হতাশার ইনিংস শেষে বোলিংয়ের রোমাঞ্চ

পঞ্চাশতম টেস্টে সাকিব-তামিমকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। উল্টো সেই দুজনই যা একটু করলেন দলের জন্য! বিভীষিকার সকালে স্বস্তি দিল এই দুজনের ব্যাট। দুপুরটাও সুন্দর তাদের সৌজন্যে। বাকিদের ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংস যদিও শেষ হলো হতাশায়। তবে শেষ বিকেলে রোমাঞ্চ ছড়াল দুই স্পিনারের বোলিং।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2017, 11:39 AM
Updated : 27 August 2017, 04:06 PM

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষ মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৬০ রানে। তবে অস্ট্রেলিয়ানদের সেই খুশি উবে গেছে ব্যাটিংয়ে নেমে। টার্নিং ও অসমান বাউন্সের উইকেটে বিকেলে ৯ ওভার ব্যাট করেই হারাতে হয়েছে ৩ উইকেট। রান মোটে ১৮।

বোলিংয়ের সাফল্য আড়াল করতে পারছে না ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা। একটি জুটি ছাড়া যে বলার মতো আর জুটিই হলো না!

৫০তম টেস্ট তামিমই ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে শুধু এক বিন্দুতে মেলায়নি, দুজনের ব্যাটিংও হয়ে রইল যেন ক্যারিয়ারের প্রতীকী। আরও একবার তাদের ব্যাটই বাঁচল দলের মান! তাদের জুটিতেই এসেছে ১৫৫ রান। বাকি সব মিলে ১০৫!

ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটেই কাঁপতে থাকা দলের স্বস্তির ছায়া ছিল দুজনের ব্যাট। আক্ষেপ থাকল সম্ভাবনা জাগিয়েও দুজনের সেঞ্চুরি না পাওয়ায়।

সকালে টসের হাসি ছিল মুশফিকের রহিমের। সেই হাসি উধাও দল ব্যাটিংয়ে নামার পরপরই।

জশ হেইজেলউডকে দারুণ স্কয়ার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু প্যাট কামিন্সের গতি কাঁপিয়ে দেয় তাকে। এক ওভারে দুবার অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন। তৃতীয়বার রক্ষা হয়নি। গতিতে নড়বড়ে সৌম্য ক্যাচ দেন গালিতে।

ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান যেন প্রতিযোগিতা করলেন বাজে শট খেলার। জায়গায় দাঁড়িয়ে ভীষণ দৃষ্টিকটু শটে কট বিহাইন্ড ইমরুল। প্রথম বলেই ফুল লেংথ ডেলিভারিতে একই পরিণতি সাব্বিরের।

গোল্ডেন ডাক যদি যথেষ্ট না হয়, সাব্বির ষোলকলা পূর্ণ করলেন বাজে এক রিভিউ নিয়ে। বল এত স্পষ্টভাবে ব্যাটে লাগার পরও কেন রিভিউ নিলেন, সাব্বিরই ভালো বলতে পারবেন। 

দলের অবশ্য তখন কিছু বলার জো নেই। ১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। রক্ষা সাকিব-তামিমের ব্যাটে।

তামিম ছিলেন ভীষণ সাবধানী। সাকিব সহজাত। শুরু থেকেই খেলে গেছেন শট। তাতে ছিল ঝুঁকি, ছিল শঙ্কা। সাকিব তাতে দমেছেন কবে! তামিমকে ছাড়িয়ে যান তো বটেই, একসময় রান ছিল দ্বিগুণ।

আর কোনো উইকেট না হারানোর স্বস্তি নিয়েই লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই সাকিব স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। ৫০তম টেস্টে ৫০ করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান!

