সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল-ঝড়

গত কিছুদিন ধরেই ছিল গুঞ্জন। চূড়ান্ত ঘোষণাটি এরপরও এল যেন বড় বিস্ময় হয়ে। সত্যিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে নেই মুমিনুল হক! মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে ছুটে গেল প্রশ্নের পর প্রশ্ন। মুমিনুলকে নিয়ে প্রশ্নগুলোর জবাব দিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 11:57 AM
Updated : 19 August 2017, 04:13 PM

মুমিনুলের বাদ পড়ার কথা শোনা যাচ্ছিলো, আপনাদের ভাবনাটি যদি বলতেন?

প্রধান নির্বাচক: মুমিনুলের সামগ্রিক যে ফর্ম, আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে… জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত, ছয় ইনিংসে ওর একটি মাত্র ফিফটি। এ পারফরম্যান্সের জন্যই ওকে রাখা হয়নি। তার পরও আমাদের পরিকল্পনায় আছে, প্রস্তুতির মধ্যেই আছে। যখন-যাকে দরকার, তখন ব্যবহার করা হবে।   

মুমিনুলের ক্ষেত্রে কি পরিসংখ্যানই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, নাকি অন্য কিছুও ছিল?

প্রধান নির্বাচক:
সামগ্রিক পারফরম্যান্সের জন্য মুমিনুল বাদ। ও যেই জায়গায় ব্যাট করছে, সেই জায়গায় সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে আমরা এগিয়ে রেখেছি। সৌম্যর আট ইনিংসের চারটিতে ফিফটি রয়েছে। ওর গড় ৪৫.৭৫। এ কারণে মুমিনুল বিবেচনার নিচে চলে গেছে। ঘরের মাঠে ইমরুলের পারফরম্যান্সও যথেষ্ট ভালো। মাঝে ইনজুরির কারণে অনেকগুলো ম্যাচ মিস করেছে। সার্বিক ফর্মের জন্য মুমিনুলকে নিচে রাখা।

ব্যাক টু ব্যাক যে খেলোয়াড়গুলোকে পুলের মধ্যে রাখি, মুমিনুল কিন্তু আমাদের প্রথম পছন্দ। প্রথম টেস্টের জন্য বিবেচনায় আনিনি বলে যে মুমিনুল হকের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে, এমন কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই।

ঘরের মাঠে সবশেষ টেস্ট কি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই টেস্টে মুমিনুল ভালো খেলেছিলেন…

প্রধান নির্বাচক: সেটা এক বছর আগে, এর পর আমরা বেশ কিছু টেস্ট খেলেছি।

কিন্তু দেশের মাটিতে খেলার সময় তো এখানকার কন্ডিশন বিবেচনায় নেওয়া উচিত!

প্রধান নির্বাচক: সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই টেস্টে তামিমের সঙ্গে ম্যাচ জেতানো জুটি ছিল মুমিনুলের…

প্রধান নির্বাচক: সবদিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত যে পারফরম্যান্স আমরা দেখেছি, সেই বিবেচনায় এই দলটা করেছি।

আর টিম ম্যানেজম্যান্টেরও একটা পরিকল্পনা আছে নানা খেলোয়াড় নিয়ে। টিম ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের প্রধান কোচও নির্বাচক প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত। আপনারা যদি নিয়ে যদি এভাবে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কিন্তু উত্তর দিতে পারব না। কারণ অনেক কিছু আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একজনকে নিয়ে এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারবেন না।

মুমিনুলকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত মূলত কার? আপনাদের নাকি টিম ম্যানেজমেন্টের?

প্রধান নির্বাচক: আমাদের প্রধান কোচ কিন্তু নির্বাচক প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলেই পারবে না। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মুমিনুলের পজিশনে ইমরুলের কথা বলছিলেন আপনারা। কিন্তু মুমিনুলের আসল পজিশন ছিল চার নম্বর, যেখানে তার গড় এখনও ৬২। তাকে হুট করে তিন নম্বরে তুলে আনা হলো, সেখানে আগের মত ভালো করতে পারেনি বলে বাদ দেওয়া হলো। এটা কি ন্যায্য কাজ হলো তার সঙ্গে?

প্রধান নির্বাচক: কিছু ক্রিকেটারের কিছু জায়গা কিন্তু আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে। এটা কিন্তু আমাদের নির্বাচকদের থেকে যায়নি। টিম ম্যানেজমেন্টের একটা পরিকল্পনা থাকে, প্রধান কোচের পরিকল্পনা থাকে। সেই পরিকল্পনামাফিক এগোতে হয়।

মুমিনুলকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল আপনাদের জন্য?

