সবচেয়ে বড় বাধা স্টিভেন স্মিথ দূর হলো সবার আগে। রেনশ-হ্যান্ডসকমের প্রতিরোধও ভাঙল। উঠতে দেওয়া হলো না মাক্সওয়েল ঝড়। কিন্তু বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিল অস্ট্রেলিয়ান লেজের ঝাপটা! যে লিড থাকতে পারত একশর বেশি, সেটি তাই শেষ পর্যন্ত নেমে আসল ৪৩ রানে।
Published : 28 Aug 2017, 04:27 PM
সৌম্যর আত্মঘাতী শটে অবাক অ্যাগার
শেষ বেলায় সৌম্যকে হারানোর ধাক্কা
‘যে কোনো রান তাড়া করতে পারে অস্ট্রেলিয়া’
শেষ ২ উইকেটে অস্ট্রেলিয়া যোগ করল ৭৩ রান। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস শেষ হলো সাকিব আল হাসানের রেকর্ডে। অল আউট হলো তারা ২১৭ রানে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ২৬০।
৬৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আবারও বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার বোলিং করেই নিলেন ৫ উইকেট। টেস্ট ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ বোলার হিসেবে ৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে নিলেন ৫ উইকেট।
সাকিবের অর্জনে শেষটা হয়েছে মধুর। তবে তার আগে মাথাব্যথার কারণ ছিল অস্ট্রেলিয়ার লেজ। ১৪৪ রানেই ৮ উইকেট তুলে নেওয়ার পর শেষের জন্য অপেক্ষাটা ছিল যেন অনন্ত!
অথচ দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল দুর্দান্ত। আগের দিন সাকিব যাকে বলেছিলেন সবচেয়ে বড় হুমকি, সেই স্টিভেন স্মিথ আউট হয়ে যান সাতসকালেই।
মিরাজের ফ্লাইটেড বল বেরিয়ে এসে অনসাইডে খেলতে গিয়েছিলেন স্মিথ। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড। সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেট সবার আগে পেয়ে বাংলাদেশ তখন ভাসছে আনন্দের জোয়ারে।
গত ভারত সফরেই রেনশ দেখিয়েছিলেন, বয়স আর অভিজ্ঞতা কম হলেও স্পিনে তার টেকনিক দারুণ। টেম্পারামেন্টও ভালো। এদিনও বাংলাদেশের স্পিন বেশ ভালোই সামলেছেন ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি।
স্পিনটা ভালো খেলছিলেন হ্যান্ডসকমও। দারুণ কিছু সুইপ খেলেছেন। দুজনের জুটি জমে ওঠায় দু পাশ থেকে সাকিব ও মিরাজকে সরাতে বাধ্য হন মুশফিক।
মুস্তাফিজ ও তাইজুলকে হ্যান্ডসকম খেলছিলেন অনেকটা শাফল করে, মিডল বা অফ স্টাম্পে এসে। শেষ পর্যন্ত সেটাই কাল হলো। তাইজুলের সামনে খেলার বল পেছনে খেলতে গিয়ে গড়বড়। এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত দিতে খুব বেশি ভাবতে হয়নি আম্পায়ারকে।
৬৭ বলে ৩৩ করেন হ্যান্ডসকম। ভাঙে ৬৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।
আঁটসাঁট ব্যাটিংয়ের ফাঁকে রেনশ বেঁচে যান তিন দফায়। দুবার সিলিতে বল হাতে জমাতে পারেননি ইমরুল কায়েস। ‘ড্রপ’ যদিও বলা যায় না, তবে সুযোগ তো বটেই। ৪২ রানে স্লিপে বল হাতে জমাতে পারেননি সৌম্য সরকার। বল অবশ্য ব্যাট ছুঁয়ে আসেনি, তবে আম্পায়ার দিয়েছেন ব্যাটসম্যানের রান। অফিসিয়ালি তাই সেটিও ‘ড্রপ’।
শেষ পর্যন্ত সেই সৌম্যর হাতে ধরা পড়েই থামতে হয়েছে রেনশকে। প্রান্ত বদলে আক্রমণে ফিরে প্রথম ওভারেই সাকিব নিয়েছেন উইকেট। স্লিপে দ্বিতীয় চেষ্টায় ক্যাচ নেন সৌম্য। ৯৪ বলে ৪৫, ভারত সফরের মতোই সম্ভাবনাময় ইনিংস বড় করতে পারলেন না রেনশ।
এরপর আবার দৃশ্যপটে মূল দুই স্পিনার। মিরাজ ফেরান ম্যাথু ওয়েডকে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল জমে উঠছিলেন, তাকে ফেরান সাকিব। বাংলাদেশ তখন একশর বেশি লিডের আশায়। কিন্তু শূন্য রানেই অ্যাশটন অ্যাগারের কঠিন একটি স্টাম্পিংয়ের সুযোগ ছাড়লেন মুশফিক।
চা-বিরতি পর্যন্ত আর উইকেট হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। শফিউল ক্যাচ ছাড়ার পর দলের শরীরী ভাষাও বেশ পড়ে যায়। চা-বিরতি আসে যেন টনিক হয়ে।
চা-বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব। ২৫ রানে বোল্ড কামিন্স। তবে যন্ত্রণার শেষ নয় ওখানেই। শেষ উইকেটেও চালিয়ে খেলে কিছু রান করে ফেলেন অ্যাগার। শেষ পর্যন্ত হেইজেলউডকে ফিরিয়ে ইনিসের ইতি টানলেন সাকিব।
অভিষেকে এগারোয় নেমে ৯৮ রানের রেকর্ড গড়া অ্যাগার এবার অপরাজিত ৪১ রানে।
সম্ভাব্য একশ রানের লিডের কথা ভাবলে হয়ত ৪৩ রানের লিড আক্ষেপের, তবে এই উইকেটে সেটিও কম নয়। সেটিকে অস্ট্রেলিয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে নেওয়ার দায়িত্ব এবার ব্যাটসম্যানদের!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৬০
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৭৪.৫ ওভারে ২১৭ (আগের দিন ১৮/৩) (ওয়ার্নার ৮, রেনশ ৪৫, খাওয়াজা ১, লায়ন ০, স্মিথ ৮, হ্যান্ডসকম ৩৩, ওয়েড ৫, অ্যাগার ৪১*, কামিন্স ২৫, হেইজেলউড ৫; শফিউল ০/২১, মিরাজ ৩/৬২, সাকিব ৫/৬৮, তাইজুল ১/৩২, মুস্তাফিজ ০/১৩, নাসির ০/৩)