এটি স্রেফ একটি উদাহরণ। এরকম উত্তেজনা ছিল মিরপুর টেস্ট জুড়েই। অস্ট্রেলিয়া যদি হয় বুনো ওল, বাংলাদেশও তাহলে যেন বাঘা তেঁতুল। সেটা শুধু ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সেই নয়। কথার জবাবে কথায়ও। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া বরাবরই পরিচিত স্লেজিংয়ে প্রতিপক্ষকে জর্জরিত করার জন্য। তবে পাল্টা স্লেজিং করতে ছাড়েনি বাংলাদেশও।
তৃতীয় দিন বিকেলে সাব্বির রহমানের সঙ্গে লেগে গিয়েছিল ওয়ার্নারের। চতুর্থ দিন সকালে সেই ওয়ার্নারের সঙ্গে বেধে গেল তামিমের। এবারও আম্পায়ার আলিম দারের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় পরিস্থিতি। তবে শান্ত থাকেনি বেশি সময়। বারবার ছড়িয়েছে উত্তেজনা। কখনও খালি চোখে বা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। কখনও বোঝা যায়নি বাইরে থেকে।
মুশফিক যেমন বললেন গ্লেন ম্যাক্সওয়লের সময় নষ্ট করার কথা।
“আজ যদি লক্ষ্য করে থাকেন, দেখবেন, লাঞ্চের আগে ৬ মিনিট ছিল। তখন ম্যাক্সওয়েল প্রায় ৫ মিনিট সময় নিচ্ছিল যেন ওই ওভারের পর আর কোনো ওভার না হয়। যেখানে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করতে চায়, তারা পর্যন্ত এমন ব্যাকফুটে চলে গেছে তখন যে, তারা চাচ্ছে না আরেকটা ওভার খেলতে। এটা তো অনেক বড় একটা বার্তা।”
কথার লড়াই আর শরীরী ভাষায় পাল্টা জবাব দেওয়ার গর্বও ধরা পড়ল মুশফিকের কণ্ঠে।
“ওদের মধ্যে আগ্রাসন তো অবশ্যই ছিল। শুধু সিনিয়ররা না জুনিয়রদেরও ওরা অনেক কথা বলেছে। এমনকি আমাদের টেলএন্ডার যারা ব্যাটিং করতে গেছে তাদের পর্যন্ত ওরা কথা বলেছে। ওরা জানে এই উইকেটে একটা-দুইটা রান কত গুরুত্বপূর্ণ।”
“তবে ওরাও বুঝেছে, বাংলাদেশ কতটা আগ্রাসী হতে পারে। শুধু ব্যাট-বল না, শরীরী ভাষাতেও ওরা সেটা টের পেয়েছে। ওরা আমাদের জুনিয়রদের অনেক কথা বলেছে, যা আমরা আবার ফিরিয়ে দিয়েছি। আমরা যে আগের জায়গায় নেই, সেটা ওরা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছে।”
মাঠে কথার লড়াই নিয়ে প্রশ্ন এলো অস্ট্রেলিয়ান সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকেও। মাঠে যেমন জবাব দিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলনেও তেমন জবাব দিলেন সাকিব আল হাসান।
“এটা আসলে খেলারই অংশ। অস্ট্রেলিয়ানরা এসব খুব ভালো পারে, আমরাও ওদের থেকে শিখেছি। এটা খুবই ভালো একটা টেস্ট। এরকম ম্যাচ মানুষকে আরও টেস্ট দেখতে উৎসাহ দেয়। ক্রিকেটের জন্য খুবই ভালো।”
টেস্ট শুরুর আগে এই সাকিবই বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়াকে ২-০তে হারানো সম্ভব। সেটা শুনে আবার স্টিভেন স্মিথ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ১০০ টেস্টে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৯টি।
এবার জয়ের পর সাকিব বললেন, এবার হয়ত আরেকটু বেশি শ্রদ্ধার জায়গায় উঠবে বাংলাদেশ!
“আশা করি, এই টেস্ট শেষে ওরা আরও বেশি সম্মান দেবে। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা আর মাঠে খেলার মধ্যে পার্থক্য আছে। ঘরের মাটিতে আমরা বিশ্বাস করি আমরা যে কাউকে হারাতে পারি, সেটা করে দেখিয়েছি। গত দুই বছরের পারফরম্যান্স থেকেই আমাদের মনে এই বিশ্বাস এসেছে। কেউ হয়তো আমাদের ওভাবে খেয়াল করেনি, কিন্তু আমরা চুপিসারেই নিজেদের কাজটা করে গেছি।”
মাঠের খেলার মত কথার খেলাতেও জয় প্রমাণ করছে, বাংলাদেশ আসলেই পরিণত টেস্ট দল হয়ে উঠছে।