প্রধান নির্বাচক: চ্যালেঞ্জিং অবশ্যই। আমাদের কাছে যদি ১৮টি ভালো খেলোয়াড় থাকে, আলোচনা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং থাকে আমরা কাকে নিব কাকে নিব না। এটা দলের জন্য ভালো দিক যে একটি জায়গায় দুজন-তিনজন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এমন খেলোয়াড় আছে যাদেরকে আপনি নিতে বাধ্য। শেষ পর্যন্ত বেছে নিতে হবে ১৪জন। আমাদের কাছে ১৮ জন ভালো ক্রিকেটার আছে, প্রথম টেস্টের জন্য ১৪ জন বেছে নিয়েছি। একজনকে বাদ দিচ্ছি তার মানে এই নয় যে আমরা তাকে চোখের আড়াল করে দিচ্ছি। যাকে যখন টিমের স্বার্থে, দেশের স্বাথে দরকার হবে, অবশ্যই তাকে নেওয়া হবে।

সবশেষ দুই টেস্টে ফিফটি না পেলেও আগে ১১ টেস্টে টানা ফিফটি ছিল মুমিনুলের। তাকে বাদ দেওয়াটা কতটুকু ঠিক হলো? ১৯৯৯ বিশ্বকাপের আগে আপনাকে বাদ দেওয়ার পর প্রবল সমালোচনার মুখে আবার নেওয়া হয়েছিল। আজ কি মনে হয়, আপনার এই সিদ্ধান্ত সমলোচিত হবে?

প্রধান নির্বাচক:
এভাবে আমাকে বললে সেটা ঠিক হবে না। আমাদের প্রধান কোচ এখানে আছেন, উনাকেও ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করতে পারেন। মুমিনুলের প্রসঙ্গে আপনারা ওর পরিসংখ্যানের দিকে যাচ্ছেন না। গত এক বছরে ওর গড় ২৮-এ নেমে এসেছে। ও যেভাবে ওর ক্যারিয়ার শুরু করেছিল, সেই মাত্রায় কিন্তু নেই।

একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে এরকম আলোচনা আসলে ঠিক নয়। ওকে নিয়ে কিন্তু আমাদের সামনে অনেক চিন্তা ভাবনা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ওকে যেন নিতে পারি সেজন্য আলোচনা করছি। এমন নয় যে ওর ক্যারিয়ার আমরা এখানেই শেষ করে দিচ্ছি।

মুমিনুল ক্লাস ক্রিকেটার, এটি নিয়ে সন্দেহ নেই। পারফর্ম করেছে, পরিসংখ্যানও দারুণ ছিল। তো এরকম একজন ক্রিকেটারের খারাপ সময়ে সাবেক ক্রিকেটার ও প্রধান নির্বাচক হিসেবে আপনি কতটুকু সমর্থন দিতে পেরেছেন? অনেক বড় বড় ক্রিকেটারেরও খারাপ সময় আসে। মুমিনুলকে নিয়ে কোচের ‘রিজার্ভেশন’ আছে আমরা জানি। আপরারা কি শক্তভাবে ভুমিকা রাখতে পেরেছেন?

প্রধান নির্বাচক:
মুমিনুলকে কিন্তু মোরালি আমরা সব সময় সাপোর্ট করেছি। আমি, হাবিবুল বাশার সুমন সব সময় ওকে সাপোর্ট করি, আলোচনা করি। ওর ব্যাটিং দেখি। যথেষ্ট আলোচনা করি। শ্রীলঙ্কা থেকে ওকে ফিরিয়ে আনি ওকে আমরা ইমার্জিং কাপে খেলার সুযোগ তৈরি করে দেই। বিকল্প হিসেবে সবসময় ওকে চিন্তা ভাবনা করেছি।

এটা এমন না যে আমরা ওকে চোখের আড়াল করে দিয়েছি। টিম ম্যানেজমেন্টের পকিল্পনা আছে, প্রধান কোচও দল নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত। যেহেতেু ১৪ জনের স্কোয়াড, সেখানে একজন তৃতীয় ওপেনার বা একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। সামনে দেখবেন আমরা ওকে নিয়ে কী করি। হয়ত পরের সিরিজেই ওকে দেখতে পারেন।

মুমিনুল যে টেস্ট গুলোতে খারাপ করেছে, সব দেশের বাইরে। দেশের মাটিতে ওর গড় এখনও দুর্দান্ত। আপনার কি মনে হয় না, দুটি টেস্টে খারাপ করার কারণে ওর বাদ পড়া দুর্ভাগ্যজনক?

প্রধান নির্বাচক: এই টেস্টে বাদ পড়া দুর্ভাগ্যজনক বলতে পারেন না। কারণ ওর চেয়ে পারফরম্যান্সে দুজন ক্রিকেটার একটু ওপরের দিকে আছে। আমি যেটা বিশ্বাস করি একটা খেলোয়াড়কে সব সময় অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ওর পারফরম্যান্স বিবেচনা করে। একটা ব্যাটসম্যান যদি ধারাবাহিকভাবে চার-পাঁচ ম্যাচে রান না করে, তাহলে তার আত্মবিশ্বাসেও কিন্তু ঘাটতি থাকে। আমিও ব্যাটসম্যান ছিলাম, হাবিবুল বাশার সুমনও ব্যাটসম্যান ছিল। আমরা এসব জানি। 

আর দেশের মাটিতে চাপ থাকে অনেক বেশি। এ জিনিসগুলো চিন্তা করে এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি দলের বিপক্ষে খেলা। টিম ম্যানেজমেন্ট যেভাবে চায়, সেভাবে ১৪ জনের দল সাজানো হয়েছে। এজন্য মুমিনুল বাদ পড়েছে।