তাইজুল যখন পেলেন শেষ উইকেট, মিড উইকেটে তখন বেশ কাছেই সাকিব আল হাসান। ছুটে আসলেন বোলারের দিকে। তাইজুল লাফ দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। অসাধারণ এই জয়ের নায়ক তো বাংলাদেশের সুপারম্যানই!
প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৮৪ রান। দুই ইনিংসেই ৫টি করে উইকেট। চতুর্থ দিনে যখন হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে জয়, তখনই আবির্ভাব ত্রাতা হয়ে। জাদুকরী পারফরম্যান্সে সাকিব রাঙালেন নিজের ৫০তম টেস্ট।
সাকিবের পাশাপাশি তামিমেরও এটি ছিল ৫০তম টেস্ট। মুশফিকুর রহিম টেস্টের আগে বলেছিলেন, এই দুই নায়কের জন্যই খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু সতীর্থদের উপহার দিলেন তারা দুজনই, উপহার দিলেন দেশকেও। সাকিবের অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, ব্যাটিং দূরূহ উইকেটে তামিমের ৭১ ও ৭৮!
গত বছর এই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর গত মার্চে শ্রীলঙ্কায় হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। টেস্টে এগিয়ে যাওয়ার পালায় যোগ হলো আরেকটি পালক।
উপমহাদেশে আগের ১১ টেস্টে ওয়ার্নারের গড় ছিল ২৫.০৪। চারটি পঞ্চাশে সর্বোচ্চ ছিল ৭১। এবারের সেঞ্চুরি হয়তো তাকে দেবে স্বস্তি। তবে দলকে জেতানোর তৃপ্তি পেলেন না। ওয়ার্নারের ব্যাটে ম্যাচ যখন বেরিয়ে যাওয়ার পথে, বাংলাদেশকে ফেরালেন সেই সাকিব।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে তাইজুল-মিরাজকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। সাকিব এসে শুরুতে বাধ দেন রানের গতিতে। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন ওয়ার্নারকে।
কঠিন উইকেটেও ওয়ার্নারের ব্যাটে ছিল নিজস্ব গতি। করেছেন ১৩৫ বলে ১১২। স্মিথের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটি ১৩০ রানের।
সেই জুটি ভাঙার রেশ মিইয়ে যাওয়ার আগেই সাকিবের হাত ধরে আরও খুশির ছটা। এবার ফিরিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্মিথকে।
হ্যান্ডসকমের উইকেটেই টেস্টে ৫০ উইকেট পূর্ণ হলো তাইজুলের। তার সৌজন্যে খানিক পর ত্বরিত বিদায় প্রথম ইনিংসে ভোগানো অ্যাশটন অ্যাগারও।
বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে তখন গ্লেন মাক্সওয়েল। তার জন্য সাকিব আছেন না! লাঞ্চের পর প্রথম বলেই বোল্ড ম্যাক্সওয়েল।
ম্যাচে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট। এক ম্যাচে ১০ উইকেটও নিলেন দ্বিতীয়বার। বাংলাদেশে আর কারও নেই একবারের বেশি।
শেষ পর্যন্ত এরকম রোমাঞ্চের দোলায় দুলিয়ে এল বলেই হয়ত জয়টি হয়ে থাকবে আরও স্মরণীয়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৬০
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২১৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২২১
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৬৫, আগের দিন ১০৯/২) ৭০.৫ ওভারে ২৪৪ (ওয়ার্নার ১১২, রেনশ ৫, খাওয়াজা ১, স্মিথ ৩৭, হ্যান্ডসকম ১৫, ম্যাক্সওয়েল ১৪, ওয়েড ৪, অ্যাগার ২, কামিন্স ৩৩*, লায়ন ১২, হেইজেলউড ০; মিরাজ ২/৮০, নাসির ০/২, সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ৩/৬০, মুস্তাফিজ ০/৮)
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।