খানিক পর দ্বিতীয় হিসেবে তালিকায় ঠাঁই নেন তামিমও। সতর্কতার সঙ্গে খেলার ফাঁকে ন্যাথান লায়নের বলে দেখিয়েছেন আগ্রাসন। হাফ সেঞ্চুরির আগেই তিন বার লায়নকে ছক্কা মেরেছেন বেরিয়ে এসে। দুটি ইনসাইড আউটে এক্সট্রা কাভার দিয়ে, একটি লং অফ দিয়ে।

সম্ভাবনার কুঁড়ি ফুটতে শুরু করেছিল ফুল হয়ে। তবে পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পড়ল ঝরে। জুটি ভাঙতে গ্লেন মাক্সওয়েলকে আনলেন স্টিভেন স্মিথ। একটি বাড়তি লাফানো বলে তামিমের দ্বিধান্বিত কাট শট, সহজ ক্যাচ পয়েন্টে। তামিম ফিরলেন ১৪৪ বলে ৭১ করে।

৫০তম টেস্ট হলেও বিস্ময়কর ভাবে সাকিব-তামিমের এটি মাত্র পঞ্চম টেস্ট জুটি। সবশেষ ছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেবার দুজনে তুলেছিলেন ১৩৪ রান। এবার সেটি ছাড়িয়ে ১৫৫।

তামিম ফেরার পর একটু সাবধানী ছিলেন সাকিব। কিন্তু তিনিও শিকার বাড়তি বাউন্সের। শিকারি লায়ন। ১১ চারে ১৩৩ বলে ৮৪। এই নিয়ে ১০ বার টেস্টে ৮০ স্পর্শ করেও সেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে পারলেন না সাকিব।

চার বছর পর দলে ফেরা অ্যাশটন অ্যাগার নতুন করে শিকারের খাতা খুলেছেন মুশফিকুর রহিমকে ফিরিয়ে। এরপর যা একটু লড়াই নাসির হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৪২ রানের জুটিতে।

আম্পায়ার আলিম দারের ভুল সিদ্ধান্তে শেষ এই জুটির লড়াই। বাংলাদেশেরও তাতে শেষের শুরু। ব্যাটে না লাগলেও ব্যাট-প্যাড ক্যাচ দেওয়া হলো মিরাজকে। বাকি নেই তখন কোনো রিভিউ। সাব্বিরের ভুল রিভিউ ভোগাল দলকে।

অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ২ বছর পর ফেরা নাসির শেষ ২৩ রানেই। শেষ জুটিতে কোনো রকমে আড়াইশ ছাড়িয়ে স্পর্শ ২৬০।

কামিন্সের নতুন বলের তোপের পর লায়ন-অ্যাগারের স্পিন জুটি মিটিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাশা। এই তিনজনেরই উইকেট ৩টি করে।

দিনের শুরুর মন্থর উইকেট দিন শেষে আরও ধীর। টার্ন করছে, কখনও নিচু হচ্ছে বল, কখন বাড়তি লাফ। অনুমিতভাবেই ভুগল অস্ট্রেলিয়ানরা। তবে শেষ বেলাতেই ৩ উইকেট হয়ত ভাবতে পারেনি বাংলাদেশও।

ডেভিড ওয়ার্নার বিপজ্জনক হওয়ার আগেই তাকে বিদায় করলেন মিরাজ। নাইটওয়াচম্যান নাথান লায়ন শিকার সাকিবের। মাঝে আত্মঘাতী দৌড়ে রান আউট দলে ফেরা উসমন খাওয়াজা। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ আর ম্যাট রেনশ পার করেছেন বাকি সময়টুকু।

সময়ের সঙ্গে ভাঙবে উইকেট, স্পিন ধরবে আরও। দ্বিতীয় দিনেও চরম পরীক্ষা অস্ট্রেলিয়ানদের সামনে। দিন শেষে সেই সম্ভাবনার পাশে হয়ত একটু আক্ষেপ, যদি দাঁড়াত অন্তত আর একটি জুটি, প্রথম ইনিংসের রানটা হতো আর একটু বেশি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭৮.৫ ওভারে ২৬০ (তামিম ৭১, সৌম্য ৮, ইমরুল ০, সাব্বির ০, সাকিব ৮৪, মুশফিক ১৮, নাসির ২৩, মিরাজ ১৮, তাইজুল ৪, শফিউল ১৩, মুস্তাফিজ ০*; হেইজেলউড ০/৩৯, কামিন্স ৩/৬৩, লায়ন ৩/৭৯, অ্যাগার ৩/৪৬, ম্যাক্সওয়েল ১/১৫)

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৯ ওভারে ১৮/৩ (ওয়ার্নার ৮, রেনশ ৬*, খাওয়াজা ১, লায়ন ০, স্মিথ ৩*; শফিউল ০/৮, মিরাজ ১/৭, সাকিব ১/৩)