামনে ছিলেন দারুণ নিয়ন্ত্রিত। জানতেন নিজের কাজ, সেটি করে গেছেন দারুণভাবে।
মিরপুর টেস্টের পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার পর নিজেকে নিয়ে এখন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী তামিম।
“কঠিন উইকেটে, কঠিন পরিস্থিতিতে ভালো খেললে নিজের খেলা এমনিতেই কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। নিজের সামর্থ্য নিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এই সিরিজের আগে আমার প্রস্তুতি দারুণ ছিল। গত আড়াই বছর ধরে টানা ভালো খেলার অভিজ্ঞতা সঙ্গে ছিল। এই টেস্টের অভিজ্ঞতাও আমাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।”
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জয়ে তামিমের রান ৫৪.৭২ গড়ে ৯৮৫। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের সেরা।
দলের জয় ব্যক্তিগত সাফল্যের তৃপ্তি বাড়িয়ে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তামিমের ইনিংস দুটি তাকে আরও বেশি তৃপ্তি দিচ্ছে আরেকটি কারণে। টেম্পারামেন্টের একটি পরীক্ষায় উতরে যাওয়া।
অস্ট্রেলিয়ানরা বরাবরই তুমুল স্লেজিংয়ের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশ দলের নানা সূত্র থেকে জানা গেছে, মিরপুর টেস্টে ব্যাটিংয়ের সময় স্লেজিংয়ের তোপ সবচেয়ে বেশি সামলাতে হয়েছে তামিমকেই। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে। তামিম খেলেছেন ১৫৫ বল, আক্ষরিক অর্থেই নাকি ১৫৫ বারই স্লেজিং করেছেন অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড! তামিমও পাল্টা গোলা ছুড়েছেন মুখে ও ব্যাটে।
মাঠের সেসব ঘটনা নিয়ে মাঠের বাইরে মুখ খুলতে চান না তামিম। তবে এটুকু বললেন, অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
“ব্যাটিং স্কিলের ব্যাপার তো বটেই, এই টেস্টে ধৈর্য-টেম্পারামেন্টের দিক থেকেও অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথমবার খেললাম, অনেক অভিজ্ঞতাই হয়েছে।”
এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তামিম এগিয়ে যেতে চান সামনে। র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশের এত কাছে; চট্টগ্রামেও ভালো করলে হয়ত ঢুকে যাবেন সেরা দশেই। তবে তামিমের স্বপ্নের পরিধি আরও বড়।
“সেরা দশে ঢুকতে চাই তো বটেই, আমি আরও অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। এক নম্বর কেন নয়? আমরা খেলি তো সেরা হওয়ার জন্যই!”
সেই দিনের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটও।